কৃযকদের ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচির জেরে আম্বালায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিল হরিয়ানা সরকার। শনিবার ১৪ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইন্টারনেটের সমস্ত পরিষেবা বন্ধ থাকবে। এই সময়ে কৃযকদের আন্দোলনের জেরে যাতে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য আম্বালা জেলায় মোবাইলের ইন্টারনেট, এসএমএস এবং ডঙ্গল পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
জানা গিয়েছে, এদিন সকাল ৬টা থেকে ইন্টারনেট পরিষেবাগুলি স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। কর্তৃপক্ষ অবশ্য, শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই স্থগিতাদেশ থেকে পৃথক এসএমএস, মোবাইল রিচার্জ, ব্যাঙ্কিং এসএমএস, ভয়েস কল এবং ইন্টারনেট পরিষেবাগুলিকে ছাড় দিয়েছে।
হরিয়ানা স্বরাষ্ট্র দফতরের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমি, হরিয়ানার স্বরাষ্ট্র সচিব, এতদ্বারা মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা (২ জি/৩জি/৪জি/৫জি/ সিডিএমএ/ জিপিআরএস), বাল্ক এসএমএস (ব্যাঙ্কিং এবং মোবাইল রিচার্জ বাদে) এবং সমস্ত ডঙ্গল পরিষেবা স্থগিত করার নির্দেশ দিচ্ছি। আম্বালার জেলার অধীন ডাংদেহরি, লোহগড়, মানকপুর, দাদিয়ানা, বারি ঘেল, ছোটি ঘেল, লার্সা, কালু মাজরা, দেবী নগর (হীরা নগর, নরেশ বিহার), সাদ্দোপুর, সুলতানপুর এবং কাকরু গ্রামে হরিয়ানার সমস্ত টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারীকে এই আদেশ কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এই অঞ্চলে শান্তি ও জনশৃঙ্খলার কোনো বিঘ্ন রোধ করার জন্য এই আদেশ জারি করা হয়েছে।”
এদিকে কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার শুরু হয়েছে হরিয়ানা-পাঞ্জাবের শম্ভু সীমান্তে। কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ও জলকামানের ব্যবহার করছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, শস্য ও ঋণ মকুবের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) আইনি গ্যারান্টি সহ তাঁদের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত দাবি পূরণের জন্য কৃষকরা শনিবার ‘দিল্লি চলো’ পদযাত্রা পুনরায় শুরু করেছে।
এই বিক্ষোভে ১০১ জন কৃষকের একটি দল রাজধানী দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা ও কিষাণ মজদুর মোর্চার ব্যানারে এই বিক্ষোভ চলছে। কৃষকদের লাগাতার এই আন্দোলন ইতিমধ্যে ১০ মাস অতিক্রম করেছে। মিছিলটি দিল্লিতে যাওয়ার আগে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের প্রতিহত করার পর কৃষকরা ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার মধ্যে শম্ভু এবং খানৌরি সীমান্ত পয়েন্টে শিবির করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
কৃষক নেতা সারওয়ান সিং পান্ধের দিল্লির দিকে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন এবং ঘোষণা করেছিলেন যে, কৃষকরা শিখ মন্দিরে সংহতি প্রকাশ করতে এবং আন্দোলনের সাফল্যের জন্য আশীর্বাদ চেয়ে প্রার্থনা করেছে।
এদিকে, কৃষক নেতা জগজিৎ সিং ডালেওয়াল, যিনি খানউরি সীমান্তে ১৮ দিনেরও বেশি সময় ধরে অনির্দিষ্টকালের অনশনে রয়েছেন, তাঁর স্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য অবনতি ঘটেছে। যে চিকিৎসকরা তাঁর চিকিৎসা করছেন তাঁরা জানিয়েছেন কৃষক নেতা জগজিৎ সিংয়ের ওজন কমে গিয়েছে এবং রক্তচাপ অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত শুক্রবার, সুপ্রিম কোর্ট পাঞ্জাব এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে ডালেওয়ালের জন্য চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিল। বিচারপতি আন্দোলনের চেয়ে তাঁর জীবন রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। আদালত কৃষকদের প্রতিবাদে গান্ধীবাদী আন্দোলন পদ্ধতি অবলম্বন করারও পরামর্শ দিয়েছে।
বিক্ষোভকারী কৃষকরা 8 ডিসেম্বর শম্ভুতে নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হওয়ার পরে তাঁদের মিছিল তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করে দিয়েছিল। যদিও কৃষকরা তাঁদের দাবিতে অবিচল ছিলেন। তাঁদের দাবির মধ্যে অন্যতম কৃষি খাতে উন্নতির জন্য আইনি সংস্কার।
হরিয়ানা পুলিশ এর আগে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস) এর ধারা ১৬৩-র অধীনে নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ জারি করেছিল। যাতে বিক্ষোভকারীদের অগ্রসর হতে বাধা দেওয়ার জন্য তাদের পদক্ষেপ ন্যায় সম্মত। তা সত্ত্বেও কৃষকরা তাদের অভিযোগ সংসদের সামনে তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর।