বুধবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বৃহত্তর বেঞ্চে পেগাসাস মামলায় তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার নির্দেশ জারি হয়। এই তিন সদস্যের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং দুজন সাইবার বিশেষজ্ঞ থাকবেন।
পেগাসাস মামলায় যে বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠিত হবে, সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা বুধবার রায় ঘোষণার সময় সেই ঘোষণাই করা হয়।
পেগাসাস কান্ডের তদন্তে বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগ করে আজ শীর্ষ কোর্টের তরফে জানানো হয়, জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু তুলে পেগাসাস কান্ডে বারবার কেন্দ্র ছাড় পেতে পারে না। পেগাসাস কান্ডে শীর্ষ আদালত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর ভি রবীন্দ্রণের নেতৃত্বাধীন তিন টেকনিক্যাল সদস্যের কমিটির হাতে পেগাসাস কান্ডের তদন্তভার দেওয়া হয়েছে।
প্রাক্তন আইএএস অফিসার অলোক যোশী, সন্দীপ ওবেরয় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর ভি রবীন্দ্রণকে সহায়তা করবেন। অভিযোগকারীদের দাবি মেনে ফোনে আড়িপাতা কান্ডে বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগ করে তদন্তের চালানোর নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি এন ভি নারাভানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর ভি রবীন্দ্রণের নেতৃত্বাধীন কমিটি সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ৮ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে। পেগাসাস তদন্ত মামলার আট সপ্তাহ অর্থাৎ ২ মাস পর ফের শুনানি হবে’।
শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়েছে বারবার জাতীয় সুরক্ষার দোহাই দিয়ে সরকার রেহাই পেয়ে যাবে–সেটা কখনো হতে পারে না। কেন্দ্রের উচিত নিজের অবস্থান স্পষ্ট করা। কেন্দ্রের তরফে আমাদের স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। ফলে আবেদনগুলোর নিরিখে তদন্তের নির্দেশ দিতে হচ্ছে।
শীর্ষ আদালত বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে তদন্তভার অর্পন করছে। পেগাসাস মামলায় বারোটি আবেদন জমা পড়েছিল। এডির্টস গিল্ড, সাংবাদিক এম রাম, শশী কুমার, প্রাণজয় গুহঠাকুরতা, যশবন্ত সিনহা শিক্ষাবিদ জগদীপ এস ছোকার সহ একাধিক ব্যক্তিত্ব নিরপেক্ষ তদন্তের আবেদন জানিয়েছিলেন।
কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিষয়টির রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। বিরোধী শিব্বি বা স্বাধীন কোনও প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি করার উদ্দেশ্য সরকারের নেই।
তবে ওই হলফনামায় কেন্দ্র ইজরায়েলের সংস্থা এনএসও ছেতে পেগাসাস সফচটওয়্যার আদৌও কিনেছে কিনা তা উল্লেখ করা হয়নি। আবেদনকারীরা এই বিষয়টাকেও গুরুত্ব সহকারে দেখার আর্জি করেছেন।
পেগাসাস সফটওয়্যারকে কাজে লাগিয়ে মোদি সরকার বিরোধী সাংসদ ও নেতানেত্রী সহ সাংবাদিক, ব্যবসায়ী সহ ৩০০ জন মোবাইলে আঁড়ি পাতা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছিল।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কেন্দ্রকে জবাব দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও জবাব দেয়নি কেন্দ্র। ব্যক্তি গোপনীয়তার অধিকার রক্ষার বিষয়টি অত্যস্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সরকার যা খুশি করতে পারে না।
এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের আরও সতর্ক থাকা উচিত।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘শুধুমাত্র সাংবাদিক নয়, সমস্ত নাগরিকের গোপনীয়তা রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কয়েকজন আবেদনকারী সরাসরি পেগাসাসের শিকার হয়েছেন।’
জর্জ অরওয়েলের উক্তি তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, “গোপন রাখতে চাইলে নিজেদের থেকেও গোপন রাখা উচিত’। এরপরই এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট।
জানানো হয়, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর ভি রবীন্দ্রনের নেতৃত্বে কাজ করবে এই কমিটি। তাঁর পাশাপাশি বাকি দুই সদস্য হলেন অলোক যোশী এবং সন্দীপ ওবেরয় তদন্ত শেষ করে ৮ সপ্তাহ পর সুপ্রিম কোর্টের কাছে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিশিষ্টদের ফোনে আড়ি পাতার ঘটনায় আদালতের নজরদারিতে তদন্তের আবেদন জানিয়েছিল এডিটর্স গিল্ড।
এছাড়াও পেগাসাস ইস্যুতে তদন্তের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে আরও বেশ কয়েকটি পিটিশন দাখিল হয়েছিল। সব মিলিয়ে ১২ টি পিটিশন জমা পড়ে। সংসদের বাদল অধিবেশনজুড়ে পেগাসাস বিতর্ক ছিল শিরোনামে।
বিরোধী নেতাদের দেখা গিয়েছে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে। তাই বহুবারই অধিবেশন মুলতুবি করতে হয় স্পিকার কিংবা চেয়ারম্যানকে। এমনকী, নির্দিষ্ট সময়ের কয়েকদিন আগেই শেষ করে দেওয়া হয়েছিল অধিবেশন।
বিরোধীদের দাবি ছিল, ফোনে আড়িপাতা কাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করে তদন্ত করতে হবে এবার কেন্দ্রের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করল শীর্ষ আদালত। ৮ সপ্তাহ পর বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট পেশ হবে সুপ্রিম কোর্টে। এই রিপোর্ট ঘিরে চরম আগ্রহ তৈরি হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।