• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

লাদাখে ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষ

লাদাখ সীমান্তে ভারত-চিন সেনার মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে ভারতের ২০ জন সেনা অফিসার এবং জওয়ানের। তাদের আরও দাবি চিনা বাহিনীরও প্রায় ৪৩ জন নিহত, নয় গুরুতর আহত।

প্রতিকি ছবি (Photo: iStock)

ছায়া যুদ্ধ, ডোকালামের মতো হাতাহাতি বা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা নয়। এযেন, যুদ্ধই। সংবাদ সংস্থা সূত্রে দাবি, আচমকাই শুরু হয়ে যাওয়া এই যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ভারতের ২০ জন সেনা অফিসার এবং জওয়ানের। তাদের আরও দাবি চিনা বাহিনীরও প্রায় ৪৩ জন নিহত, নয় গুরুতর আহত।

লাদাখের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ আধিকারিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্ঠা অজিত দোভাল। এই নিয়ে খবর লেখা পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনও প্রতিত্রিয়া জানানো হয়নি।

প্রথমে খবর আসে, লাদাখ সীমান্তে ভারত-চিন সেনার মধ্যে সংঘর্ষে ভারতের এক কর্নেল এবং দুই জওয়ান নিহত হয়েছেন। চিনের কোনও সেনার নিহত হওয়ার খবর না থাকলেও আহত হয়েছে বলে সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে।

সোমবার রাতে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে এই ঘটনা ঘটেছে বলে সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে। ঘটনার পরই ভারতের পক্ষে তার জবাব দেওয়ায় উভয় পক্ষের আরও বেশ কিছু সেনা আহত হয় বলে জানানো হয়েছে।

সেনা সুত্রে জানানো হয়েছে, গোলাগুলি না চললেও উভয় দেশের সেনারা সংঘর্ষের সময়ে যথেচ্ছ পাথর ছোড়ে ও বন্দুরে ব্যাটন দিয়ে আঘাত করে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর এবং ১৯৭৫ সালে ভারত-চিন সংঘর্ষের পর চিনা সেনার আক্রমণে ভারতের কোনও সেনা অফিসার ও জওয়ানের মৃত্যু হল।

সেনা সুত্রে জানানো হয়েছে, দুই পক্ষই যখন গালওয়ান উপত্যকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল সে সময় সোমবার রাতে হঠাৎই উভয় দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। চিনের পক্ষে আহত হওয়ার ধ্বর পাওয়া গিয়েছে সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস থেকে।

গ্লোবাল টাইমসের প্রধান সম্পাদক হু জিজিন এক প্রতিবেদনে ভারতকে শাসিয়েছেন এই বলে যে ভারতীয় সেনা যেন বেশি সাহস না দেখায়, চিনের তরফে সংযমটাকে দুর্বল বলে যেন না ভাবে তারা। চিন ভারতের সঙ্গে কোনও সংঘর্ষ চায় না, কিন্তু চিন ভয়ও পায় না। বেজিংয়ের পক্ষে ভারতীয় সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে চিনা সেনার ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার চিনের বিদেশমন্ত্রকের সুত্র উদ্ধৃত করে বলেছে, ভারত যেন একতরফাভাবে কোনও আক্রমণাত্মক সিদ্ধান্ত বা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্ট না করে। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান অভিযোগ করেছেন, ১৫ জুন উভয়পক্ষের সমঝোতা অগ্রাহ্য করে ভারতীয় সেনা নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে নাকি চিনা সেনার ওপর হামলা চালায়, এরফলে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন সেনা আহত হয়েছে। চিন এব্যাপারে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভারতকে জানানো হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তিন সেনা প্রধান, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতের সঙ্গে কথা বলে সমগ্র বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানিয়েছেন। এরই মাঝে করোনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিগত ছয় সপ্তাহ ধরে দুই দেশের সেনা সমাবেশ বেড়েই চলেছিল ভারত-চিন সীমান্তের ৩,৪৮৮ কিমি তথাকথিত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর।

লাদাখের গালওয়ান নদী ও প্যাংগং লেকের দাবি নিয়ে উভয় দেশের সেনাই মুখোমুখি হয়েছিল। উভয় পক্ষের সেনাদের মধ্যে টহলদারির সময়ে সংঘর্ষ হয় প্যাংগং লেকের ধারে। উভয় পক্ষেরই সেনা কমবেশি আহত হয়। পরে আলোচনার পর অবস্থা স্তিমিত হয়। কমান্ডার পর্যায়ে উভয়দেশের মধ্যে আলোচনা হয় গালওয়ান উপত্যকায়।

চিনের তরফে নাকি প্রথমে গালওয়ান উপত্যকা, পিপি-১৫ এবং লাদাখের পূর্বদিকে উষ্ণ প্রস্রবণ এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করে। ভারতীয় সেনাও তাদের গাড়ি ও সেনা প্রত্যাহার করতে থাকে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভারতের সড়ক ও যুদ্ধ বিমান ওঠানামার বন্দর তৈরিতে চিনের আপত্তি। ভারত সরকার ২০২২ সালের মধ্যে সংযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য চিন সীমান্ত বরাবর ৬৬ টি সড়ক তৈরি করছে। এমনই একটি সড়ক গালওয়ান উপত্যকায় যা দৌলত বেগ ওলডি সামরিক বিমান ক্ষেত্রের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসেই।