দিল্লি, ২২ জুলাই – আজ বাজেট পেশ করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তার আগে সোমবার সংসদে পেশ করা হল আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্ট। ভারতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে আছে, অর্থনীতি স্থিতিশীল। সংসদে আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্ট পেশ করে এমনটাই দাবি করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তাঁর দাবি, কোভিডের ধাক্কা সামলে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল দেশের অর্থনীতি। সরকারের সুচিন্তিত নীতির কারণে অর্থনীতি যে কোনও ধরনের আর্থিক, ভূ-রাজনৈতিক এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে এখন প্রস্তুত।বর্তমানে দেশের মূল্যবৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণে। আগামী অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধি নিয়েও আশাবাদী অর্থমন্ত্রী। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তাঁর দাবি, আগামী অর্থবর্ষে নিয়ন্ত্রণে থাকবে মুদ্রাস্ফীতির হারও।
সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩-২৪ পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এটি দেশের অর্থনীতির একটি রিপোর্ট কার্ড এবং আর্থিক বৃদ্ধির গতিপ্রকৃতি নির্দেশ করে। আর্থিক সমীক্ষায় আগামী অর্থবর্ষে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হারের অনুমান রাখা হয়েছে ৬.৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, শেষ অর্থবর্ষে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ আশা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া মুদ্রাস্ফীতির সূচক ৪.৫ শতাংশ স্থির করেছে। দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। নির্মলা সীতারামনের দাবি, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের জিডিপি বৃদ্ধির হার হতে চলেছে অন্তত ৮.২ শতাংশ। চলতি অর্থবর্ষের চারটি ত্রৈমাসিকের মধ্যে তিনটিতেই আর্থিক বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের বেশি থাকবে বলে দাবি অর্থমন্ত্রীর। চলতি অর্থবর্ষের এই বৃদ্ধির হার আগামী অর্থবর্ষেও বজায় থাকবে বলে দাবি করা হয়েছে আর্থিক সমীক্ষায়।
দেশের সর্বত্রই এখন অগ্নিমূল্য বাজারদর। সবজি, আনাজপাতির দাম আকাশছোঁয়া। তবে সবকিছু উপেক্ষা করেই আর্থিক সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, জিডিপি বৃদ্ধির হার যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনই নিয়ন্ত্রণে থাকবে মুদ্রাস্ফীতি। সার্বিকভাবে আগামী অর্থবর্ষে মুদ্রাস্ফীতির হার থাকতে পারে ৪.৫ শতাংশ। যা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্ধারিত মাত্রার মধ্যেই থাকছে। পরের বছর সেটা আরও কমে ৪.১ শতাংশ হতে পারে । তবে পাশাপাশি সরকার এও মেনে নিয়েছে চলতি অর্থবর্ষে খাদ্যসামগ্রীতে মূল্যবৃদ্ধির হার উর্দ্ধমুখী । এই মুহূর্তে খাদ্যসামগ্রীতে মুদ্রাস্ফীতির হার ৭.৫ শতাংশ, যা উদ্বেগের বিষয় । তবে খুচরো পণ্যে মুদ্রাস্ফীতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে বলে দাবি সরকারের। গত অর্থবর্ষে খুচরো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যেখানে ৬.৭ শতাংশ ছিল, সেখানে চলতি অর্থবর্ষে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ৫.৫ শতাংশ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব পড়েছিল। কৃষকেরা কৃষিকাজ করতে গিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তবে খুচরো মুদ্রাস্ফীতি ২০২৩ অর্থবর্ষ থেকে ২০২৪ অর্থবর্ষে ১.৩ শতাংশ কমেছে। করোনার ধাক্কা সামলে এটাই খুচরো মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন হার বলেও দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে।
রিপোর্টে বার্ষিক বেকারত্বের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই হার আগামী অর্থবর্ষে কমতে পারে। করোনা পর্বের পর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মসংস্থান বেড়েছে, যা ভারতের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। মেয়েদের কর্মমুখী হওয়ার হারও বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে এই হার ছিল ২৩.৩ শতাংশ। গত ছ’বছর সেই হার ক্রমাগত বেড়েছে। ২০২২-২৩ সালে তা এসে দাঁড়ায় ৩৭ শতাংশে। বিশেষত, গ্রামের মহিলাদের কাজ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে রিপোর্টে প্রকাশ ।
প্রসঙ্গত, এবারের বাজেট পেশ করার সঙ্গে সঙ্গে নতু রেকর্ড গড়বেন অর্থমন্ত্রী। মোরারজি দেশাইয়ের রেকর্ড ভেঙে টানা ৭ বার বাজেট পেশ করবেন নির্মলা সীতারামন।