• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

৪৬ টাকার বেশি খরচই করতে পারেন না বহু ভারতীয়, জানাল সরকারি সমীক্ষাই

দিল্লি, ২৬ ফেব্রুয়ারি– ভারত তথা এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানীর ছেলের বিয়েতে নাকি বিদেশ থেকে রেহানাও নাঁচতে আসবেন৷ ভারতের এমন কোন তারকা নেই যারা অতিথির তালিকায় নেই৷ অর্থাৎ কোটি-কোটি টাকা ব্যয় হবে এই বিয়েতে৷ সেই ভারতেই নাকি একজন সাধারণ মানুষের তার দৈনিক খরচ হিসেবে ব্যয় করতে পারেন মাত্র ৪৬ টাকা৷ ব্যয়ের মধ্যে খাবার ছাড়াও নিত্যকার

দিল্লি, ২৬ ফেব্রুয়ারি– ভারত তথা এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানীর ছেলের বিয়েতে নাকি বিদেশ থেকে রেহানাও নাঁচতে আসবেন৷ ভারতের এমন কোন তারকা নেই যারা অতিথির তালিকায় নেই৷ অর্থাৎ কোটি-কোটি টাকা ব্যয় হবে এই বিয়েতে৷ সেই ভারতেই নাকি একজন সাধারণ মানুষের তার দৈনিক খরচ হিসেবে ব্যয় করতে পারেন মাত্র ৪৬ টাকা৷ ব্যয়ের মধ্যে খাবার ছাড়াও নিত্যকার প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিসের দাম ধরা আছে৷ ভাবুন তাহলে!

বিশেষজ্ঞদের মতে, যা থেকে উঠে আসে অনাহার, অর্ধাহার, অপুষ্টির দিকটি৷ ভারত সরকারের সংস্থা ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস (এনএসএসও) তাদের মাসিক মাথাপিছু ভোক্তা ব্যয় সমীক্ষার ২০২২-’২৩-এর রিপোর্টে এই চিত্র তুলে ধরেছে৷ তারা জানিয়েছে, গ্রামীণ ভারতে একজন মানুষের মাসে গড় ব্যয় ক্ষমতা হল ৩৭৭৩ টাকা৷ তবে শহরাঞ্চলে কিন্তু এই খরচের হিবেস প্রায় দ্বিগুণ, ৬৪৫৯ টাকা৷ গ্রামের মানুষের মাসিক মোট গড় খরচের মধ্যে খাবার বাবদ ব্যয়ের অঙ্ক হল মাত্র ১৭৫০ টাকা৷ তারা গডে় ২০২৩ টাকা খরচ করেন৷ অন্যদিকে, শহরের মানুষ খাবারের জন্য মাথাপিছু মাসে ব্যয় করেন গডে় ২৫৩০ টাকা বাকি টাকা ব্যয় হয় বিদু্যৎ, পানীয় জলের বিল, যাতায়াত খরচ, বাডি়ভাড়া, টিফিন-সহ হাত খরচ, গৃহস্থালীর নানা সামগ্রী ইত্যাদি খাতে৷

সমীক্ষায় দেখা যায়, বহু মানুষ বহু নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়াই দিন চালাতে বাধ্য হচ্ছেন৷ এনএসএসও এই সমীক্ষা চালায় ২০২২-এর অগাস্ট থেকে পরের বছরের জুন পর্যন্ত৷ সারা দেশে দু লাখ ৬০ হাজার পরিবারের প্রায় ২৬ লাখ মানুষের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্টটি তৈরি করেছে তারা৷

সরকারি সংস্থার সর্বশেষ রিপোর্টেও দেখা যাচ্ছে ধনী-দরিদ্রের খরচের মধ্যে বিস্তর ফারাক৷ গ্রামে ও শহরে বহু মানুষ দিনে গডে় সাডে় দশ হাজার এবং ২১ হাজার টাকার কাছাকাছি ব্যয় করে থাকেন৷

তবে গোটা ভারতের নিরিখে এই ক্ষেত্রে সামান্য পিছিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা-সহ দেশের নয়টি রাজ্য৷ বাংলায় গ্রাম ও শহরে মাসিক গড় খরচের অঙ্ক হল যথাক্রমে ৩২৩৯ টাকা এবং ৫২৬৭ টাকা৷ এনএসএসও তাদের রিপোর্টে আরও জানিয়েছে, গ্রামীণ ভারতে গড় খরচের সারণির শেষের পাঁচ শতাংশের মাসে ব্যয় ক্ষমতা মাত্র ১৩৭৩ টাকা৷ শহরাঞ্চলে যার পরিমাণ হল ২০০১ টাকা৷ এনএসএসও-র ২০১১-১২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই সময় গ্রাম ও শহরে মাসিক মাথাপিছু ভোক্তা ব্যয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৪৩০ টাকা ও ২৬৩০ টাকা৷

সরকারি সংস্থার এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তাঁর সময়ে আর্থিক সাফল্যের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ এমনকী এনএসএসও-র প্রাক্তন আধিকারিকেরাও সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের দাবি করা সাফল্য নিয়ে৷ বিরোধীরা অনেক দিন ধরেই ধনী-দরিদ্রের মধ্যে আয়ের ফারাক নিয়ে সরব৷

এই রিপোর্ট হাতিয়ার করে খাদ্য সুরক্ষা আন্দোলনের নেত্রী দীপা সিনহার বক্তব্য, মাত্র ৪৬ টাকায় সারাদিনের খরচ চালাতে হলে বোঝা যায় মানুষকে কেমন অসহনীয় অবস্থার মধ্যে কাটাতে হচ্ছে৷ তাঁর বক্তব্য, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকার যে উন্নয়নের দাবি করে থাকে, এই রিপোট তাতে প্রশ্ন চিহ্ন জুডে় দিল৷ প্রসঙ্গত, বিগত দু-আড়াই দশক হল, দারিদ্র পরিমাপের জন্য আয়ের পরিবর্তে ব্যয়কে মাপকাঠি করা হয়েছে৷ খাবার-সহ অত্যাবশ্যক, জরুরি কিছু ক্ষেত্র চিহ্নিত করে দেখা সেগুলি ক্রয় বাবদ কী পরিমাণ অর্থ মানুষ খরচ করেন৷