আমি গোটা বিশ্ববাসীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চাই: মোদি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুধবার রাতে ওয়ারশতে ভারতীয় প্রবাসীদের উদ্দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন যে, বহু বছর ধরে ভারত সমস্ত জাতির থেকে সমান দূরত্ব বজায় রাখার নীতি অনুসরণ করে এসেছে। কিন্তু আজকের ভারত সবার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চায় এবং সবার অগ্রগতিতে বিশ্বাস করে।

তিনি বলেছিলেন যে, দীর্ঘ ৪৫ বছর পরে একজন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পোল্যান্ড সফর করছি। তিনি ভারত-পোল্যান্ড সম্পর্ক জোরদার করতে রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেজ দুদা এবং প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বলে জানিয়েছেন।

এবিষয়ে ভারতীয়দের উষ্ণতা ও উচ্ছ্বাসের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকের ভারত সবার পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সবার কল্যাণের কথা ভাবে। মোদি বলেন, “আমরা গর্বিত যে বিশ্ব আজ ভারতকে বিশ্ববন্ধু (বিশ্বের বন্ধু) হিসাবে সম্মান করে। আমি নিশ্চিত যে, আপনারা এখানে অবশ্যই বিষয়টি অনুভব করছেন। আমার তথ্য অবশ্যই সঠিক হবে।”


মোদি বলেন, “আমাদের জন্য, এটি ভূ-রাজনীতির বিষয় নয়, মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যের বিষয়।যাঁরা কোথাও জায়গা পাননি, ভারত তাঁর হৃদয়ে এবং ভূমিতে স্থান দিয়েছে। এটি আমাদের ঐতিহ্য। যা নিয়ে প্রত্যেক ভারতীয় গর্বিত। ভারতের এই চিরন্তন অনুভূতির সাক্ষী হয়ে আছে পোল্যান্ড। আজও পোল্যান্ডে সবাই আমাদের জাম সাহেবকে ডোবরে অর্থাৎ ভালো মহারাজা হিসেবে চেনে।”

মোদি পোল্যান্ডবাসীর সামনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের ভূমিকার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, যখন পোল্যান্ড সমস্যায় ঘেরা ছিল, যখন পোল্যান্ডের হাজার হাজার মহিলা এবং শিশু আশ্রয়ের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল, তখন জাম সাহেব, দিগ্বিজয় সিং, রঞ্জিত সিং, জাদেজা জি এগিয়ে এসেছিলেন। জাম সাহেব পোলিশ নারী ও শিশুদের জন্য একটি বিশেষ ক্যাম্প তৈরি করেছিলেন। জাম সাহেব শিবিরের পোলিশ ছেলেমেয়েদের বলেছিলেন যে, নওয়ানগরের লোকেরা যেমন আমাকে বাপু বলে, “আমিও তোমাদের বাপু।”

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, দুই দশক আগে, যখন গুজরাটে প্রচণ্ড ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন জামনগরও এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তখন পোল্যান্ড সাহায্যের জন্য পৌঁছনো প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটি। এখানে পোল্যান্ডেও মানুষ জাম সাহেব ও তার পরিবারকে অনেক সম্মান দিয়েছে। ওয়ারশ’র মহারাজা স্কোয়ারে এই ভালোবাসার ছবি স্পষ্টভাবে দেখা যায়।প্রসঙ্গত এর আগে মোদি বলেছিলেন যে, তিনি ডোবরে মহারাজা মেমোরিয়াল এবং কোলহাপুর মেমোরিয়াল দেখার সুযোগ পেয়েছেন।

তিনি বলেন, “এই অবিস্মরণীয় মুহূর্তে আমিও আপনাকে কিছু তথ্য দিতে চাই। ভারত জাম সাহেব মেমোরিয়াল ইয়ুথ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম শুরু করতে যাচ্ছে। এর আওতায় ভারত প্রতি বছর ২০ জন পোলিশ যুবককে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানাবে। এটি পোল্যান্ডের যুবকদের ভারত সম্পর্কে আরও জানার সুযোগ করে দেবে।”

মোদি বলেন, কোলহাপুর মেমোরিয়াল হল কোলহাপুরের মহান রাজপরিবারের প্রতি পোলিশ জনগণের ভক্তি ও শ্রদ্ধার প্রতীক। এজন্য মারাঠি সংস্কৃতিতে, মানবতাবাদকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “আজ, আমিও মন্টে ক্যাসিনো মেমোরিয়ালে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পেয়েছি। এই স্মৃতিসৌধ আমাদের হাজার হাজার ভারতীয় সেনার আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়। বিশ্বের প্রতিটি কোণায় ভারতীয়রা কীভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন, এটি তারও এটি প্রমাণ।”

তিনি বলেন, সহানুভূতি ভারতীয়দের একটি পরিচয়। বিশ্বের যে কোনও দেশ যখনই কোনও সংকটের মুখোমুখি হয়, ভারতই প্রথম দেশ, যাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। যখন কোভিড এসেছিল, ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। তখন ভারত মানবতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। করোনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে ওষুধ ও ভ্যাকসিন পাঠিয়েছি।’

মোদি বলেন, ভারত ভগবান বুদ্ধের উত্তরাধিকারীদের দেশ। যখন বুদ্ধের কথা আসে, তখন তিনি শান্তিতে বিশ্বাস করাটা অনিবার্য হয়ে ওঠে, যুদ্ধে কখনও নয়। তাই ভারত এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তির পক্ষেও বড় প্রবক্তা।

প্রধানমন্ত্রী এদিন তাঁর ভাষণে বলেন, “ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই পরিষ্কার – এটা যুদ্ধের সময় নয়। মানবতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকির সম্মুখীন হওয়া, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এটাই সঠিক সময়। তাই ভারত কূটনীতি ও সংলাপের ওপর জোর দিচ্ছে।”

এদিন  প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইউক্রেনে আটকে পড়া আমাদের শিশুদের আপনারা যেভাবে সাহায্য করেছেন, তা আমরা সবাই দেখেছি। আপনি তাঁদের অনেক সেবা করেছেন। আপনারা লঙ্গরের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁদের সাহায্যে আপনাদের বাড়ি ও রেস্টুরেন্টের দরজা খুলে দিয়েছেন। আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য পোলিশ সরকার ভিসার মতো বিধিনিষেধও সরিয়ে নিয়েছে।”

মোদি বলেন, “১৪০ কোটি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে, আমি আপনাদের সবাইকে, পোল্যান্ডের জনগণকে অভিনন্দন জানাই। আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই।”

তিনি আরও বলেন, ভারত ও পোল্যান্ডের সমাজের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। একটি বড় মিল হল গণতান্ত্রিক সাদৃশ্য। তিনি বলেন, ভারত শুধু গণতন্ত্রের জননীই নয়, সেই সঙ্গে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক ও প্রাণবন্ত গণতন্ত্রও বটে।

আজ, ভারতের পুরো ফোকাস মানসম্পন্ন উৎপাদন এবং মানসম্পন্ন জনশক্তির উপর। তিনি বলেন,“আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি বড় সুখবর নিয়ে এসেছি। ভারত ও পোল্যান্ড উভয়েই একটি সামাজিক নিরাপত্তা চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। আপনাদের মতো সমস্ত বন্ধুরা এতে উপকৃত হবেন।”

প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের বলেছিলেন, “আপনারাও ভারতের বৃদ্ধির সঙ্গে যতটা সম্ভব সম্পৃক্ত হবেন। আপনাদেরও ভারতের পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হতে হবে।”