জম্মু ও কাশ্মীরে মানবাধিকার সংক্রান্ত রাষ্ট্রসংঘের হাই কমিশনারের দফতরের (ইউএনওএইচসিএইচআর) সাম্প্রতিক রিপাের্টের বিরুদ্ধে সােমবার তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারত।
ভারতের কুটনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযােগ করে রাষ্ট্রসংঘের উক্ত দফতর যে নতুন রিপাের্ট পেশ করেছে তা সর্বৈব মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রণােদিত অভিযােগ।
গত বছর রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার অফিস এই সংক্রান্ত যে রিপাের্ট পেশ করেছিল বর্তমান রিপাের্টটি তারই সংযােজন। শুধু তাই নয়, বর্তমান রিপাের্টটি বিতর্কিত এই কারণে যে রিপাের্টে ভারতকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে ভারত-কাশ্মীরের জনসাধারনের আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকারকে যেন সম্মান জানায় কারণ এটি আন্তর্জাতিক আইনে সুরক্ষিত।
ভারতের বিদেশমন্ত্রক রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত দফতরের হাইকমিশনারের বিরুদ্ধে অভিযােগ তুলেছে যে তারা ‘সন্ত্রাসবাদের বৈধকরণ’ করছে কারণ রিপাের্টে এমন কথা লেখা আছে যা ভারতের সার্বভৌমত্বও অখন্ডতার বিরােধিতা করছে।
তাছাড়া রিপাের্টে মূল ইস্যু সীমান্তের ওপার থেকে ভারতের মাটিতে জঙ্গি সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার সংগঠন কাশ্মীর নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ের তীব্র সমালােচনা করেছে।
রাষ্ট্রসংঘের রিপাের্টে বলা হয়েছে কাশ্মীরে অতিরিক্ত সুরক্ষা বাহিনী মােতায়েন করে নিদারুণ ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ভারত তার প্রতিক্রিয়ায় কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানকে একই আসনে বসানাে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে বিশ্বের বৃহত্তম এবং প্রগতিশীল গণতন্ত্র এবং এমন এক দেশ যেখানে সন্ত্রাসবাদকে মদত জোগায় খােদ সরকার, এই দুই দেশের কৃত্রিম তুলনা করাটা দুরভিসন্ধিমূলক।
রাষ্ট্রসংঘের কমিশনারের রিপাের্টে বলা হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। রিপাের্টে বলা হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে সুরক্ষা বাহিনীর অত্যধিক বল প্রয়ােগ, উৎপীড়ন এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের যথেচ্ছভাবে বন্দি করে রাখা-এসবই চলছে।
ভারত তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে গােটা জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পাকিস্থান বেআইনিভাবে বলপূর্বক ভারতের অঙ্গরাজ্যের একাংশ কব্জা করে রেখেছে যাকে ‘আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর’ নাম দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান তাদের আগ্রাসনের নীতি প্রয়ােগ করে গিলগিট-বালচিস্তানও অধিকার করেছে। ভারতের বারবার বলা সত্ত্বেও পাকিস্তান এই অধিকৃত অঞ্চল খালি করছে না। দিল্লি পরিষ্কার ভাষায় রাষ্ট্রসংঘকে জানিয়ে দিয়েছে কোনও দুরভিসন্ধিমূলক আচরণে আমাদের জাতীয় সংকল্পকে দুর্বল করা যায় না।
গতবছর জুন মাসে এভাবেই তীব্র ভাষায় রাষ্ট্রসংঘের কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙঘন সংক্রান্ত রিপাের্টের বিরােধিতা করে বলেছিল রিপাের্টটি সর্বৈব মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রণােদিত।
রাষ্ট্রসংঘ কাশ্মীর সংক্রান্ত এই ধরনের প্রথম রিপাের্ট ভারত এবং পাকিস্তানকে পরামর্শ দিয়েছিল গত ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে অদ্যাবধি যতজন নাগরিকের সুরক্ষা বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে এবং যারা আহত হয়েছে, সেই সব ঘটনার যেন তদন্ত করা হয়।