ভারতের ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচ কাওয়াজে মেগা নারী শক্তির প্রদর্শন করল সেনা বাহিনী। রবিবার সকালে দিল্লির কর্তব্য পথে ভারত তার প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড এবং ট্যাবলো দেশের অগ্রগতি, সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি এবং সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে। এই প্রদর্শনে ‘নারী শক্তি’র ক্ষমতায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিন কর্তব্য পথের প্যারেডে অল-উইমেন মার্চিং কন্টিনজেন্ট ছিল প্রজাতন্ত্র দিবসের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। যার নেতৃত্বে ছিলেন সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সি. আর. পি. এফ)-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ড্যান্ট ঐশ্বর্য জয় এম। নকশাল বিরোধী, বিদ্রোহ বিরোধী এবং আইন-শৃঙ্খলা অভিযানের জন্য সারা দেশে নিযুক্ত মহিলা সৈন্যদের নিয়ে গঠিত এই দল। ১৪৮ সদস্যের এই দল নারীর ক্ষমতায়নের অনন্য দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে। মাতৃত্বকালীন যত্ন, জীবনচক্রের ধারাবাহিকতা এবং মহিলাদের নেতৃত্বের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের ট্যাবলোতে একটি মেয়ের শৈশব থেকে আত্মনির্ভরশীল মহিলা হওয়ার যাত্রা চিত্রিত করা হয়েছে।
এদিন ব্যান্ড মাস্টার রুইয়াংগুনুও কেন্সের নেতৃত্বে দিল্লি পুলিশের অল-উইমেন ব্যান্ডও প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের সময় বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে। দ্বিতীয়বারের মতো অংশগ্রহণকারী ব্যান্ডটিতে দিল্লি পুলিশ ব্রাস এবং পাইপ ব্যান্ডের চারজন মহিলা সাব-ইন্সপেক্টর এবং ৬৪ জন মহিলা কনস্টেবল ছিলেন। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের ট্যাবলো ‘লখপতি দিদি যোজনা’-র আওতায় ভারতীয় মহিলাদের ক্ষমতায়নকেও তুলে ধরা হয়েছে।
প্রসঙ্গত রবিবার প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, যিনি এই বছরের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি প্রাবয়ো সুবিয়ান্তোর উপস্থিতিতে দিল্লির কর্তব্য পথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে উভয় রাষ্ট্রপতিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রবীণতম রেজিমেন্ট, রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষী, ‘রাষ্ট্রপতি কে অঙ্গারক্ষক’ দ্বারা ‘ঐতিহ্যবাহী বগির’ মাধ্যমে কর্তব্য পথে নিয়ে যাওয়া হয়। যা প্রায় ৪০ বছরের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় ও তাঁর স্ত্রী সুদেশ ধনখড় সহ রাষ্ট্রপতি মুর্মু ও রাষ্ট্রপতি সুবিয়ান্তোকে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত বাজানো এবং দেশীয় ১০৫ মিমি লাইট ফিল্ড বন্দুক ব্যবহার করে ২১টি বন্দুকের স্যালুট দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এই বছরের থিম ছিল সংবিধান প্রণয়নের ৭৫ বছর উদযাপন এবং ‘জনভাগীদারী’ অর্থাৎ জনসাধারণের অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ। এই অনুষ্ঠানে ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, ঐক্য এবং সামরিক দক্ষতার প্রদর্শন করা হয়। যেখানে ৩০০ জনেরও বেশি সাংস্কৃতিক শিল্পী শেহনাই, নাদস্বরম, মাশাক বিন এবং ঢোলের মতো ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রগুলিতে ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা’ পরিবেশন করেন।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন অলোক আহলাওয়াতের নেতৃত্বে ১২৯ হেলিকপ্টার ইউনিটের এম আই ১৭ ১ভি হেলিকপ্টারগুলি জাতীয় পতাকার প্রতীক হিসাবে আকাশে একটি ধওয়াজ ফর্মেশনে ফুল-পাপড়ির ঝর্না তৈরি করে। যা ছিল অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভাবনীশ কুমারের নেতৃত্বে এই কুচকাওয়াজে বীরত্ব পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে ছিলেন তিন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্তা সুবেদার মেজর (সাম্মানিক ক্যাপ্টেন) যোগেন্দ্র সিং যাদব এবং সুবেদার মেজর সঞ্জয় কুমার এবং অশোক চক্র প্রাপক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জস রাম সিং।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় সশস্ত্র বাহিনীর মার্চিং কন্টিনজেন্ট এবং ইন্দোনেশিয়ার মিলিটারি একাডেমির মিলিটারি ব্যান্ডের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়া হয়েছে।