মোদীর মার্কিন সফরে লাভের মুখ দেখার চেয়ে ভারতের জাতীয় ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। একদিকে দেশের মানুষকে ভোটদানে উৎসাহিত করতে প্রতি বছর ১৮২ কোটি টাকা অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাম্প; তার ওপর দুই দেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে শুল্ক নীতির বৈষম্য ভারতকে প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। ট্রাম্পের বাড়তি আমদানি শুল্ক ধার্য হলে আমেরিকার বাজারে লোকসানের মুখে পড়বে ভারতীয় পণ্য। ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতীয় শিল্প।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাণিজ্য সমীক্ষক সংস্থার রিপোর্ট বলা হয়েছে, ট্রাম্প ও মোদী ভারত ও আমেরিকার মধ্যে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ চাপালে ভারতের সম্ভাব্য বার্ষিক লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৭০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে ক্ষতি হতে পারে গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থাগুলির ও কৃষি ক্ষেত্রগুলি।
সম্প্রতি ফক্স নিউজকে একটি সাক্ষাৎকার দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফক্স নিউজের সাংবাদিক নতুন শুল্ক নীতি নিয়ে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, হোয়াইট হাউসের বৈঠকে কি মোদী এ নিয়ে কোনও আপত্তি জানাননি? টিভি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জবাব দেন, ‘আমার সঙ্গে তর্ক করে কেউ পারবেন না। আমি যদি বলি ২৫ শতাংশ শুল্ক, তিনি বলবেন “উফ ভয়াবহ”। কিন্তু আমি তা বলব না। আমি শুধু বলি, আপনি যা শুল্ক ধার্য করুন না কেন, আমি আমারটা ধার্য করবই।’
সূত্রের খবর, আমেরিকা বর্তমানে ১৫-৩৫ শতাংশ শুল্ক চাপায় ভারতের পোশাক, জুতো-সহ শ্রম নিবিড় বিভিন্ন পণ্যের উপরে। অন্যদিকে, আমেরিকা থেকে আসা একটা বড় অংশের পণ্যের উপরে ভারত শুল্ক ধার্য করে মাত্র ৫ শতাংশ। মোদীর সফরের আগেই অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতজাত পণ্যের উপর নতুন করে শুল্ক বসানোর বার্তা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই নীতি কার্যকর হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কে টানাপড়েন আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত জো বাইডেনের আমলে ভারতীয় ভোটারদের বুথমুখী করতে প্রতি বছর ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলার বরাদ্দ করা হয়। এবার সেই বরাদ্দ বন্ধ হয়েছে। তার ওপর ভারতীয় পণ্যের ওপর বাণিজ্যিক শুল্ক বৃদ্ধি ভারতীয় শিল্প সংস্থাগুলিকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এইসব ভারতীয় পণ্যে বাড়তি শুল্ক ধার্য হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে একটি প্রভাব পড়বে। এইসব দ্রব্যের মূল্যের বৃদ্ধির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
ট্রাম্প ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদীর প্রসঙ্গে বলেন, ‘তিনি এখানে এসেছিলেন। আমি বলেছিলাম, আপনি শুল্ক ধার্য করুন বা না-করুন, আমি করবই।’ শুধু ভারত নয়, প্রতিটি দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যেই শুল্ক বসাবেন বলেও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক মোদী ও ট্রাম্পের বৈঠকে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে চুক্তি হয়, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বহর ৫০,০০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া। তবু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের তো বটেই, বাণিজ্য সহযোগীদের উপরেও পাল্টা আমদানি শুল্ক বসাতে চলেছে তাঁর প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, ভারত থেকে আমেরিকায় রপ্তানি হওয়া বিভিন্ন পণ্যের উপরে কতটা শুল্ক বসবে, তা এপ্রিলের দিকে স্পষ্ট হবে। ভারত পাল্টা কোনও পদক্ষেপ করে কি না, তা বোঝা যাবে তারপরেই। যদিও ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্ক’ বসানোর ঘোষণায় ইতিমধ্যেই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।