মঙ্গলবার ভোরে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালো শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী। আকস্মিক এই হানায় গুরুতর জখম হয়েছেন পাঁচ জন ভারতীয় মৎস্যজীবী। তাঁদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। রাজধানী দিল্লিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রক ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কার বর্তমান রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। পাশাপাশি, শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনও শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টির কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বলে সূত্রের খবর। আচমকা এই ঘটনায় দিল্লি-কলম্বো কূটনৈতিক সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছে।
জানা গিয়েছে, ভারতের জলসীমা লঙ্ঘনের অপরাধে শ্রীলঙ্কার ডেল্ফট দ্বীপের (স্থানীয় নাম নেদুনতিভু) অদূরে পক প্রণালীতে এই হামলা চালায় শ্রীলঙ্কার সশস্ত্র বাহিনী। এরপর জখম পাঁচজন সহ মোট ১৩ জন মৎস্যজীবীকে আটক করে শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা বাহিনী। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত মৎস্যজীবীরা এখন শ্রীলঙ্কার জাফনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে বিদেশমন্ত্রকের দপ্তরে ডেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এছাড়া ‘কলম্বোতে আমাদের হাই কমিশন শ্রীলঙ্কা সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের কাছেও বিষয়টি উত্থাপন করেছে।’ ইতিমধ্যে জাফনার ভারতীয় কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা আহত জেলেদের সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করে তাঁদের দেখভাল শুরু করেছেন। আহতদের সুস্থতা কামনা করে জেলে ও তাঁদের পরিবারকে সম্ভাব্য সকলপ্রকার সহায়তা প্রদান করছেন।
প্রসঙ্গত, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের জলসীমায় মৎস্যজীবীদের আক্রমণ এই প্রথম নয়। গত বছরও কচ্চতিভু দ্বীপের উত্তরে একই ঘটনা ঘটে। সেখানে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী একটি জাহাজে টহলদারির সময় ভারতীয় মৎস্যজীবীদের একটি নৌকাকে নিশানা করে গুলি চালানোর ফলে দুই জন ভারতীয় মৎস্যজীবী নিহত হন। বর্তমানে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। গত সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছে ন্যাশনাল পিপল্স পাওয়ার (এনপিপি) নামের বাম জোট। যাঁরা ‘ভারতবিরোধী’ এবং ‘চিনপন্থী’ হিসাবে পরিচিত। যার শীর্ষ নেতা অনুরাকুমার দিশানায়েক। অনুরাকুমার ক্ষমতায় আসার পর শ্রীলঙ্কার বর্তমান সরকার প্রবলভাবে ভারত বিরোধিতা চালিয়ে যাচ্ছে।
এব্যাপারে ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে,’জেলেদের জীবন-জীবিকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তাঁদের পেশাগত বিষয়গুলিকে মানবিকভাবে বিচার বিবেচনার ওপর জোর দেওয়ার প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে কোনওভাবে বলপ্রয়োগ কাম্য নয় বলে দাবি করেছেন। এব্যাপারে দুই দেশকে সতর্কভাবে বোঝাপড়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।’