প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতি যেন তাকে ফের একাত্তরে পৌঁছে দিয়েছে। একাত্তরের সমস্যার পর যেভাবে বাংলাদেশ থেকে মানুষের ঢোল ভারতে প্রবেশ করে তাতে শরণার্থী সামলাতে ভারতকে বেশ বেগ পেতে হয়। যদিও সেই সময় ভারত নিজেকে যোগ্য প্রতিবেশী প্রমান করে সেই শরণার্থীদের প্রবেশে বাধা দেয়নি।
কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই অন্য। বাংলাদেশ ফের সেই একই স্থানে ফিরে এসেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব সামলালেও বাংলাদেশ ছেড়ে প্রচুর সংখ্যক মানুষ ভারতে ঢুকতে মরিয়া। এ দেশের সীমান্তে বিরাট শরণার্থী চাপ আসতে পারে। আশু এই সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিতে পারছেন না কেউই। এই সমস্যায় দিল্লি কিন্তু তার স্থান পরিবর্তন করতে নারাজ। শোনা যাচ্ছে, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির সরকার এবার আর একাত্তরের পুনরাবৃত্তি চায় না। সীমান্তে শরণার্থীদের চাপ যতই আসুক, নিজেদের দরজা হাট করে খুলে দিতে নারাজ দিল্লি।
হাসিনা জমানার অবসানে ঘটিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, নোবেলজয়ী ডঃ মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। বৃহস্পতিবার শপথ নিয়েছেন ইউনিস। দিল্লি এখনই নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কে কোনও টানাপোড়েন চাইছে না। বস্তুত সাউথ ব্লক এই মুহূর্তে এমন কোনও পদক্ষেপ করতে রাজি নয়, যাতে নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গোড়াতেই তিক্ত হয়ে ওঠে।
এ রাজ্যে হিন্দু ভোট মেরুকরণের উদ্দেশে বাংলাদেশে ডামাডোল তৈরি হতেই বিজেপি নেতারা আসরে নামলেও তা মানতে নারাজ কেন্দ্র বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষরা, ওপার বাংলার হিন্দুদের আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা স্পষ্ট বলেছেন, “ওপার বাংলা থেকে প্রায় ১ কোটি শরণার্থী আসবেন, তাঁদের জন্য বাংলার সরকারের প্রস্তুত হওয়া উচিত। আমাদেরও প্রস্তুত হওয়া উচিত।” বস্তুত দিল্লি গিয়ে দলের নেতৃত্বের কাছেও হিন্দু শরণার্থীদের কথা ভাবার আর্জি জানিয়ে এসেছে বঙ্গ নেতৃত্ব। কিন্তু দিল্লি এখনই এ নিয়ে বড় কোনও পদক্ষেপে নারাজ।
বাংলাদেশ থেকে মানুষদের ঢুকতে দেওয়া শুরু করে দিলে তা যে ভারতের সংহতি, জনবিন্যাসে বড়সড় সমস্যার সৃষ্টি করবে বলেই ধারণা দিল্লির। আসলে নয়াদিল্লি মনে করছে, বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দিলে হিন্দুদের পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণে উৎপীড়নের শিকার হওয়া আওয়ামী লীগের মুসলিম নেতা-কর্মীদেরও ভারতে চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা হলে বদলে যাবে সীমান্ত এলাকার জনবিন্যাস। যা চায় না ভারত। আবার সীমান্ত শরণার্থীদের ভিড়ে ইসলামিক জঙ্গিদের অনুপ্রবেশও একটা বড় আশঙ্কা। সব মিলিয়ে নয়াদিল্লি আপাতত সতর্ক। সাউথ ব্লক চেষ্টা করছে যাতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সেদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যায়।