‘ভারত-চিন সম্পর্ক স্থিতিশীল, কিন্তু স্বাভাবিক নয় এবং এই দুই দেশের সম্পর্ক খুবই সংবেদনশীল জায়গায় রয়েছে।’ এভাবেই ভারত -চিন সম্পকের বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করলেন দেশের সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী। চীনের সাথে উত্তেজনা মোকাবিলার জটিল প্রকৃতি তুলে ধরে, ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেছেন যে, ‘ভারতকে অবশ্যই চীনের সাথে প্রতিযোগিতা, সহযোগিতা, সহাবস্থান, মোকাবিলা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যেতে হবে।’ মঙ্গলবার জেনারেল দ্বিবেদী মেনে নেন যে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারত ও চিনের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমি কল্যাণ পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত উপদেষ্টাদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত চাণক্য ডিফেন্স ডায়লগ, ২০২৪ -এর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে একথা বলেন সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী।
পূর্ব লাদাখ সীমান্তে সবকিছু স্বাভাবিক নেই একথা মেনে নিলেন সেনাপ্রধান নিজেই। সেনাপ্রধান জানান, ‘কূটনৈতিক স্তর থেকে ইতিবাচক বার্তা আসছে। কিন্তু, তার বাস্তবায়ন সেনা আধিকারিকদের পক্ষেই করা সম্ভব অর্থাৎ যাঁরা বাস্তবে সেই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। এবং এটি দুই তরফের সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা চাই যে পরিস্থিতি ২০২০ সালের এপ্রিলের আগের অবস্থায় ফিরে আসুক। তা ওই এলাকার সাধারণ পরিস্থিতি হোক, কিংবা বাফার জোনের পরিস্থিতি হোক, অথবা টহলদারির বিষয় হোক। এখনও পর্যন্ত আগের পরিস্থিতি ফিরে আসেনি।’ তিনি সেনাবাহিনীর প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সেই পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি সংবেদনশীল থাকবে, এবং আমরা যে কোনও ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রয়েছি।’
উল্লেখ্য, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ভারত ও চিনের মধ্যে বহু দফায় আলোচনা হয়েছে।আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, দ্বিবেদী বলেছেন যে উভয় পক্ষই এপ্রিল থেকে প্রায় ১৭ টি পুলিশ এবং কমান্ডার-স্তরের আলোচনায় নিযুক্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পূর্ব লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চিনের সেনাবাহিনীর মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে, তা প্রায় পাঁচবছর হতে চলল। তথ্যানুযায়ী, দ্রুত এই সম্পর্কের জটিলতা মিটে যাবে, এমন সম্ভবনা নেই। তবে ভারত আশাবাদী যে সমস্যা সমাধানে আলাপ-আলোচনা চলছে এবং এর মধ্যে দিয়েই সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসবে। সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। ইতিমধ্যেই ছোটখাটো কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে। ডেপসাং এবং ডেমচক-সহ নর্দান ফ্রন্টের সমস্ত বিষয় নিয়েই আলোচনা চলছে।’ প্রসঙ্গত, দফায় দফায় আলোচনার পরও ডেপসাং এবং ডেমচক এলাকা নিয়ে মতভেদ এখনও পর্যন্ত কাটেনি। ফলে ভারত ও চিন, উভয় পক্ষেরই ১০ হাজার করে সেনা তাদের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে লাদাখে মোতায়েন রয়েছে।
উল্লেখ্য, গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকেই লাদাখ এলাকায় ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে। গত সপ্তাহে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও বলেছিলেন, চিনের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক খুবই অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে।
দ্বিবেদী বলেন, “আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এখন, আমরা যখন একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি, উভয় পক্ষকেই জয়ের সমাধানসূত্র খুঁজে বের করতে হবে।”