আমাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিন। নয়তো আমরা স্বাধীনতা ঘোষনা করব। ভারত থেকে বেরিয়ে গিয়ে স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র গঠন করব আমরা।– গত সপ্তাহে দলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে উদ্দেশে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তামিলনাড়ুর শাসক দল ডিএমকে-র প্রথমসারির নেতা এ রাজা।
জবাবে বিজেপির বিধানসভার নেতা নাইনার নগেন্দ্রন পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, স্বাধীন রাষ্ট্র! আমরা চাইলে যে কোনও দিন তামিলনাড়ুকে দু’টুকরো করে দিতে পারি। সে ক্ষমতা আছে আমাদের আছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটা রাজ্যকে ভেঙে দু টুকরো করে দেওয়া কোনও ব্যাপার না।
শাসক দল ডিএমকে এবং বিরোধী দল বিজেপির এই হুঁশিয়ারি, পাল্টা হুঁশিয়ারি নিয়ে জমজমাট তামিলনাড়ুর রাজনীতি। দুই দলই দুই নেতার মন্তব্যকে এখনও পর্যন্ত গ্রহণ বা বর্জন কোনওটাই করেনি।
পৃথক তামিল রাষ্ট্রের দাবি নতুন নয়। বস্তুত, ব্রাহ্মণ্যবাদীদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর পরিচয় স্বত্তার আন্দোলনের একটা পর্যায়ে আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ থান্থাই পেরিয়ার পৃথক রাষ্ট্রের দাবি উত্থাপন করেছিলেন। এমকে স্টালিন গত বছর তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সমাজ সংস্কারক পেরিয়ারের জন্মদিন ১৭ সেপ্টেম্বর সামাজিক ন্যায় দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেন।
ডিএমকের প্রতিষ্ঠাতা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিএন আন্নদুরাইও পৃথক তামিল রাষ্ট্রের দাবি তুলে রাজ্য-রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পান।
লক্ষণীয় হল, এ রাজা দলের যে সভায় পৃথক তামিল রাষ্ট্রের প্রসঙ্গ তোলেন, সেই মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী স্টালিনও উপস্থিত ছিলেন। ইউপিএ সরকারের টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা ছিলেন টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত। বহু বছর জেল খাটার পর আদালত মুক্তি দিলে তামিলনাড়ুর ঘরোয়া রাজনীতিতেই ব্যস্ত এই নেতা। সেদিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে রাজা বলেন, ‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রীও পেরিয়ার ও আন্নদুরাইয়ের অনুগামী। তাঁকে বাধ্য করবেন না, প্রয়াত নেতাদের ঘোষণা কার্যকর করতে।’ অর্থাৎ, প্রয়োজনে স্টালিন পৃথক রাজ্যের দাবি জানাবেন, আভাস দেন রাজা।
রাজাকে জবাব দিতে বিজেপির পরিষদীয় নেতার পাল্টা হুঁশিয়ারি, তামিলনাড়ুতে ২৩৪টি বিধানসভার আসন। আমরা উত্তর ও দক্ষিণ তামিলনাড়ু নামে দুটি রাজ্য তৈরি করে নিতে পারি। প্রতিটির ১১৭টি করে বিধানসভা আসন থাকবে। নতুন রাজ্য দুটি এমনভাবে তৈরি করে নেব যে বিজেপি বা তাদের সহযোগীরাই সরকার চালাবে। ডিএমকে-কে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
রাজ্য ভাগ রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির ঘোষিত, চেনা রাজনীতি। বিজেপি সরকারের হাত ধরে ইতিপূর্বে উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ভাগ হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, সুশাসনের কথা বললেও বিজেপির রাজ্যভাগের পিছনে আসল অংক দলের প্রভাব বিস্তার এবং রাজ্য দখল। বাংলাতেও দলের একাংশ রাজ্যভাগের দাবিতে সরব।
কিন্তু তামিলনাড়ু ভাগের কথা এতটা জোর দিয়ে আগে বলেনি গেরুয়া শিবির। বিস্মৃতির অতলে চলে যাওয়া পৃথক তামিল রাষ্ট্রের দাবিও ডিএমকে সামনে এনেছে রাজ্যের চলতি কেন্দ্র বিরোধী রাজনীতির কৌশল হিসাবে।
স্বাধীন তামিল ভূমি ও রাজ্য ভাগের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক তিক্ততার পিছনে রয়েছে রাজ্য-রাজ্যপাল চলমান বিবাদ। অবিজেপি শাসিত বেশিরভাগ রাজ্যেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালদের বিবাদ লেগে আছে। বাংলায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে টুইট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। কথায় কথায় রাজ্য প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলে টুইট করেন তিনি। বাদ যায়নি মুখ্যসচিবের মতো আমলাকে শাসানি।
কিন্তু তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল বিএন রবির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন ও রাজ্য প্রশাসনের বিরোধ হালে সব রাজ্যের সব নজির ছাপিয়ে গিয়েছে। রাজ্যপালকে বয়কট করেছে রাজ্য সরকার।
অন্যদিকে, রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া প্রায় এক ডজন বিল রাজভবনে আটকে রেখেছেন রবি। অনেক অনুরোধ ও চাপ সৃষ্টির পর রাজ্যের পৃথক মেডিক্যাল এন্ট্রান্স সংক্রান্ত বিলে সম্মতি দিয়েছেন রবি।
রাজ্য সরকারের অভিযোগ, রাজ্যপালকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য প্রশাসনকে অকেজো করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। রাজ্যের অধিকারে পদে পদে হস্তক্ষেপ করছেন রাজ্যপাল।সেই অভিযোগকে সামনে রেখেই স্বাধীকার, অধিকার, স্বাধীনতার কথা তুলেছে শাসক দল ডিএমকে।
পাল্টা আক্রমণে রাজ্য ভাগ করে রাজ্য দখলের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিজেপি। তামিলনাড়ুতে কংগ্রেস শাসক জোটের শরিক হওয়ার বিজেপি ওই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল।