অনির্দিষ্টকালের অনশনে অতিশী 

দিল্লি, ২১ জুন – একদিকে তীব্র তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে পানীয় জলের হাহাকার – উভয় সঙ্কটে জেরবার রাজধানী দিল্লি। হরিয়ানা থেকে পর্যাপ্ত জলের দাবিতে এবার অনশনে বসলেন দিল্লির মন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির নেত্রী অতিশী মারলেনা। জলের আকাল মেটাতে দক্ষিণ দিল্লির ভোগালে শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করলেন আপ মন্ত্রী।  অতিশীর এই সিদ্ধান্তকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন জেলবন্দি অরবিন্দ কেজরিওয়াল। জেল থেকে দেওয়া এক বার্তায় কেজরিওয়াল বলেন, ‘‘তৃষ্ণার্তকে জল দেওয়া আমাদের সংস্কৃতির পরিচয় । এই নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।’’   অতিশীর  সঙ্গে রয়েছেন কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনিতা কেজরিওয়াল, দলের নেতা সঞ্জয় সিং ছাড়াও আপের একাধিক নেতা-নেত্রী।

ভয়াবহ আকার নিয়েছে দিল্লির জলসঙ্কট। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জলের জন্য হাহাকার। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের অভাবে ভুগছে মানুষ। দীর্ঘক্ষণ জলের লাইনে দাঁড়িয়েও জল মিলছে না।  কোন কোন এলাকায় জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী রাজ্যের থেকে বাড়তি জল চেয়েছিল দিল্লি সরকার। এই নিয়ে মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টেও। এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে জলের সমস্যার কোন সমাধান না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও দেন দিল্লির মন্ত্রী অতিশী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সমস্যার সমাধানের আবেদনের পাশাপাশি হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। জল সমস্যার সমাধান না হলে ২১ জুন থেকে যে তিনি অনির্দিষ্ট কালীন অনশনে বসবেন সে কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেন।  
 
সেই মতো শুক্রবার দক্ষিণ দিল্লির ভোগালে ‘জল সত্যাগ্রহ’ কর্মসূচি শুরু করেন অতিশী। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন কেজরিওয়াল-পত্নী সুনীতা, আপ সাংসদ সঞ্জয় সিং, দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ-সহ আপ নেতৃত্ব। এই কর্মসূচি নেওয়ার জন্য অতিশীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কেজরি। জেল থেকে পাঠানো বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘তীব্র তাপপ্রবাহের সময় মানুষ কী ভাবে জলসঙ্কটে ভুগেছেন, তা টিভিতে দেখে আমি খুবই মর্মাহত। তৃষ্ণার্তকে জল দেওয়া আমাদের সংস্কৃতি। দিল্লি প্রতিবেশী রাজ্যগুলির থেকে জল পায়। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা প্রতিবেশী রাজ্যগুলির থেকে সাহায্য আশা করেছিলাম। কিন্তু হরিয়ানা সরকার দিল্লিতে পাঠানো জলের ভাগ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। যদিও দুই রাজ্যে ভিন্ন দলের সরকার রয়েছে, তবুও এই সঙ্কটের সময় জল নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়।’’

হরিয়ানার জল সরবরাহ নিয়ে অতিশীর অভিযোগ, দিল্লির প্রায় তিন কোটি মানুষের জন্য প্রতিদিন মাত্র ১ হাজার ৫০ মিলিয়ন গ্যালন জল পায়। হরিয়ানার সমসংখ্যক জনগণ সেখানে পায় সাড়ে ৬ হাজার মিলিয়ন গ্যালন জল। হরিয়ানা যদি ১০০ মিলিয়ন গ্যালন জলও দেয় তা দিল্লির চাহিদার মাত্র দেড় শতাংশ।  

দিল্লির অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, শহরের আনুমানিক জলের চাহিদা ১ হাজার ২৯০ মিলিয়ন গ্যালন।  মোট চাহিদার ৮৬ ভাগের বেশি জলের জন্য দিল্লি তার প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর উপর নির্ভরশীল।  দিল্লির অভিযোগ,   গত দু’সপ্তাহ ধরে হরিয়ানা সরকার জল বন্টনের  পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে, যার ফলে প্রায় ২৮ লক্ষ মানুষ জলসঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছেন।