ভারত-স্পেন যৌথ উদ্যোগে ভদোদরায় সামরিক বিমান কারখানার উদ্বোধন

গুজরাতের ভদোদরায় উদ্বোধন করা হল চালু হল ভারতের নতুন সামরিক বিমান প্রকল্প। ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য এটি শুধুমাত্র একটি নতুন উইং-ই নয়, সি-২৯৫ সামরিক বিমান তৈরির জন্য এয়ারবাস ও টাটার যৌথ উদ্যোগ, যা ভারতের বেসরকারি ক্ষেত্রে প্রথম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্পেনের প্রেসিডেন্ট পেদ্রো সাঞ্চেজ এই টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেডের উদ্বোধন করেন। টাটা ও এয়ারবাসের যৌথ উদ্যোগে সেখানে তৈরী হবে সি-২৯৫ সামরিক বিমান।

প্রথমবার ভারত সফরে এসে স্পেনের প্রেসিডেন্ট পেদ্রো সাঞ্চেজ জানিয়েছেন, ২০২৬ সালে টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেড বা টিএএসএল সংস্থা থেকে প্রথম সি-২৯৫ সামরিক বিমান তৈরী হবে। উল্লেখ্য, ১৮ বছর পর প্রথমবার স্পেনের কোন প্রেসিডেন্ট ভারত সফরে এলেন। এদিন সাঞ্চেজ বলেন, ‘আজ আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে একটি অত্যাধুনিক শিল্প সংস্থার উদ্বোধন করলাম। আমরা দেখলাম কিভাবে দুটি ঐতিহ্যবাহী সংস্থা যৌথভাবে একটি অসাধারণ প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নগুলির মধ্যে আরও একটি বাস্তবে রূপ পেল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনার স্বপ্ন ভারতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পাওয়ার হাউস তৈরি করা ৷ সেই সঙ্গে ভারতকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা ৷ এয়ারবাস এবং টাটার মধ্যে এই যৌথ উদ্যোগে ভারতীয় মহাকাশ শিল্প এক নতুন দিশা পাবে৷’


অন্যদিকে, টাটা ও এয়ারবাসের যৌথ উদ্যোগে তৈরি সি-২৯৫ সামরিক বিমান ভারত এবং স্পেনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করল  বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৷ তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধু পেদ্রো সাঞ্চেজের এটা প্রথম ভারত সফর৷ আজ থেকে আমরা ভারত এবং স্পেনের বন্ধুত্বকে নতুন দিশা দেখালাম৷’

প্রধানমন্ত্রী মোদি আরও বলেন, ‘‘আমরা আজ সামরিক বিমান সি-২৯৫ এর নির্মাণ কারখানা উদ্বোধন করলাম৷ এই প্রকল্প ভারত-স্পেনের সম্পর্ককে দৃঢ়  করার পাশাপাশি, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পকেও বিশ্বের অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’

অনুষ্ঠানে টাটা সন্সের সদ্য প্রয়াত চেয়ারম্যান তথা শিল্পপতি রতন টাটার প্রতিও শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। এদিন মোদী বলেন, ‘এই প্রকল্প  রতন টাটার স্বপ্ন ছিল । উনি কয়েকদিন হল মারা গেছেন। আজ তিনি থাকলে খুশি হতেন। কিন্তু আজ তিনি যেখানেই থাকুন নিশ্চয়ই খুশি হবেন।’  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টাটা সংস্থার বর্তমান চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখরনও।

গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর স্পেনের বিমান নির্মাতা সংস্থা ‘এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস’ আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রথম সি-২৯৫ সামরিক বিমানটি বায়ুসেনার হাতে তুলে দিয়েছিল। এর পর ২০ সেপ্টেম্বর গুজরাটের ভদোদরা বায়ুসেনাঘাঁটিতে স্পেন থেকে প্রথম সি-২৯৫ এসে পৌঁছয়। সেই সময়েই বিমান নির্মাতা সংস্থা জানায়,  ভবিষ্যতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির অংশ হিসাবে ভারতেই তৈরি হবে এই সামরিক বিমান। সহযোগী সংস্থা হিসাবে থাকবে ‘টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেড’। গুজরাটের  ভদোদরায় তৈরি করা হবে সামরিক বিমান নির্মাণ কারখানা। সেই কারখানারই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল সোমবার।

উল্লেখ্য, সি-২৯৫ প্রকল্পের আওতায় মোট ৫৬টি সামরিক বিমান তৈরী করা হবে। ২০২১ সালে ৫৬টি সি-২৯৫ বিমানের জন্য এয়ারবাসের সঙ্গে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার চুক্তি করেছিল দিল্লি। সেই মতো স্পেন থেকে ১৬টি সামরিক বিমান আমদানি করা হয়। স্থির হয়, বাকি ৪০টি সামরিক বিমান নির্মাণ করা হবে ভারতে, গুজরাটের ভদোদরায়। এরই দায়িত্ব পেল টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেড। এটি প্রথম বেসরকারি সংস্থা যারা ভারতে সামরিক বিমান নির্মাণ করবে। 

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, মাঝারি ক্ষমতাসম্পন্ন সামরিক পরিবহণ বিমান সি-২৯৫ হাতে আসায় লাদাখ, সিকিম কিংবা অরুণাচল প্রদেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার দুর্গম ঘাঁটিগুলিতে সহজে অস্ত্র এবং রসদ পৌঁছে দিতে পারবে ভারতীয় বায়ুসেনা। চিনা ফৌজের আক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিলে নির্দিষ্ট সেনাঘাঁটিগুলিতে দ্রুত রসদ পৌঁছে দিতে পারবে। সেই সঙ্গে আহত বা অসুস্থ সেনাদের ফিরিয়ে আনা এমনকী, প্রয়োজনে এই বিমান নজরদারির কাজেও ব্যবহার করা যাবে। মাঝারি শক্তির এই পরিবহণ বিমান ছোট রানওয়েতে ওঠানামা করতে পারে।  প্রয়োজনে এই বিমান শত্রুপক্ষের উপর নজরদারির কাজেও ব্যবহার করা যাবে  । এক সঙ্গে ৭১ জন সেনা, প্রয়োজনীয় অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম-সহ ৫০ জন প্যারাট্রুপার কমান্ডোকে বহন করতে সক্ষম সি-২৯৫।