কেজরিওয়ালের সমর্থনে দিল্লির রাজপথে ‘ইন্ডিয়া’

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব ডেরেক

নিজস্ব প্রতিনিধি – কেজরিওয়ালের সমর্থনে এবার দিল্লির রাজপথে নেমেছে ‘ইন্ডিয়া’৷ রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে ‘ইন্ডিয়া’ শিবির৷ রামলীলা ময়দানে আয়োজিত হয়েছিল এক র্যালি, যার নাম ‘গণতন্ত্র বাঁচাও সমাবেশ’৷ অংশ নিয়েছিল ‘ইন্ডিয়া’ শিবিরের ২৮টি দল, যাদের স্লোগান ছিল, ‘স্বৈরাচার হটাও, গণতন্ত্র বাঁচাও’৷ এই সমাবেশে কেবল বিভিন্ন দলের হাইভোল্টেজ নেতৃত্বরা নন, পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশগ্রহণ করেছিলেন৷ এই সমাবেশ থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ’ও ব্রায়েন এবং সাগরিকা ঘোষ৷ সমাবেশ থেকে এবার পুলওয়ামা হামলার আসল সত্য উন্মোচনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানালেন ডেরেক ’ও ব্রায়েন৷

রবিবার থেকেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় শুরু করেছেন নির্বাচনী প্রচার৷ তাই দিল্লির সমাবেশে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি৷ এমতাবস্থায় দিল্লির সমাবেশে ডেরেক ও ব্রায়েন এবং সাগরিকা ঘোষ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব করেন৷ পুলওয়ামা হামলা প্রসঙ্গে দিল্লির সমাবেশ থেকে ডেরেক বলেন, পুলওয়ামা ঘটনার পর রাজ্যপাল সত্যপাল মলিক জনসমক্ষে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চান না এই ঘটনার আসল সত্য উন্মোচিত হোক৷ এই সত্যটি হলো সেই ৪০ জন বীর, সাহসী যোদ্ধাদের ঘিরে যারা আমাদের দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন৷ তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে, আদতে কি লুকোতে চান প্রধানমন্ত্রী? কেনই বা দেশের জোয়ানদের নিয়ে নিম্নমানের রাজনীতি করছেন নরেন্দ্র মোদী? পাশাপাশি ডেরেক এই সমাবেশের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে বলেন৷ তাঁর ভাষায়, ইন্ডিয়া জোটের লড়াই ‘বিজেপি বনাম গণতন্ত্র’ এবং এই লড়াই প্রধানমন্ত্রীর ‘মোদী গ্যারান্টি’ এর বিরুদ্ধে যার ওয়ারেন্টি ‘শূণ্য’৷ রবিবারের সমাবেশে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং হেমন্ত সরেনের অনুপস্থিতি নিয়েও দুঃখ প্রকাশ করে তৃণমূলের তরফ থেকে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দেন ডেরেক৷


সাগরিকা ঘোষ দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, চব্বিশের নির্বাচন হবে স্বৈরতন্ত্র বনাম গণতন্ত্রের৷ গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে৷ পাশাপাশি তিনি নরেন্দ্র মোদীকে সামনাসামনি বিতর্কে বসার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনিও কেজরিওয়ালের গ্রেফতারীর ঘটনায় ফের ক্ষোভ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সংস্থার অযৌক্তিক তৎপরতার বিরুদ্ধে সরব হন৷ তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এ লড়াই কেবল দিল্লির সিংহাসন দখলের নয় বরং স্বৈরাচার এবং মোদীর শূণ্য গ্যারান্টির বিরুদ্ধে একটি দেশের সম্মিলিত লড়াই৷ তাঁর ভাষায়, মোদী সরকারের কাছে বিরোধীদের রুদ্ধ করার জন্য একটি বিশেষ যন্ত্র রয়েছে৷ সেই ডিভাইসের নাম ইডি, যেটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো ওয়াশিং মেশিন৷ নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপির কার্যাবলীকে সাগরিকা ঘোষ কটাক্ষের সুরে নীর্মা পাউডারের বিখ্যাত বিজ্ঞাপনী ট্যাগলাইন “দুধ কে সাফদী নীরমা সে আই”-এর সাথে তুলনা করেছেন৷ একটি রাজনৈতিক দল (বিজেপি) সমগ্র দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করছে, অভিযোগ সাগরিকার৷ দেশের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি, ধনী – দরিদ্রের মধ্যে বিস্তর অর্থনৈতিক বৈষম্য, শিক্ষার নিম্ন হার এসবই প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতার প্রমান৷ ২০২১ সালের বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী বাংলায় একশো দিনের কাজ এবং আবাসের বরাদ্দ টাকা দেয়নি, সেই বিষয়েও অভিযোগ করে ক্ষোভ উগরে দেন সাগরিকা৷ প্রধানমন্ত্রীর এহেন কার্যাবলীর জন্যই বাংলায় প্রায় ১১ লক্ষ মানুষ গৃহহীন, সেই তথ্যও উল্লেখ করেন তিনি৷

সাগরিকা বলেন, প্রত্যেক রাজ্যের কিছু বিশেষত্ব রয়েছে যেমন বাংলায় ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’ এর মতো একাধিক নারী উন্নয়নমূলক প্রকল্প গৃহীত হয়েছে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হাত ধরে৷ তামিলনাড়ুর রয়েছে ‘মিড ডে’ প্রকল্প, তেলেঙ্গানার রয়েছে ‘রাইতু বন্ধু’, কেরালা ১০০% সাক্ষরতা অর্জন করেছে, কেজরিওয়াল শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়ন করেছেন৷ প্রত্যেকেই মানুষের সমস্যা শুনে তার সমাধান করেন কিন্ত্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কারো কথা শোনেন না এবং একতরফা সিদ্ধান্ত নেন, যা দেশের গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করছে৷