দেশের ব্যাঙ্কগুলির বাণিজ্যিক কাজকর্মে গতি আনতে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বা ০.২৫ শতাংশ থেকে ৫.৭৫ শতাংশ হ্রাস করেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের মানিটারি নীতি নির্ধারণ কমিটির ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত ঘােষণা করেছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট সুদের হার হ্রাসের কথা ঘােষণা করে জানান, ৩১ মার্চ সমাপ্ত তিন মাসে জিডিপি বা গ্রস ডােমেস্টিক প্রডাক্ট ৫.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার পরই রেপাে রেট হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি আরবিআইয়ের কাছ থেকে যে স্বল্পমেয়াদি তহবিল গ্রহণ করে তার সুদের হারকেই বলা হয় রেপাে রেট। এর ফলে চিনের তুলনায় দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভারত তার তকমা হারাল। কারণ বিগত তিন মাসে আর্থিক উন্নয়নের হার ছিল ৬.৪ শতাংশ।
সুদের হার হ্রাসের ক্ষেত্রে দশটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
- বৃহস্পতিবারে সিদ্ধান্তের ফলে আরবিআই ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরের পর তৃতীয়বারের জন্য ক্রমানয়ে মুল সুদের হার হ্রাস করল।
- অর্থনীতিবিদদের সম্ভাব্য হিসেব অনুযায়ী আরবিআই রেপাে রেট হ্রাসের উদ্যোগ নেয়। সংবাদ মাধ্যমের সমীক্ষা অনুযায়ী জিডিপি পরিসংখ্যান প্রকাশের আগে ৬৬ জন অর্থনীতিবিদদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ অর্থনীতিবিদই মানিটারি পলিসি কমিটির বেপােরেট ২৫ পয়েন্ট বেসিস পয়েন্ট হ্রাস করে ৫.৭৫ শতাংশ করার আশা। প্রকাশ করেছিলেন।
- সুদের হার হ্রাসের ফলে গৃহ, গাড়ি এবং অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে এবং কিস্তির হারেও হ্রাস হবে।
- অন্যদিকে আমানতকারীরা তাদের আমানতের জন্য ব্যাঙ্কের কাছ থেকে কম সুদ পাবেন।
- অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ আশা করে ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক গ্রহণযােগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
- ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় নগদের অধিক ব্যবহারে ঘাটতি থেকে সদর্থক পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বিনিয়ােগ লেনদেনের এই ব্যবস্থা বজায় থাকা অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্য বিনিয়ােগ আধিকারিক (ঋণ) এবং প্রডাক্ট হেড কোটাক মহীন্দ্রা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লক্ষ্মী আয়ার।
- আরবিআইয়ের নীতি ঘােষণা করে সাংবাদিকদের আরবিআই গভর্নর জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক চায় ‘দ্রুত ও উচ্চ হারে’ সুদের হারের হ্রাসের সুবিধা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকদের কাছে পৌছে দিক।
- এই পরিবর্তনকে এক চমক বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ঋণ বাজার এই পদক্ষেপকে এক সদর্থক নীতি হিসেবে গ্রহণ করবে, যদিও অধিকাংশ সুদ হ্রাসের নীতিই ইতিমধ্যেই গৃহীত হয়েছে। আরবিআইয়ের আর্থিক উন্নয়নের হারের বৃদ্ধির ঘােষণায় বেশ হতাশাই লক্ষ্য করা গিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কোটাক ইনস্টিটিউশনাল ইকুইটিজের বরিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ শুভদীপ রক্ষিত।
- ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জিডিপি উন্নয়ন হার ২০১৯-২০ আর্থিক বর্ষের জন্য হ্রাস করে এপ্রিল মাসে ৭.২ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ ধার্য করেছে।
- ২০১৯-২০ আর্থিক বর্ষের প্রথম ছয়মাসে গ্রাহক মুদ্রাস্ফীতি ধরা হয়েছে ৩-৩.১ শতাংশ ‘ঝুঁকির সমতা বজায়’ সহ বলে আরবিআই মাসিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।