ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। কিন্তু তারপরেও এই সংখ্যা অন্যান্য দেশের থেকে অনেকটাই কম বলে জানাল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর। জানানো হয়েছে, ভারতে করোনা আক্রান্তের হার ০.০০৩৩২ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যায় মাত্র ৩৩.২ জন আক্রান্ত হয়েছে কোভিড ১৯-এ।
আইসিএমআর জানিয়েছে, এই সংখ্যাটা অন্যান্য দেশের থেকে অনেকটাই কম। আমেরিকায় আক্রান্তের হার ০.২৫২৩ শতাংশ, ফ্রান্সে ০.৩৩৬৪ শতাংশ, ব্রিটেনে ০.১৯৬২ শতাংশ, কানাডাতে ০.৮৯৯ শতাংশ। ইউএস ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের তরফে অন্যান্য দেশের এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ এপিডেমোলজির বিজ্ঞানী তরুণ ভাটনাগর জানিয়েছেন, আমরা ভারতের মোট জনসংখ্যার সঙ্গে মোট আক্রান্তের সংখ্যার হিসেবে এই পরিসংখ্যান বের করেছি। আইসিএমআর-এর ল্যাবে হওয়া নমুনা পরীক্ষার তথ্যও হিসেবের মধ্যে ছিল। এই সময়ের মধ্যে এটাই সবথেকে বিস্তারিত গবেষণা।
আইসিএমআর জানিয়েছে, ২৬ মে পর্যন্ত প্রতি লাখ জনসংখ্যায় ভারতে আক্রান্ত হয়েছেন ১০.৭ জন। এই সংখ্যাটা আমেরিকায় প্রতি লাখ জনসংখ্যায় ৪৮৬ জন, ব্রিটেনে ৫০৪ জন, বেলিজিয়ামে ৪৯৯ জন, মেক্সিকোতে ৫২.২ জন।
এই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সবথেকে বেশি সংক্রমণ বয়স্কদের মধ্যেই ছড়িয়েছে। থেকে বছর বয়সীদের মধ্যে প্রতি ১০ লাখে আক্রান্ত হয়েছে ৬৩.৩ জন। ১০ বছরের নীচে বয়সীদের মধ্যে প্রতি ১০ লাখে ৬.১ জন আক্রান্ত হয়েছে। পুরুষদের সংক্রমণের হার প্রতি ১০ লাখে ৪১.৬ জন। সেখানে মহিলাদের সংক্রমণের হার প্রতি ১০ লাখে ২৪.৩ জন।
আইসিএমআর-এর পরিসংখ্যান বলছে, ২২ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কোভিড টেস্টিংয়ে যতজন পজিটিভ রোগীর খোঁজ মিলেছিল তাদের ৪০১৮৪, জনের মধ্যে অন্তত ২৮ শতাংশই ছিল উপসর্গহীন। অর্থাৎ যাঁদের শরীরে করোনা পজিটিভ অথচ বাইরে সে রোগের কোনও লক্ষণ নেই। সর্দি, জ্বর, শুকনো কাশি বা শ্বাসকষ্ট কোভিড সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে যেগুলিকে ধরা হয় তার কোনওটাই ছিল না ওই রোগীদের মধ্যে। বাদবাকি রোগীদের অনেকেরই আবার মাইল্ড সিম্পটম বা মৃদু উপসর্গ ধরা পড়েছিল।
‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর রিপোর্ট বলছে, এপ্রিল মাস অবধি যত সংক্রমণ ধরা পড়েছে তাদের মধ্যে ২৮১ শতাংশ অ্যাসিম্পটোমেটিক বা উপসর্গহীন, ২৫.৩ শতাংশ হাই রিস্ক কেস এবং ২.৮ শতাংশ সংক্রমণ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ধরা পড়েছিল, যাঁরা নানা সময় কোভিড রোগীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন।
আইসিএমআরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এপিডেমোলজির ডিরেক্টর মনোজ মুরহেকর বলেছেন, উপসর্গহীন রোগীদের যে হিসেবটা এপ্রিল অবধি দেওয়া হয়েছে বর্তমানে সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে। এই ধরনের রোগী যাদের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে অথচ বাইরে রোগের কোনও উপসর্গ নেই, তারাই মূলত চিন্তার কারণ। এই রোগীদের চিহ্নিত করা না গেলে তাঁদের থেকে আরও অনেকের সংক্রমণ ছড়াবার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যা যত কম হয়, তত ভাল বলেই জানিয়েছে আইসিএমআর।