তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কাহিনী ‘রিল লাইফ’কেও হার মানাবে। ঘরে চূড়ান্ত দারিদ্র্য। তবু হার মানেনি তাঁর অদম্য ইচ্ছা। সংসার চালানোর পাশাপাশি লেখাপড়া শিখে চাকরি করার বাসনায় কোনও কাজই তাঁর কাছে ছোট মনে হয়নি। সেজন্য নির্বিবাদে নিকটবর্তী রেলস্টেশনে জুতো পালিশ করতে বসে যেতেন গজে সিংহ। একসময় যাত্রীদের কাছে তিনি ‘গজ্জু’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তাঁর সেই পরিশ্রম বিফলে যায়নি। ৩৫ বছর পর অবশেষে সেই রেলস্টেশনেরই অফিসার হয়ে ফিরে এলেন তিনি।
জানা গিয়েছে, গজে সিংহ ওরফে গজ্জু আদতে রাজস্থানের বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই পরিবারে চূড়ান্ত অভাব-অনটন। তার ওপর পরিবারে সদস্য অনেক। বাবা-মা আর বড় ভাইবোন মিলিয়ে আটজনের ভরা সংসার। গজ্জু ভাইবোনদের মধ্যে মেজো। তবু ছোট থেকেই অভাবী সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ছোটবেলা থেকে ভাইবোনদের পড়াশোনা এবং সংসার চালানোর ভার নিজের কাঁধে নেওয়ার পাশাপাশি নিজেও নিয়মিত পড়াশুনা চালিয়ে গিয়েছেন।
পারিবারিক সূত্রে রোজগারের উপায়, যাত্রীদের জুতো পালিশ আর ব্যান্ড বাজানো। লজ্জা না করে ব্রাশ আর ক্রিম নিয়ে সেই কাজেই হাত লাগিয়েছেন গজ্জু। পড়াশোনার ফাঁকে একটুও সময় নষ্ট করতেন না। স্কুল ছুটি হলেই চলে যেতেন নিকটবর্তী বেওয়ার স্টেশনে। কিন্তু তাতে সংসার ঠিকভাবে চলত না। সেজন্য মাঝে মাঝে ব্যান্ড বাজানোরও কাজ করতো সে। এই জুতো পালিশ আর ব্যান্ড বাজিয়ে যে টাকা উপার্জন হতো, তা দিয়েই কোনওমতে সংসার চালানো আর নিজেদের পড়াশুনা চালিয়ে যায় গজ্জু।
গজ্জু জানিয়েছেন, জুতো পালিশ করে রোজ ২০-৩০ টাকা আয় করতেন। ব্যান্ড বাজিয়ে কখনও কখনও তাঁর আয় হতো ৫০ টাকা, আবার কখনও তার কম আয়ও হতো। এদিকে বাবা অন্যের অটো চালাতেন। এভাবেই স্কুলের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। স্কুলের গণ্ডি পেরনোর পর থেমে থাকেনি তাঁর শিক্ষা। কষ্ট করে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কলেজের এক শিক্ষক গজ্জুর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেন। অধ্যাপক পারস কুমারের সহযোগিতায় স্নাতকের পর বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর চাকরির জন্য একের পর এক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসেও ব্যর্থ হন। ২৫ বার ব্যর্থ হয়েও তিনি নিরাশ হননি। গজ্জুর অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর প্রচেষ্টার ফলে রেলের পরীক্ষায় পাশ করে যান। চাকরি জীবনের প্রথম পোস্টিং বিকানেরে হলেও সেখান থেকে পরবর্তীতে শৈশবের টানে ফিরে আসেন সেই ছোটবেলার বেওয়ার স্টেশনে। তিনি এখানকার ম্যানেজার পদে কাজে যোগ দেন। একসময়ে যে স্টেশনে জুতো পালিশ করতেন, ৩৫ বছর পর সেই রেলস্টেশনের ম্যানেজার হয়ে গজে সিংহ ওরফে ‘গজ্জু’ এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন।