• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

শুধু বিহারেই রেলের ক্ষতি ২০০ কোটি অগ্নিপথে জ্বলছে গোটা দেশ

দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিহার ও উত্তরপ্রদেশে। শুধু বিহারেই বিক্ষোভকারীদের তাণ্ডবে রেলের ক্ষতি হয়েছে ২০০ কোটি টাকা।

Protesters, enraged crowd of people silhouette vector, angry mob

‘অগ্নিপথ’ কান্ডে জ্বলছে গোটা দেশ। দেশের ১৩ টি রাজ্যে ছড়িয়েছে উত্তেজনা। অবরোধ, সরকারি সম্পত্তিতে অগ্নি সংযোগ পাথর বৃষ্টি, ভাঙ্গুর, সব কিছুই ঘটছে গত তিন দিন ধরে।

দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিহার ও উত্তরপ্রদেশে। শুধু বিহারেই বিক্ষোভকারীদের তাণ্ডবে রেলের ক্ষতি হয়েছে ২০০ কোটি টাকা।

‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প ঘোষণার পর বিহারের বক্সার, নওয়াদা, ছপরা, বেগুসরাই, আরা, মুঙ্গের, জেহানাবাদের মতো এলাকায় ছড়িয়েছে পড়েছে বিক্ষোভ। রেল পথের পাশাপাশি অবরোধ করা হয়েছে জাতীয় সড়কও।

টায়ার জ্বালানো, গাড়ি লক্ষ করে পাথর বৃষ্টি, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা তো ঘটেছেই। ঘটছে ট্রেন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ।

গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত সাতটি ট্রেন বিক্ষোভকারীরা জ্বালিয়ে দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

ইস্টার্ন রেলওয়ের পিআরও একলব্য চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত আটটি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।

সময় যত এগোচ্ছে হাওড়া এবং শিয়ালদহ থেকে ছাড়া একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে, বিশেষ করে বিহারের উপর দিয়ে যে ট্রেনগুলো যায়।

অন্যদিকে রেলওয়ে বোর্ডের মুখপাত্র অমিতাভ শৰ্মা জানিয়েছেন, বিহার, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানাতে বিক্ষোভের জেরে এখনও পর্যন্ত ১১৬ টি ট্রেনের ওপর প্রভাব পড়েছে।

৩৭টি ট্রেন এখনও পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। ঘুরপথে চলছে বেশ কয়েকটি ট্রেন। এমনকি ছোট করা হয়েছে কিছু ট্রেনের রুটও। ফলে স্টেশনে স্টেশনে ভিড় বাড়ছে যাত্রীদের

কেউ ফিরছেন বাড়ি কেউ বা যাচ্ছেন কোনও কাজে, কিন্তু একের পর এক ট্রেন বাতিলে তারা আটকা পড়েছেন স্টেশনগুলিতে। সেখানেও বাড়ছে বিক্ষোভ।

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই হিংসাত্মক ঘটনায় সব মিলিয়ে শুধু বিহারেই রেলে ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে এই পরিস্থিতিতে সেকেন্দ্রাবাদ স্টেশনে হওয়া বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে দামিরা রাকেশ নামে এক বছর ২৪-এর তরুণের।

ইতিমধ্যে তাঁর পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণাও করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর।

পাশাপাশি তাঁর পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়ার ঘোষণাও করেছেন তিনি। অগ্নিগর্ভ এই পরিস্থিতির আঁচ আজকে গড়িয়েছে শীর্ষ আদালতেও।

সুপ্রিম কোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে মাথায় বসিয়ে সিট গঠনের আর্জি জানিয়েছেন মামলাকারীরা।

জাতীয় নিরাপত্তা এবং সেনায় অগ্নিপথ প্রকল্পের কার্যকারিতা এবং প্রকল্পের প্রভাব জানতে কমিটিকে দিয়ে তদন্তের দাবিও করেছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবা হবে।

অন্যদিকে বিক্ষোভে রাশ টানতে এদিন ‘অগ্নিপথ’-এ একাধিক বদলের কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র সরকার। এই প্রকল্পে এবার নিয়োগে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২১ থেকে ২৩ বছর।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, করোনার কারণে দু’বছর নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। তাই শুধুমাত্র এই বছরের জন্য বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো হয়েছে।

পাশাপাশি এই স্বল্পমেয়াদী চুক্তিভিত্তিক প্রকল্পে যোগদানকারীদের চাকরির মেয়াদ থাকছে সর্বাধিক ৪ বছরই। প্রথম ৬ মাস প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরই নিয়োগ করা হবে প্রকল্পে।

তবে চুক্তিভিত্তিকভাবে নিয়োজিত সেনাদের পঁচিশ শতাংশের স্থায়ী চাকরির আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্র। সিআরপিএফ ও অসম রাইফেলসে সেই সুযোগ মিলবে।

সেক্ষেত্রে আরও ১৫ বছর তারা চাকরির সুযোগ পানে, কিন্তু বাকিদের চাকরির মেয়াদ চার বছরই থাকবে।

বিদায়ী পঁচাত্তর শতাংশরা অবসরকালে কেন্দ্রের থেকে করমুক্ত এককালীন ১২ লাখ টাকা ভাতা পাবেন বলে জানানো হয়েছে।

বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে দেশের এক ডজন রাজ্য। ‘অগ্নিপথ’-এর বিরোধিতায় বিক্ষোভে বিহারে রেলের ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

৩০ টি এসি ও ৪০ টি নন এসি কোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রেন কোথাও বা স্টেশন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে হয়েছে পাথরবৃষ্টি।

এমনই এক পরিস্থিতিতে বায়ুসেনার প্রধান ভি আর চৌধুরি সংবাদমাধ্যমকে জানান, সেনায় যাঁরা আগামী দিনে কাজ করতে চান, তাঁরা যদি ‘অগ্নিপথ’-এর বিরোধিতায় রাস্তায় নেমে হিংসাত্মক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে তাঁদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে।

ফলে তাঁদের কেরিয়ার প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়বে। কোনও হিংসাত্মক আন্দোলন কোনও কিছুর সমাধান নয়।

সেনায় চাকরি পেতে গেলে পুলিশি ভেরিফিকেশন আবশ্যক। সেখানে একজন প্রার্থী ছাড়পত্র না পেলে তাঁর চাকরি আটকে যাবে।

ফলে তরুণদের এ ধরনের হিংসাত্মক কার্যকলাপে যুক্ত থাকা উচিত নয়। আন্দোলনকারীরা প্রকল্প সম্বন্ধে পুরোপুরি না জেনেই এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।

তাঁরা যখন প্রকৃত তথ্য পাবেন, তখন এ ধরনের ঘটনা দেখে নিজেরাই বিরত থাকবেন। কারণ এই প্রকল্পটিকে নিয়ে দু’বছর ধরে আলোচনা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর গড় বয়স ৩০ থেকে কমিয়ে ২৫ বছর করা হয়েছে।

ফলে এই ধরনের হিংসাত্মক আন্দোলন থেকে তরুণরা যাতে নিজেদেরকে সরিয়ে রাখেন, এমনই বার্তা দিলেন বায়ুসেনা প্রধান ভি আর চৌধুরি।