রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভায় শুক্রবার বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভারতের শুধু কড়া সমালােচনাই করেননি, তিনি কাশ্মীরে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন। জবাবে শনিবার ভারতের পক্ষে এমইএ ফার্স্ট সেক্রেটারি বিদিশা মৈত্র জানিয়েছেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যে ভাষায় কথা বলছেন, তা কোনও রাষ্ট্রনেতার নয়, কোনও দেশকে যুদ্ধের কিনারে পৌছে দিতে চায় এমন কোনও ব্যক্তির। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তান কাশ্মীরের বিষয় নিয়ে বারবার বিফল হয়েছে সমর্থন আদায়ে।
শনিবার ভারতের পক্ষে বিদিশা মৈত্র বলেন, পাকিস্তান সরকার কি রাষ্ট্রসংঘের তালিকাভুক্ত আল কায়দা বা জইশ অনুমােদিত ব্যক্তিদের পেনশন প্রদানের ক্ষেত্রে একমাত্র দেশ হিসেবে দেখাতে চায়। সন্ত্রাসবাদের বিষয়টিকে যে দেশ শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করেছে, সেই দেশ পাকিস্তানের প্রধান শাসক আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সন্ত্রাসবাদের পক্ষে সওয়াল করছেন।
শুক্রবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা কোনও পর্যায়ে যাবে তা বলা যাচ্ছে না। প্রতিবেশী দেশের তুলনায় অনেকটাই ক্ষুদ্র সে দেশের পক্ষে নিজের অস্তিত্ব বাঁচানাের জন্য মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। সে ক্ষেত্রে আমরা কি করব? আমি নিজেই নিজেকে এই প্রশ্ন করছি। আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে… এবং পরমাণু শক্তিধর কোনও দেশ যদি এই লড়াই চালিয়ে যেতে বাধ্য হয় তবে তা বিরুদ্ধ দেশের পক্ষে কতটা মারত্মক হবে সেটা সহজেই অনুমেয়।
এই বক্তব্যের জবাবে ভারতের পক্ষে এমইএ ফার্স্ট সেক্রেটারি বিদিশা মৈত্র জানান, তবে কি ইমরান খান নেতৃত্বাধীন সরকারই একমাত্র দেশ- যারা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের পেনশন দিচ্ছে বলে স্বীকার করছেন? পাকিস্তান কি ফিনান্সিয়াল টাস্ক ফোর্সের নির্ধারিত ২৭টি বিধির মধ্যে ২০টি লঙঘন করার নােটিশ পায়নি? এমনকী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিউ ইয়র্ক শহরেই ওসামা বিন লাদেনের তিনি একজন সমর্থক বলে ঘােষণা করার কথা অস্বীকার করতে পারেন?
ইমরান খান চলতি বর্ষের গােড়ার দিকে ইউএস ইনস্টিটিউট অফ পিস-এর এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘২০১১ সালে মার্কিন বাহিনী পাকিস্তানের ভেতরে দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার পর তিনি দুঃখিত এবং অপমানিত হয়েছিলেন। কারণ যে দেশ কোনও দেশের সহযােগী হওয়া সত্ত্বেও তারা আমাদের বিশ্বাস করতে পারেনি, সেটাই ছিল সবচেয়ে অপমানজনক’।
এমইএ ফাস্ট সেক্রেটারি জানতে চান, ‘তবে কি পাকিস্তান তেহেরেক-ই-ইনসাফ নেতা এটাই প্রমাণ করতে চান যে রাষ্ট্রসঙ্ঘ তালিকাভুক্ত ২৫ জঙ্গি এবং মার্কিন প্রশাসন ঘােষিত ১৩০ জন জঙ্গির ঘাঁটি পাকিস্তানেই?’ এখন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাকিস্তানে কোনও জঙ্গি ঘাঁটি নেই এবং তা পর্যবেক্ষণের জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের পর্যবেক্ষক পাঠানেরা আহ্বান জানাচ্ছেন।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এমন তিক্ততার পর্যায়ে পৌঁছেছে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লােপকারী ৩৭০ ধারা বাতিল এবং রাজ্যকে দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার ঘােষণার পর। ফার্স্ট সেক্রেটারি জানান, সন্ত্রাসবাদীদের উস্কানি দিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে, তখন ভারত কাশ্মীরের উন্নয়নের নানান পরিকল্পনা রূপায়ণের চেষ্টা করছে। ভারত জঙ্গিদের মদতদাতা এবং ঘৃণার বাণী প্রচারকারী দেশের কাছ থেকে কোনও সমর্থন আশা করে না।
পাকিস্তান ১৯৭১ সালে তার নিজের দেশের মানুষের মধ্যেই যে ভয়াবহ ঘৃণা ও বৈরীতার সৃষ্টি করেছিল তা স্মরণযােগ্য। তিনি আরও বলেন, দুই দেশ স্বাধীন ঘােষণার পর পাকিস্তানে বসবাসকারী ২৩ শতাংশ সংখ্যালঘু গােষ্ঠী বর্তমানে ৩ শতাংশে এসে ঠেকেছে এটা কিসের ইঙ্গিত?