২০২৪ কোয়াড সামিটে মোদী-বাইডেন একান্ত বৈঠকে দুই দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মূল বিষয় ছিল নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়। শুধু নিরাপত্তা নয়, নিরাপত্তা সংক্রান্ত দুই দেশের বাণিজ্যিক সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়। এই বৈঠকে ভারত-আমেরিকা সামরিক ড্রোন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জানা গিয়েছে, আমেরিকান সংস্থা জেনারেল অ্যাটোমিক্সের থেকে ৩১টি ‘এমকিউ-৯বি’ ড্রোন কিনবে ভারত। এই সংস্থাটি ক্যালিফোর্নিয়ার। এই ৩১টি ড্রোনের মধ্যে ১৬টি ‘স্কাই গার্ডিয়ান’ এবং বাকি ১৫টি ‘সি গার্ডিয়ান’ ড্রোন। এই ড্রোনগুলি আসলে একধরণের যুদ্ধবিমান। যে যুদ্ধবিমানে কোনও পাইলট থাকে না। ক্যালিফোর্নিয়ার এই সংস্থার সঙ্গে ভারতের এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এদিকে মার্কিন সংস্থা লকহিড মার্টিন এবং টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেম্স লিমিটেডের মধ্যে সাম্প্রতিক একটি চুক্তি নিয়েও দুই দেশের রাষ্ট্রনেতার মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। ভারতীয় বায়ুসেনার সি-১৩০ জে ‘সুপার হারকিউলিস’ পরিবহন বিমানের জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জানা গিয়েছে, ভারতীয় বায়ুসেনার এই বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভারতের মাটিতেই তৈরি হচ্ছে এই কারখানা। লকহিড মার্টিনের সঙ্গে এই প্রকল্পে শামিল হচ্ছে টাটা শিল্পগোষ্ঠী। উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে ২৩টি দেশে লকহিড মার্টিনের ২৭টি মেন্টেন্যান্স-রিপেয়ারিং-ওভারহলিং (এমআরও) রয়েছে। সেই সংস্থা এবার টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েই ভারতের মাটিতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে চলেছে।
এই ড্রোনের বৈশিষ্ট্য কী? কী এর কার্যক্ষমতা? জানা গিয়েছে, এই পাইলটবিহীন ড্রোন একটানা ৪০ঘন্টার বেশি আকাশে উড়তে পারে। এটি ৪০ হাজার ফুটের বেশি উঁচু জায়গা থেকে নজরদারি চালাতে সক্ষম। এতে রয়েছে ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র। যা অব্যর্থ নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম। এই ৩১টি ‘হান্টার কিলার’-এর একত্রে দাম ৩.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে এর সঙ্গে পাওয়া যাবে আরও বেশ কিছু আনুষঙ্গিক অস্ত্র। যেমন ১৭০টি ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র, ৩১০টি বোমা, দিক নির্ধারণ যন্ত্র, সেন্সর ও মাটি থেকে ওই লড়াকু ড্রোন চালনার যন্ত্র।
এদিকে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত এই নতুন চুক্তি চীনের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে এগিয়ে যাওয়ার পরে ভারত ও আমেরিকার এই সামরিক চুক্তি খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। কারণ চীন ক্রমাগত ভারতীয় সীমান্তে সামরিক উপদ্রব বাড়িয়ে চলেছে। বিশেষত পূর্ব লাদাখ ও অরুণাচল সীমান্তে লালফৌজ মোতায়েন ও সামরিক কার্যকলাপ বাড়িয়ে চলেছে। পাশাপাশি, বন্ধু দেশ পাকিস্তানকেও ক্রমাগত সামরিক সহযোগিতা করে আসছে চীন। যা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হতে পারে আগামীতে।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি চীন পাকিস্তানকে কাই হং-৪ ও উইং লুং-২ ড্রোন সরবরাহ করেছে। ইতিমধ্যে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কাছে চারটি কাই হং-৪ রয়েছে। আবার আরও ১৬টি কাই হং-৪ চেয়ে অনুরোধ পাঠিয়েছে পাকিস্তান। সীমান্তে পাকিস্তানের উপদ্রব, জঙ্গি হামলা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে বারবার পাকিস্তানকে সীমান্তে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। সেজন্য ভারত আমেরিকা ড্রোন চুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।