ঋণে ডুবতে বসেছে মোদির ভারত, পথ দেখাতে পারে ঋণের পরিমাণ কমানো

দিল্লি, ১৮ জানুয়ারি– ভারতকে বিপদ সংকেত দেখিয়ে সতর্ক করল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)৷ যে গতিতে ভারতের ক্ষণের পরিমাণ বাড়ছে তাতে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি)-কেও টপকে যেতা পারে বলেই রিপোর্ট পেশ করল আইএমএফ৷
যদিও আইএমএফের এই সতর্কবাণী অদেখা করে নরেন্দ্র মোদি সরকারের যুক্তি, ঋণ নিয়ে দেশের ঝুঁকি খুব কম কারণ সার্বভৌম ঋণ মূলত দেশীয় মুদ্রায় রয়েছে৷ আবার মোদি সরকারের মতোই আইএমএফে ভারতীয় এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর কেভি সুব্রক্ষ্মণ্যমও আইএমএফের অনুমানের সঙ্গে মতানৈক্য প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর দাবি, ভারতের ‘ডেট-টু-জিডিপি’ অনুপাত (কোনও দেশের ঋণ এবং জিডিপির অনুপাত) খুব সামান্যই বৃদ্ধি পেয়েছে৷ সুব্রক্ষ্মণ্যম বলেন, ‘‘দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ঝুঁকি বেশি৷ তবে ভারতের সার্বভৌম ঋণের ঝুঁকি খুবই কম কারণ, এটি প্রধানত দেশের মুদ্রায় নেওয়া ঋণ৷
(আইএমএফ)-এর রিপোর্টে বলছে, ভারতীয় সরকারের ঋণের পরিমাণ দেশের জিডিপি অর্থাৎ, ৩.১৮ লক্ষ কোটি টাকা ছাডি়য়ে যেতে পারে৷ গত বছরের ডিসেম্বরে সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে৷ সংবাদমাধ্যম ‘বিজ়নেস স্ট্যান্ডার্ড-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতকে সতর্ক করে আইএমএফ জানিয়েছে, এমনটা চলতে থাকলে ভারতের সামনে বড়সড় বিপদ অপেক্ষা করছে৷ কারণ, জলবায়ু পরিস্থিতি উন্নত করতে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত কারণে ভারতের এখন প্রচুর অর্থের প্রয়োজন৷ আর তাই যদি সরকারের ঋণ জিডিপিকে ছাডি়য়ে যায়, তা হলে অর্থনীতি সংক্রান্ত ঝুঁকি বাড়তে পারে৷ আইএমএফ তাদের এক বার্ষিক রিপোর্টে লিখেছে, ‘দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি বেশি কারণ, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছতে এবং জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিস্থিতি উন্নত করতে ভারতের এখন প্রচুর অর্থ প্রয়োজন৷ পাশাপাশি বৃহত্তর বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে৷’’
তবে আইএমএফের ভবিষ্যৎবাণী না ফলতে পারে কারণ, গত দুই দশকে বিশ্ব অর্থনীতি বহু বিপদের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও ভারতের সরকারি ডেট-টু-জিডিপি অনুপাত ২০০৫-০৬ সালে ৮১ শতাংশ থেকে বেডে় ২০২১-২২ সালে ৮৪ শতাংশ হয়েছিল৷ তবে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তা আবার ৮১ শতাংশে নেমেছে৷’
আবার সতর্ক করলেও বার্ষিক রিপোর্টে আইএমএফ ভারতের অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিও দেখিয়েছে৷ রিপোর্ট বলেছে যে, ভারত সরকার যদি অর্থনীতিতে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন করে তা হলে বর্তমান এবং পরবর্তী অর্থবর্ষে অর্থনৈতিক উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে৷ একটি বিবৃতিতে আইএমএফ এ-ও জানিয়েছে, ভারতকে তার ঋণ কমানোর জন্য মাঝেমধ্যে রাজস্ব আদায়ে ‘উচ্চাভিলাষী’ হতে হবে৷ বিবৃতিতে আইএমএফ বলেছে, ‘‘আসন্ন অর্থবর্ষে বিশ্ব মন্দা বাণিজ্য ও অর্থনীতির মাধ্যমে ভারতের উপর প্রভাব ফেলতে পারে৷ বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে পণ্যের দামে হেরফের দেখা দিতে পারে৷ ফলে এই পরিস্থিতিতে ভারতের অর্থনীতিতে চাপ পড়তে পারে৷’
ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ডি সুব্বারাও ভারতের ঋণ-জিডিপি অনুপাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি জানিয়েছেন, সরকারের উচিত ঋণের পরিমাণ কমানো৷ অন্যথায় তা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ এমনকি ভারতে আস্থা হারাতে পারেন অনেক বিনিয়োগকারী৷
অক্টোবর মাসে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানিয়েছিলেন, কেন্দ্র সরকারি ঋণ কমানোর উপায়গুলি দেখছে এবং ঋণ কমানোর কী কী পদক্ষেপ করা যেতে পারে তা পর্যবেক্ষণ করছে৷
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের মাথাপিছু আয় বেডে়ছে৷ যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, আয়ের অসম বণ্টন ভারতের কাছে এখনও একটি চ্যালেঞ্জ৷ এই সমস্যাটি কোভিড আবহে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে৷