প্রিয়াঙ্কা লোকসভায় গেলে সংসদীয় রাজনীতিতে তৈরী হবে নতুন ইতিহাস  

তিরুঅনন্তপুরম, ১৮ জুন –  কেরলের ওয়েনাড় আসনটি বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধির হাতে তুলে দিচ্ছেন রাহুল গান্ধি। সোমবার ,১৭ জুন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের সরকারি বাসভবনে এক বৈঠক করে কংগ্রেস হাইকমান্ড। তারপর এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। রাহুল গান্ধির আগে তাঁর ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধি এবং মা সোনিয়া গান্ধিও দক্ষিণ ভারত থেকে লোকসভা আসনে জেতার পর সেই আসন ছেড়ে গিয়েছিলেন। রাহুল ওয়েনাড়কে ছেড়ে না দিয়ে আসনটি তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধির হাতে তুলে দিচ্ছেন। এখান থেকেই জীবনের প্রথম নির্বাচনে লড়বেন প্রিয়াঙ্কা।প্রিয়াঙ্কা লোকসভায় গেলে নতুন ইতিহাস তৈরি হবে। এই প্রথম গান্ধি পরিবারের তিন সদস্য একই সময় সংসদে থাকবেন। রায়বেরেলি ও ওয়েনাড়ের সাংসদ হিসাবে লোকসভায় থাকবেন যথাক্রমে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা। অন্যদিকে, রাজ্যসভায় থাকবেন সোনিয়া। 

শেষ পর্যন্ত সংসদীয় রাজনীতিতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। প্রশ্ন হল, কংগ্রেসের অভ্যন্তরে  প্রয়াত রাজীব গান্ধির পরিবারের তিন সদস্যের সংসদে থাকা নিয়ে কথা উঠতে পারে। কংগ্রেসের বর্তমান নেতৃত্ব মনে করছে, এই মুহূর্তে গান্ধি  পরিবারকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার মতো নেতা বিশেষ কেউ নেই। তাছাড়া  অতীতে এই প্রশ্নে দল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া নেতারা খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি। 

দুই বছর আগে উদয়পুরের চিন্তন শিবিরে কংগ্রেস ‘এক পরিবার এক পদ’ নীতি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ দলীয় পদ এবং বিধায়ক, সাংসদ পরিবার পিছু একজনই হতে পারবেন। স্বভাবতই গান্ধি পরিবারের বিরুদ্ধে বিজেপি নতুন করে সরব হবে সে ব্যাপারে কোন সংশয় নেই। বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের শীর্ষ স্তরে কথা হয়েছে। দলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, অতীতের মতো বিজেপি বা প্রধানমন্ত্রী  এই বিষয়ে খুব বেশি সরব হবেন বলে মনে হয় না। বিজেপি তিনশোর বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি হয়তো অন্যরকম হতো। 


কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতার কথায়, পরিবারবাদের অস্ত্র আর কাজ করবে না। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে তৃণমূল, ডিএমকে, আরজেডি, সমাজবাদী পার্টি সহ আঞ্চলিক দলগুলির বিরুদ্ধে পরিবারবাদ নিয়ে সরব হয়েছিল। ভোটের ফল বলছে, এই বিষয়েও মোদির সমালোচনা মানুষের মনে দাগ কাটেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে যথেষ্ট ভাবনা-চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস হাইকমান্ড।

এদিকে নেহরু জমানায় ফিরোজ গান্ধির মতো প্রিয়াঙ্কা গান্ধির স্বামী রবার্ট বঢড়াও ফের সংসদ সদস্য হওয়ার ‘সুপ্ত বাসনা’ প্রকাশ করলেন।  মঙ্গলবার তিনি বলেই ফেললেন, ও আমার আগে সংসদে প্রবেশ করতে চলেছে। একইসঙ্গে সংসদ সদস্য পদের প্রতি তাঁর সুপ্ত আকাঙ্ক্ষার কথাও প্রকাশ করেন সোনিয়া গান্ধির জামাই। 

প্রিয়াঙ্কা গান্ধির ঠাকুরদা তথা ফিরোজ গান্ধি জওহরলাল নেহরু জমানায় উত্তরপ্রদেশের রায়বেরেলি লোকসভা কেন্দ্র থেকে দুবার নির্বাচিত হন। ইন্দিরার স্বামী বলেই তিনি কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী হন বলে সমালোচিতও হন। সেই পরম্পরা নেহরুগান্ধি পরিবারে আজও ফিরে আসছে। রাহুলের জেতা ওয়েনাড়\ কেন্দ্র থেকে বোন প্রিয়াঙ্কাকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেওয়াতে সেই একই সমালোচনা ১০ জনপথের উদ্দেশে ।

রবার্টের কথায়, প্রথমেই আমি দেশের জনতাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাঁরা বিজেপিকে উচিত শিক্ষা দিয়েছেন। বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে রাজনৈতিক খেলা খেলেছিল। আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, প্রিয়ঙ্কা ওয়ানাড কেন্দ্র থেকে লড়াই করবে। ওর সংসদে যাওয়াই উচিত। ও যে শুধু লোকসভা ভোটে প্রচার করেছে বলে নয়, আমি চাই ও লোকসভায় বসুক। আমার আগেই ওর সংসদে যাওয়া উচিত। আমিও ওকে অনুসরণ করতে পারি। যখন সময় আসবে তখন ওর পিছন পিছন আমিও যেতে পারি। আমি খুশি এবং আশা করি ওয়ানাডের মানুষ ওকে প্রচুর সমর্থন দেবেন।

রবার্ট আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষের জন্য লড়াই করা। বিভাজনকারী এই সরকা দেশে ধর্ম, বেকারি, মহিলা নিরাপত্তা, মুদ্রাস্ফীতি সহ নানান সমস্যা খাড়া করে দিয়েছে। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা এর বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। ওরা দেশের কোনায় কোনায় ঘুরেছে এবং জোট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। আজ আমাদের কাছে শক্তিশালী বিরোধী দল আছে। শক্তিশালী বিরোধী বেঞ্চ থাকাই গণতন্ত্রের পক্ষে ভালো। এরপর থেকে বিজেপি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা লেলিয়ে দেওয়ার আগে দুবার ভাববে। ইন্ডিয়া জোটও বুঝতে পেরেছে কী অসম্ভব প্রয়াস চালিয়ে গিয়েছে রাহুল। ও এসব শিখেছে ওর ঠাকুমা ও বাবা রাজীব গান্ধীর কাছ থেকে, বলেন রবার্ট।