বিজেপি ফের ক্ষমতায় এলে মমতা সহ সব বিরোধী নেতাদের জেলে ভরবে: কেজরিওয়াল

দিল্লি, ১১ মে:  জামিনের পরের দিনেই আজ শনিবার মধ্যাহ্নকালীন সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আগুন ঝরালেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, শনিবার দুপুর ১টার সময় দলের সদর দপ্তরে এই সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন আপ সুপ্রিমো। সেই বৈঠকে যোগ দেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানও। এদিন সাংবাদিক সেই বৈঠকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন অরবিন্দ। বৈঠকে তাঁর আলোচনায় উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যদি আদিত্যনাথের প্রসঙ্গতও।

কেজরিওয়াল এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে একটি জ্বালাময়ী আক্রমণ শানান। তিনি বলেন,”এক দেশ, এক নেতা নামক একটি ভয়ঙ্কর মিশনে রয়েছেন মোদী।” তিনি অভিযোগ করেন, “মোদী দেশকে এক জাতি, এক নেতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আম আদমি হল ভারতের একমাত্র দল, যে ভারতকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে চায়।” তিনি বলেন, “গত ৭৫ বছরের শাসনে কোনও রাজনৈতিক দলকে এত বেশি হেনস্থা হতে হয়নি। যেটা আমাদের ওপর হয়েছে। অথচ একমাত্র আপই দেশকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে চায়।”

তিনি বলেন, “মোদী সরকার সব বিরোধী দলের নেতাদের জেলে ভরছে। এবার যদি বিজেপি ফের ক্ষমতায় আসে তাহলে এম কে স্ট্যালিন, তেজস্বী যাদব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উদ্ধব থ্যাকারে, পিনারাই বিজয়ন সহ সব বিরোধী নেতাদের জেলে ভরবে। এটাই পরিকল্পনা বিজেপির। মোদী চান না, দেশে অন্য কোনও জনপ্রিয় নেতা ক্ষমতায় থাকুক।” এদিন সাংবাদিক বৈঠকে কেজরিওয়াল ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের গ্রেপ্তারির প্রসঙ্গও টেনে আনেন। তিনি দাবি করেন, হেমন্ত সোরেনের গ্রেপ্তারি মোদির আগ্রাসন নীতিরই ফলশ্রুতি। তিনি এপ্রসঙ্গে বলেন, হেমন্ত সোরেনের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত হয়নি।


তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন যে, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। কিন্তু একমাত্র বিজেপিতে সমস্ত চোরেরা রয়েছে। তিনি বলেন,”দশ দিন আগে যাঁদেরকে দুর্নীতি করেছে বলে দাবি করেছিল, তাঁদেরকেই একটি রাজ্যের উপ মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রী করেছে।” দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, মোদী যদি সত্যি দুর্নীতি দমন চান, তাহলে তাঁর(কেজরিওয়াল) কাছ থেকে শিখতে হবে। তিনি দাবি করেন,”দিল্লি সরকার গঠনের পরে আমি নিজে একজন মন্ত্রীকে তাঁর পদ থেকে বরখাস্ত করে জেলে পাঠিয়েছিলাম। পাঞ্জাবেও আমরা একজন মন্ত্রীকে জেলে পাঠিয়েছি। আপনি সমস্ত চোরকে আপনার দলে নিয়েছেন এবং কেজরিওয়ালকে জেলে পাঠিয়েছেন। এটা কখনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই হতে পারে না।”

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে কেজরি আরও বলেন, “গেরুয়া শিবির যদি মোদির গ্যারান্টি মানেন, তাহলে আগামী সেপ্টেম্বরে মোদির বয়স ৭৫ বছরে পড়ছে। এবার তাঁকে অবসরে পাঠানো উচিত। তাঁকে আগামী বছরেই অবসর গ্রহণ করা উচিত। আমি বিজেপির কাছে জানতে চায়, তাহলে আগামীতে আপনাদের সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে? কে মোদির গ্যারান্টি পূরণ করবেন? অমিত শাহ কি করবেন? আপনি যখন ভোট দিতে যাবেন, তখন অবশ্যই চিন্তা করবেন, আপনি অমিত শাহকে ভোট দিচ্ছেন ? নাকি মোদিকে ভোট দিচ্ছেন?”

কেজরিওয়াল আরও বলেন, “মোদী যদি ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেন, তাহলে তিনি উত্তর প্রদেশের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে নিষ্ক্রিয় করতে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবেন। যদি তিনি ভোটে জেতেন, তাহলে যোগী আদিত্যনাথকে দুই মাসের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেবেন। তাঁরা তাঁদের দলের সমস্ত জনপ্রিয় নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছেন। বসুন্ধরা রাজে, শিবরাজ সিং চৌহানকে দেখুন। এটা তারই প্রমাণ।” সব শেষে কেজরিওয়াল বলেন, আসলে মোদীর একটি ভয়ঙ্কর মিশন রয়েছে, “সেটা হল এক দেশ এক নেতা।”