• facebook
  • twitter
Thursday, 21 November, 2024

ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হলে, ধর্ষকের সন্তানের জন্ম দিতে বাধ্য করা যাবে না, রায় দিল কেরালা হাইকোর্ট  

তিরুঅনন্তপুরম, ৭ মে –  কোন মহিলা বা কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে, তাঁকে কোনও অবস্থাতেই ধর্ষকের সন্তানের জন্ম দিতে বাধ্য করা যায় না। তা করলে সংবিধানের ২১-এ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত মর্যাদার সঙ্গে জীবনধারণের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়। পাশাপাশি, ওই মহিলা বা কিশোরীকে ভয়ঙ্কর মানসিক চাপের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়। ফলে ২৮ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা একাদশ

তিরুঅনন্তপুরম, ৭ মে –  কোন মহিলা বা কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে, তাঁকে কোনও অবস্থাতেই ধর্ষকের সন্তানের জন্ম দিতে বাধ্য করা যায় না। তা করলে সংবিধানের ২১-এ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত মর্যাদার সঙ্গে জীবনধারণের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়। পাশাপাশি, ওই মহিলা বা কিশোরীকে ভয়ঙ্কর মানসিক চাপের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়। ফলে ২৮ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা একাদশ শ্রেণির কিশোরীকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছে কেরালা হাইকোর্ট।এই রায় ঘোষণা করার সময়ে বিচারপতি কওসর এডাপ্পাগাথ এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এক কিশোরীকে ৩০ সপ্তাহে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু পরে সেই রায় বেঞ্চ ফিরিয়ে নেয়, কারণ মেয়েটির জীবনসঙ্কটের  সম্ভাবনা ছিল। ফলে মেয়েটি যথা সময়েই সন্তানের জন্ম দেবে।

সোমবার কেরালা হাইকোর্ট বিস্তারিত রায়ে জানায়, এই কিশোরী তার বয়ফ্রেন্ডের প্রতারণার শিকার। অভিযুক্ত নানা অছিলায় মেয়েটিকে বারবার ধর্ষণ করে। কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় তাকে সন্তানের জন্ম দিতে বলার অর্থ তার উপরে জোর করে মাতৃত্ব চাপিয়ে দেওয়া। আর সেটা যেই মুহূর্তে করা হবে তখনই মেয়েটির ‘মর্যাদার সঙ্গে জীবনধারণের’ সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে।
 
বিচারপতি বলেন, ‘যৌন নির্যাতনের পরে কেউ যদি গর্ভবতী হয়ে পড়েন, তা জীবনব্যাপী ট্রমা হিসেবে থেকে যায়। যা ওই অন্তঃসত্ত্বার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে। যৌন নির্যাতন অত্যন্ত পীড়াদায়ক, তার উপরে তিনি যদি গর্ভবতী হয়ে পড়েন, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। কারণ এই প্রেগন্যান্সি না পরিকল্পনামাফিক না স্বেচ্ছায়।’
 
এই দিন শুনানি শুরুর আগে হাইকোর্ট এক পর্যবেক্ষণে বলে, ‘রিপ্রোডাক্টিভ রাইটসে একজন মহিলাকে সন্তানধারণের সময়, তিনি আদৌ সন্তান নেবেন কি না, কয়টি সন্তান নেবেন এবং প্রয়োজনে নিরাপদে ও আইনি পথে গর্ভপাত করানোর অধিকার দেওয়া হয়েছে।’ পাশাপাশি এও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়, প্রতিটি মেয়ে বা মহিলার যে সাম্য ও গোপনীয়তার মৌলিক অধিকার রয়েছে তার মূলে রয়েছে প্রজননের ক্ষেত্রে তাঁর একান্ত নিজস্ব সিদ্ধান্ত।
 
এই মামলার ক্ষেত্রে মেয়েটিকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে তার ‘প্রেমিকের’ বিরুদ্ধে। আইনে বলা হয়েছে, ২৪ সপ্তাহের পর আর গর্ভপাত করানো যাবে না। কিন্তু সংবিধানের ২২৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টের অধিকার আছে বিশেষ ক্ষেত্রে মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ নিয়ে অন্তঃসত্ত্বাকে গর্ভপাতে অনুমতি দেওয়ার। সেই অধিকার প্রয়োগ করে ও মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ নিয়ে কেরালা হাইকোর্ট এ দিন মেয়েটিকে গর্ভপাতের অনুমতি দেয়। মেডিক্যাল বোর্ড যে রিপোর্ট কোর্টকে জমা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে ‘অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকা যদি সন্তানের জন্ম দেয় তা হলে তার মানসিক ক্ষতি হবে। যে হেতু সে ধর্ষণের কারণে গর্ভধারণ করেছে।’ তার পরেই মেয়েটির পক্ষে রায় দেয় কোর্ট।
 
এ দিনের কেরালা হাইকোর্টের রায় খুব স্পষ্ট ভাবেই একটি দিক নির্দেশ করছে — তা হলো ভ্রূণের জীবনের অধিকার এই সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যদি গর্ভপাতের সময় দেখা যায় যে আসলে প্রিম্যাচিওর ডেলিভারি করাতে হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে সদ্যোজাতকে নিও-নেটাল কেয়ারে রেখে তার যত্ন করতে হবে। সে দায়িত্ব রাষ্ট্রের। অনেক আইনি বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, কেরালা হাইকোর্টের এই ব্যাখ্যা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয়। এর ফলে অনেক নির্যাতিতা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবতে পারবে।