দিল্লি, ২৬ জুলাই – দিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন না ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের অনেকেই। কিন্তু যোগ দেবেন মমতা। শুক্রবার দিল্লি পৌঁছনোর পর সাংবাদিকদের মমতা জানান, নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে একসঙ্গে সিদ্ধান্ত হলে অন্য কিছু ভাবা যেত। পাশাপাশি, নীতি আয়োগের বৈঠকের আগে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর স্থির সিদ্ধান্ত , ‘কোনও মতেই বঙ্গভঙ্গ হতে দেব না। সব বিরোধীর দাবি নিয়ে সোচ্চার হব।’ একথা কলকাতায় দাঁড়িয়েই স্পষ্ট করেছেন তিনি।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ রাজ্যের ছিলই। সেই নিয়ে নীতি আয়োগের বৈঠকে সোচ্চার হওয়ার বিষয়টিও প্রথম থেকেই স্পষ্ট ছিল। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘বাংলা ভাগের’ চক্রান্তের অভিযোগ। মমতা শুক্রবার বলেন, “নীতি আয়োগের বৈঠক নিয়ে অন্যরকম ভাবতাম, যদি আগে থেকে জানানো হত বাকিরা বয়কট করছে। এনডিএ জোটের সঙ্গে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই, কারণ সেটা ছিল নীতির প্রশ্ন। ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেই আছি।” প্রসঙ্গত, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে শুক্রবার দিল্লি রওনা হওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাজেটে যেভাবে বিরোধী রাজ্যগুলিকে আর্থিক বঞ্চনা করা হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বিজেপি নেতাদের এই ধরনের আচরণ নিন্দনীয়। “
শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নীতি আয়োগের বৈঠক হবে। বিরোধী জোটের মুখ্যমন্ত্রীদের প্রায় সকলেই সেই বৈঠক বয়কট করলেও, বৈঠকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, নীতি আয়োগের বৈঠকে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও যোগ দিতে পারেন। যা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। ‘ইন্ডিয়া’র অন্দরে ‘নীতিগত বিরোধ’ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন ওঠে বিরোধী শিবিরের শরিকদের মধ্যে সমন্বয় নিয়েও। তার প্রেক্ষিতে শুক্রবার দিল্লিতে চাণক্যপুরীর নতুন বঙ্গভবনে মমতা বলেন, ‘‘নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাজেট পেশের আগেই নিয়েছিলাম। কিন্তু সবাই মিলে আলোচনা করে যদি কোনও সিদ্ধান্ত হত, তা হলে অন্য কিছু ভাবতাম।’’
প্রসঙ্গত, শনিবার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নীতি আয়োগের বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু সেই বৈঠক বয়কট করেছেন ইন্ডিয়া জোটের শরিক পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, তেলে ঙ্গানা, কর্নাটক, কেরল, হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রীরা। প্রথম থেকে নীতি আয়োগের বৈঠকে মমতার সফরসূচি নিয়ে একটা জলঘোলা তৈরি হয়েছিল। শেষমেশ তাঁর দিল্লি সফর নিশ্চিত হয়। দিল্লি যাওয়ার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগে সরব হন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পলিটিক্যাল বাজেট। বন্ধুদের সাহায্য করুক। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে অন্য রাজ্যকে কেন বঞ্চনা করা হবে? বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে । বৈঠকে উপস্থিত থেকে সকল বিরোধীদের হয়ে সওয়াল করব।”
মমতা আরও বলেন, “এক দিকে ইকনমিক ব্লকেড, পলিটিক্যাল ব্লকেড।” বঙ্গভঙ্গ নিয়ে বলেন, “দেশকে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার যে পরিকল্পনা, তার চরম নিন্দা করছি। মন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বাংলা ভাগের কথা বলছেন! শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারছি, ওদের দলের অনেক নেতারাও বিহার-ঝাড়খণ্ড-অসম-বাংলাকে ভাগ করা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিবৃতি দিচ্ছেন।” আর এই দুই বিষয়ে প্রতিবাদ করতেই তিনি নীতি আয়োগের বৈঠকে যাচ্ছেন বলে জানান। মমতার সাফ কথা, “বঙ্গভঙ্গ করতে দেব না। কোনও রাজ্য চাইলে সেটা আলাদা ব্যাপার। কিন্তু আমি বাংলাকে ভাগ করতে দেব না। নির্বাচনে হেরে গেলাম, তাই বঙ্গভঙ্গ করতে হবে, এটা হতে দেব না। ভারতকে টুকরো টুকরো হতে দেব না।” শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠকে এই বিষয়ে সোচ্চার হবেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে বাজেট বঞ্চনার প্রতিবাদে ইন্ডিয়া জোটের বাকি মুখ্যমন্ত্রীরা নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করেছেন। এই পরিস্থিতিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে যোগ দেওয়া নিয়ে কংগ্রেস ও সিপিএমের একাংশ বিজেপি-তৃণমূল যোগের তত্ত্ব সামনে আনছে। ‘ইন্ডিয়া’কে অগ্রাহ্য করে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে ইতিমধ্যেই আক্রমণ করে তাঁদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী মোদি ও তাঁর সরকারকে খুশি করতেই বৈঠকে যোগ দেবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত এ ব্যাপারে তৃণমূলের যে ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে, তা কয়েকদিন আগেই স্পষ্ট করেন দলের নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস বাকি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে সম্মিলিতভাবে সংসদে লড়াই করছে এবং করবেও। তাই বলে জোটের সব সিদ্ধান্তে দলের সায় নাও থাকতে পারে। তৃণমূলের আরও বক্তব্য, নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ না দিলে রাজ্যের দাবিদাওয়া পেশ করার পাশাপাশি বাজেটে বৈষম্য নিয়েও সরব হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করা হবে।