লােকসভা নির্বাচনে বিপুল ভােটে জেতার পর বুধবার রাজ্যসভার অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি সুকৌশলে বিরােধীদের অস্ত্রেই তাদের ঘায়েল করলেন। আজ বিরােধীদের প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যালােচনা, সবই উঠে এল প্রধানমন্ত্রীর জবাবি বক্তৃতায়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, বিহারের এনসেফ্যালাইটিস, অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি থেকে বিরােধীদের প্রশ্নের অকপট জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
সংসদে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের বক্তৃতার জবাবি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি ঝাড়খণ্ডে গণপিটুনি ঘটনা টেনে এনে দুঃখ প্রকাশ করেন। দেশে বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলা সংখ্যালঘুদের ওপর হিন্দুত্ববাদী গােষ্ঠীর হামলা নিয়ে কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি কোনও প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তােলে বিরােধীরা।
আজ বিরােধীদের সেই কটাক্ষের জবাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি ঝাড়খণ্ডে এক গােষ্ঠীর হাতে সংখ্যালঘু যুবকের গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা টেনে আনেন। ওই যুবককে জোর করে ‘জয় শ্রীরাম ও জয় হনুমান’ বলানাে এবং তাকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি।
রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঝাড়খণ্ডের গণপিটুনির ঘটনা আমাকে ব্যথিত করেছে। আমি দুঃখ পেয়েছি। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু এজন্য গােটা রাজ্যকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানাে উচিত নয়। কিন্তু রাজ্যসভার কয়েকজন সদস্য ঝাড়খণ্ডকে গণপিটুনির আখড়া বলছেন, এটা কী ঠিক? কেন আপনার একটা রাজ্যকে অপমান করছেন? ঝাড়খণ্ডকে এভাবে অপমান করা আমাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে না। দেশের প্রতিটি নাগরিককে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। রাজনীতির চশমা সরিয়ে দেখলেই আমরা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পাব’।
বিহারে বিজেপি-জেডি (ইউ) জোট সরকারের ব্যর্থতায় এনসেফ্যালাইটিস প্রায় মহামারির আকার নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে রাজ্যসভায় কেন্দ্র ও রাজ্যকে তীব্র আক্রমণ করেন বিরােধী সাংসদরা। রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে অধিবেশনে প্রশ্ন তােলেন তারা।
বিরােধীদের প্রশ্নের জবাবি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জাজনক। বিহারের মতাে কাল অন্য কোনও রাজ্যে ঘটতে পারে’। এই মারণরােগ প্রতিরােধে তিনি টিকাকরণ সহ প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতার ওপর জোর দেন।
রাজ্যসভাতে কংগ্রেসকে ইভিএম, অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জী, অধিবেশনে প্রস্তাবিত বিলের উত্থান সহ দলের সভাপতি পদ থেকে রাহুল গান্ধির ইস্তফা নিয়ে আক্রমণ শানায় প্রধানমন্ত্রী।
ইভিএম কারচুপি নিয়ে অনেক দিন ধরেই শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযােগ করে আসছে বিরােধীরা। আজ প্রধানমন্ত্রী বিরােধীদের অভিযােগের উত্তরে বলেন, ‘এই হাউসে অনেকেই ইভিএম ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন। আমি তাদেরকে বলতে চাই একটা সময় সংসদে আমরা মাত্র দু’জন সাংসদ ছিলাম। গােটা সংসদ আমাদের উপহাস করতাে। কিন্তু আমরা কঠিন পরিশ্রম করেছি। পােলিং বুথ নিয়ে অভিযােগ করিনি। পাঁচের দশকে ভােট করতে সময় লাগত। বুথ দখল, রিগিং ছিল চেনা ছবি। এখন ভােটের হার বেড়েছে। এটা গণতন্ত্রের কাছে সুস্থ লক্ষণ।
ভােটারদের আবেগকে উস্কে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি বিরােধীদের উদ্দেশ্য করে বলেন , ‘ভােটের ফল নিয়ে প্রশ্ন তােলার অর্থ দেশবাসীকে অপমান করা’। যে রাজ্যে বিরােধীরা ক্ষমতায় রয়েছে সেখানে তারা ইভিএমে ভােটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে বলে স্মরণ করে দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিরােধীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ইভিএমে জিতেই বিরােধী শাসিত রাজ্য থেকে প্রতিনিধি হিসাবে তারা রাজ্যসভায় এসেছেন। কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ওরা পরাজয় মেনে নিতে পারে না। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে সুস্থ লক্ষণ নয়। শুধু হার নয়, কংগ্রেস জিতেও উপভােগ করতে পারে না’।
শাসক দলের ‘নিউ ইন্ডিয়া’ স্লোগান নিয়ে কংগ্রেসের কটাক্ষের উত্তর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। তিনি বলেন, ‘ওঁরা কি ওল্ড ইন্ডিয়ায় ফিরে যেতে চান? সেই সময় মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত সাংবাদিক বৈঠকে ছিড়ে ফেলা হত। নৌবাহিনীর জাহাজ, ব্যক্তিগত প্রমােদ তরী হিসাবে ব্যবহার করা হত। ওই ভারতে ভুরি ভুরি দুর্নীতির নজির রয়েছে’।
অসমের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সব কিছুতেই কৃতিত্ব দাবি করেন। অসমে এনআরসি-র প্রয়ােজনীয়তা মেনে নিয়েছিলেন রাজীব গান্ধি। সুপ্রিম কোর্টও এর পক্ষে রায় দিয়েছে। তাহলে আপনারা কৃতিত্ব নেবেন না কেন? রাজসভায় জবাবি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি দেশে জলসঙ্কট সমস্যা, জল সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।