দিল্লি, ৪ জানুয়ারি: এ যেন এক ঢিলে দুই পাখি! দিল্লি পুলিশ ও বিজেপি-কে একসঙ্গে পাল্টা জবাব দিলেন আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আজ দিল্লির রোহিনীতে একটি স্কুলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠানে এসে তিনি বলেন, ‘আমার কাছেও বিজেপিতে যাওয়ার প্রস্তাব আসছে’! দিল্লি পুলিশ তাঁর দলের বিধায়কদের কেনার চেষ্টার অভিযোগের প্রমাণ চাইতেই রবিবার মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই জবাব দেন।
এর আগে আবগারি দুর্নীতি মামলায় আপ প্রধানকে বারবার সমন পাঠিয়েছে ইডি। কিন্তু, পঞ্চমবারেও সেই সমনে সাড়া না দিয়ে এড়িয়ে যান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। পাল্টা অভিযোগ করেন, আসন্ন লোকসভা ভোটে দল ও তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করতে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে লেলিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। তিনি যাতে লোকসভা ভোটে প্রচার করতে না পারেন, যাতে তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, সেজন্য গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে বিজেপি সরকার। এবার আরও একধাপ এগিয়ে দল ভাঙানোর অভিযোগ করলেন। তাঁর দলের বিধায়কদের কেনার চেষ্টার অভিযোগও করেন কেজরিওয়াল। তাঁর সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পাল্টা মামলা করেন এক বিজেপি নেতা। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লি পুলিশ আপ নেতার দাবির সপক্ষে আজ প্রমাণ দাখিল করতে বলে। এরপরই তাঁর আগের অবস্থান থেকে অনড় থেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে আসেন। এরপর এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন আপ নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
প্রসঙ্গত রবিবার দিল্লির রোহিনীতে স্কুলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠানে হাজির হন। স্বাভাবিকভাবে ছুটে আসেন সাংবাদিকরা। সেখানেই তাঁর বক্তৃতায় উঠে আসে কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারের রাজনৈতিক চাপানউতোরের বিষয়। ক্ষোভ উগরে দেন কেন্দ্রের শাসক দলের বিরুদ্ধে। তাঁকে দিল্লি পুলিশের নোটিস প্রসঙ্গে তখন সংবাদমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। সরাসরি নাম না করলেও বিজেপি-কে নিশানা করতে ছাড়েননি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘ওরা যত খুশি ষড়যন্ত্র করতে পারে আমার বিরুদ্ধে। আমাকে টলানো যাবে না। আমি কখনও মাথা নোয়াব না।’’ এর পরেই কেজরিওয়াল বলেন, ‘‘ওরা আমাকেও বিজেপিতে যোগ দিতে বলছে। আমি বলে দিয়েছি, আমি কখনও বিজেপিতে যোগ দেব না। বিজেপির সঙ্গে কখনওই হাত মেলাব না।’’
এদিকে লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঝাড়খন্ড, দিল্লি থেকে বিহার একের পর এক বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সরকারের বিরুদ্ধে নেমে আসছে কেন্দ্রীয় এজেন্সির সক্রিয়তা। রাজৈনিতক মহলে বারবার একটা প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্র সরকার যদি প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ব্যবহার না করে থাকে, তাহলে কেন লোকসভা ভোটের মুখে এত সক্রিয়তা? ইডি, সিবিআই, আয়কর দপ্তরকে দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতা ও মন্ত্রীর বাড়িতে অভিযান থেকে গ্রেপ্তারির মতো একাধিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে? ভোট ও কেন্দ্রীয় এজেন্সির তৎপরতার মধ্যে এই নিবিড় সমন্বয় ও সন্ধিক্ষণ নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান দেশের রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিরা। তাঁদের মনে একটাই প্রশ্ন, দুর্নীতি নিয়ে যদি সত্যিই কেন্দ্র সরকারের সদিচ্ছা থাকে, তাহলে এতদিনে এত তৎপরতা দেখা যায়নি কেন! ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে কেন ঠিক ভোটের মুখে গ্রেপ্তার করতে হল! কেন এই সময়ে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বার বার সমন পাঠানো হচ্ছে! পশ্চিমবঙ্গ সহ বিরোধী রাজ্যগুলিতে কেন ঠিক লোকসভা ভোটের মুখেই অভিযান চালানো হচ্ছে!