তারে চোখে দেখি নি, নাম শুনেছি…..

ভারত, এমন একটি দেশ যার অলিতে-গলিতে নানান সংস্কৃতির মিশেল৷ সমৃদ্ধ ইতিহাস সঙ্গে সজীব সংস্কৃতি ভারতের এক বিরাট পরিচয়৷ দেশের নদ-নদীর ইতিহাসও অনেক প্রাচীন৷ সনাতন ধর্মে প্রকৃতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ নদীর প্রাকৃতিক গুরুত্ব অপরিহার্য৷ ভারতীয় সংস্কৃতিতে, নদীকে দেবী হিসেবে পূজা করা হয়৷ দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম৷ বর্তমানে ভারতে প্রায় ২০০টি নদী রয়েছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত নদী হল গঙ্গা৷ এছাড়াও যমুনা, গোদাবরী, সিন্ধু, গোমতী, নর্মদা, কৃষ্ণা, কাবেরীর মতো অনেক নদীর নামই আমরা জানি৷

অনেকেই কোনও না কোনও সময়ে নদীগুলিকে নিজের চোখে প্রবাহিত হতে দেখেছেন৷ কিন্ত্ত আজ এমন এক নদীর কথা বলতে যাচ্ছি, যার নাম আমরা বইয়ের পাতায় অনেকবার দেখেছি, কিন্ত্ত বাস্তব জীবনে এটিকে প্রবাহিত দেখার সুযোগ পাইনি বললেই চলে৷ কারণ নদীটি এখন শুকিয়ে গেছে৷ এমনই এক অদৃশ্য নদী  হল সরস্বতী৷

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে যে, বহু বছর আগে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়৷ এর ফলে মাটির নীচের পাহাড় উপরে উঠে যায় এবং সরস্বতী নদীর জল পিছনের দিকে চলে যায়৷ এরপর সরস্বতী নদী যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়ে তার সঙ্গেই প্রবাহিত হতে থাকে৷ যমুনার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় সরস্বতী নদীর জল সঙ্গমে ত্রিবেণী রূপ নেয়৷ প্রয়াগকে তিনটি নদীর সঙ্গম বলে মনে করা হলেও বাস্তবে সেখানে তিনটি নদীর সঙ্গম নেই৷ সেখানে মাত্র দুটি নদী আছে৷ বাস্তবে সরস্বতী প্রয়াগরাজে পৌঁছায়নি৷


সরস্বতীর উল্লেখ ঋগ্বেদে আছে৷ বৈদিক যুগে সরস্বতীকে সবচেয়ে পবিত্র নদী হিসেবে বিবেচনা করা হত৷ ঋগ্বেদেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়৷ এই নদীর জল পান করে ঋষিরা বেদ রচনা করেছিলেন এবং বৈদিক জ্ঞানের প্রসার করেছিলেন৷ আজ পর্যন্ত এই নদীকে কেউ বয়ে যেতে দেখেনি৷ এর পিছনেও একটি বড় কারণ রয়েছে৷ কথিত আছে যে, এই নদী হিমাচলের সিরমাউর এলাকার পাহাডি় অংশ থেকে উৎপন্ন হয়ে আম্বালা, কুরুক্ষেত্র, কাইথাল এবং পাটিয়ালার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সিরসার দৃষ্টিবতী নদীতে মিলিত হয়েছে৷ আজও পৌরাণিক কাহিনিতে এই নদীর গুরুত্ব অপরিসীম৷ কিন্ত্ত বাস্তবে এই নদী পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ যদিও হাজার বছর আগে এই নদীটি প্রবাহিত হত৷ কিন্ত্ত অভিশাপের কারণে এটি শুকিয়ে গেছে৷ এবং বর্তমানে এর অস্থিত্ব শুধু রয়ে গেছে নামে মাত্র৷

রামায়ণ এবং মহাভারত যদি পড়েন দেখা যাবে সরস্বতী ধরত্রীর ভেতর থেকে প্রবাহিত হয়েছে৷ এই নদী নিয়ে বেশ জনপ্রিয় কাহিনি রয়েছে৷ কথিত আছে যে, প্রয়াগ হল গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থল৷ এখানে সরস্বতী নদী ধরিত্রীর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়৷ অর্থাৎ পুরাণ মতে সরস্বতী অন্তঃসলিলা এবং শুধুমাত্র প্রয়াগের সঙ্গমেই দৃশ্যমান৷সরস্বতীকে বৈদিক সভ্যতার বৃহত্তম এবং প্রধান নদী হিসেবে বিবেচনা করা হত৷

ইসরোর এক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, আজও এই নদীটি হরিয়ানা, পঞ্জাব এবং রাজস্থানের মধ্য দিয়ে ভূগর্ভে প্রবাহিত হয়৷ এই নদীটি আকারে এতই বিশাল যে, পাহাড় ভেদ করে সমতল ভূমির মধ্য দিয়ে এটি আরব সাগরে মিশেছে৷ ঋগ্বেদে এর বর্ণনা বারবার পাওয়া যায়৷ ঋক বৈদিক যুগে এই নদী সব সময় জলে পরিপূর্ণ থাকত৷ আজ যেমন গঙ্গার পূজা করা হয়, সেই সময় মানুষ সরস্বতীকে মায়ের মর্যাদা দিত৷ পরবর্তী বৈদিক যুগ ও মহাভারত যুগে এই নদী অনেকাংশে শুকিয়ে গিয়েছিল৷ তখন সরস্বতী নদীতে জল তল অনেকটাই নেমে গিয়েছিল৷ শুধুমাত্র বর্ষাকালেই তা জলে ভরে যেত৷