জীবন বিমা গ্রাহকরা যদি পলিসি করার সময় মদ্যপানের অভ্যাস লুকিয়ে রাখেন, তবে বিমাকারীরা মদ্যপান সম্পর্কিত অসুস্থতার জন্য গ্রাহকদের দাবি নাকচ করে দিতে পারেন। সম্প্রতি এমনই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তাই মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে এবং স্বাস্থ্যবিমা সংস্থার কাছে তা গোপন করলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে।
বিমা সংক্রান্ত মামলাটি প্রথমে উপভোক্তা বিষয়ক দপ্তর এবং জাতীয় উপভোক্তা কমিশনের বিবেচনাধীন ছিল। সেখানে বিমা সংস্থার বিরুদ্ধেই প্রথমে রায় গিয়েছিল। সেই সময় বিমা সংস্থাকে ৫ লক্ষ ২১ হাজার ৬৫০ টাকা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় বিমা সংস্থা। সেই মামলায় উপভোক্তা কমিশনের নির্দেশ খারিজ করে দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। কারণ ওই গ্রাহক তাঁর মদ্যপানের অভ্যাস সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চের নির্দেশ, মদ্যপানের কথা গোপন করলে, ওই অভ্যাসের কারণে শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির চিকিতসার জন্য বিমার টাকার আবেদন খারিজ করতে পারে সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থা। এই মামলার ক্ষেত্রে, মামলাকারীর স্বামী ২০১৩ সালে এক বিমা সংস্থার স্বাস্থ্যবিমা পলিসি করেছিলেন। প্রায় এক বছর ধরে ওই বিমার কিস্তি বহন করার পরে তাঁর স্বামী পেটে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এক মাস হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে মৃত্যু হয় মামলাকারীর স্বামীর। পরে বিমা সংস্থার থেকে স্বাস্থ্যবিমার টাকা দাবি করা হলে বিমা সংস্থা মামলাকারী মহিলাকে জানিয়ে দেয়, মদ্যপানজনিত কারণে অসুস্থতার চিকিৎসা চলছিল তাঁর স্বামীর। কিন্তু স্বাস্থ্যবিমা কেনার সময়ে মদ্যপানের অভ্যাসের কথা ওই ব্যক্তি উল্লেখ করেননি। এই কারণে বিমার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সংস্থা।
বিমা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর সংস্থার বিরুদ্ধে উপভোক্তা বিষয়ক দপ্তরের দ্বারস্থ হন মহিলা। তখন মামলাকারীর পক্ষেই নির্দেশ যায়। পরে জাতীয় উপভোক্তা কমিশনও একই নির্দেশ দেয়। এরপর ওই বিমা সংস্থা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে, সুপ্রিম কোর্ট মৃতের চিকিৎসা সংক্রান্ত মেডিক্যাল রেকর্ডগুলি পরীক্ষা করে দেখে। মেডিক্যাল রিপোর্টে স্পষ্টভাবে বলে হয়েছিল যে, রোগীর ‘দীর্ঘস্থায়ী অ্যালকোহল গ্রহণের’ ইতিহাস ছিল।
প্রসঙ্গত, বিমা কেনার সময় বিমা সংস্থাটির পলিসিতে প্রস্তাব আকারে একটি নির্দিষ্ট প্রশ্ন ছিল -‘জীবন বিমা গ্রাহক কি কোনওভাবে মদ, ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেন? ‘ তার জবাবে সংশ্লিষ্ট পলিসি গ্রাহকের প্রশ্নের উত্তর ছিল ‘না’। বিমা সংস্থা তার পলিসিতে উল্লেখ করেছে যে, বিশেষ করে 7 (xi) ধারা, যেখানে ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’, কিংবা কোনও ওষুধ বা মদ্যপানের অভ্যাসের কারণে শারীরিক অসুস্থতার জন্য কোনও রকম কভারেজ দেওয়া হয় না।
জাতীয় উপভোক্তা কমিশন, দীর্ঘসময় ধরে মদ্যপান অভ্যাসের বিষয়ে হাসপাতালের রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করে। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ. লিভারের জটিল রোগ দীর্ঘদিন ধরে মদ্যপানের কারণে হয়েছে। রাতারাতি এই ধরণের জটিল সমস্যা দেখা যায় না। বিমা কেনার সময়ে ওই ব্যক্তি জেনে বুঝেই মদ্যপানের কথা গোপন করেছেন বলেও মনে করেছে শীর্ষ আদালত।
আদালত জীবন বিমা সংস্থার ওই দাবি প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে। অন্যদিকে জাতীয় উপভোক্তা কমিশনের নির্দেশে ইতিমধ্যেই মামলাকারীকে ৩ লক্ষ টাকা দিয়েছে বিমা সংস্থাটি। কিন্তু মামলাকারীর আর্থিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, আদালত ওই বিমা সংস্থাকে মামলাকারীর কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অনুমতি দেওয়া থেকে বিরত থাকে।