আর জি করের ঘটনার পর যখন সারা দেশ তোলপাড়, তখনও ঘটে চলেছে মহিলাদের অসম্মান, ধর্ষণ আর নির্যাতনের ঘটনা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সুরক্ষার অভাবের ছবি আসছে প্রতিদিন। এবার কলেজের হস্টেলেও প্রশ্নের মুখে ছাত্রীদের নিরাপত্তা। অন্ধ্রের এক ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজের গার্লস হস্টেলের শৌচাগারে মিলল গোপন ক্যামেরা। দিনের পর দিন ধরে সেই ক্যামেরায় রেকর্ড করা হচ্ছিল ছাত্রীদের নগ্ন ভিডিও। শুধু তাই নয়, ওই ভিডিও বিক্রি করা হচ্ছিল চড়া দামে, পৌঁছে যাচ্ছিল কলেজেরই অন্য ছাত্রদের কাছে। এই ঘটনা সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়। অন্ধ্রের ওই কলেজের পড়ুয়ারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান তুলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
হস্টেলের ছাত্রীদের শৌচাগারে লুকোনো ছিল ক্যামেরা। দীর্ঘ দিন ধরে চলছিল ছবি এবং ভিডিও রেকর্ডিং! চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা জেলার একটি কলেজের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক ছাত্রী দেখতে পেয়ে হইচই জুড়ে দিলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। বৃহস্পতিবার রাতভর চলে বিক্ষোভ। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে থাকেন কলেজের পড়ুয়ারা। শুক্রবারও সুবিচারের দাবিতে বিক্ষোভ চলতে থাকে। ছাত্রীদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় মানুষও। কলেজের গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। কেন এমন হেনস্তার মুখে পড়তে হবে ছাত্রীদের, কর্তৃপক্ষের কাছে সেই জবাবদিহি চান কলেজের পড়ুয়ারা।
ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই কলেজেরই বেশ কয়েক জন ছাত্র এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারা গোপন ক্যামেরায় তোলা ছবি এবং ভিডিও বিক্রি করত বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিজয় কুমার নামে এক পড়ুয়াকে। বিজয় বিটেক চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র । তার ল্যাপটপ, মোবাইল এবং অন্যান্য গ্যাজেট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, মহিলাদের শৌচাগার থেকে অন্তত ৩০০টি ছবি এবং ভিডিও তুলেছে বিজয়। তার পরে সেগুলো নিজের সহপাঠীদের কাছেই মোটা টাকায় বিক্রি করেছে সে। গোটা বিষয়টিতে কলেজের আরও কোনও পড়ুয়া জড়িত কিনা, তা জানতে তদন্ত করছে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, গোপন ক্যামেরায় তোলা হস্টেলের ছাত্রীদের প্রায় ৩০০টি ছবি এবং ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। শৌচালয়ে লুকনো ক্যামেরার ঘটনা জানার পর থেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ছাত্রীরা। তাঁরা কেউই আর শৌচাগার ব্যবহার করতে চাইছেন না। গোপনভাবে রেকর্ড করা ভিডিও এবং সেই সব ছবি বিক্রি করার ঘটনা সামনে আসতেই ছাত্রীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। কীভাবে হস্টেলের ওয়াশরুমে ক্যামেরা এল এবং সেই ফুটেজ বাকি ছাত্রদের মধ্যে বিক্রি করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রতিবাদী ছাত্রীরা।
এই ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, মহিলাদের হস্টেল থেকে কোনও গোপন ক্যামেরা মেলেনি। তবে পুলিশি তদন্তে সহযোগিতার বার্তা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাড়াতেও উদ্যোগী হয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
উদ্বেগের বিষয় হল, দেশে ক্রমশই বেড়ে চলেছে এই ধরণের অপরাধের ঘটনা। এর আগে চলতি মাসের শুরুতেই বেঙ্গালুরুর একটি নামকরা ক্যাফের শৌচাগার থেকে মোবাইল উদ্ধার করা হয়। ক্যাফেরই এক কর্মী ওই মোবাইল রেখে এসেছিল মহিলাদের ভিডিও রেকর্ডিং করার জন্য। উত্তরাখণ্ডের একটি নামকরা মিষ্টির দোকানে শৌচাগারে একটি মোবাইল মেলে গত ১৬ আগস্ট। অভিযোগ, গোপনে মহিলাদের ভিডিও রেকর্ড করা হত। সেই ঘটনায় এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।