হড়পা বান ও ভূমিধসে বিধ্বস্ত হিমাচল, বেহাল মহারাষ্ট্র, কেরল

চন্ডীগড়, ৫ আগস্ট — মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে মৃত্যুপুরীতে পরিণত কেরলের ওয়ানাড। পাশাপাশি হড়পা বান ও ভুমিধসে ভয়াবহ অবস্থা হিমাচলপ্রদেশের। তবে অতিভারী বৃষ্টির জেরে বিপাশা নদীর জল যেভাবে ফুলে ফেঁপে উঠেছে তাতে তা বিপদ সীমা ছাড়িয়েছে আগেই।  জায়গায় জায়গায় নতুন করে ভুমিধসের খবর পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া রবিবার মান্ডি ও সিমলা জেলায় নতুন করে আরও ৪টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩। সরকারিভাবে জানা যাচ্ছে, এই দুর্যোগের জেরে এখনও ৪০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ।

সোমবার দুর্ঘটনার পঞ্চম দিনে ভারতীয় তীয় এবং রাজ্য মোকাবিলা বাহিনী, হিমাচল পুলিশ, আইটিবিপি ও সিআইএসএফ যৌথভাবে উদ্ধারকাজে নেমেছে। মৃতদেহের খোঁজে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর নিয়ে এসে চলছে তল্লাশি। ধসে বিচ্ছিন্ন এলাকায় অস্থায়ী সেতুও নির্মাণ করেছে সেনা।

সোমবার পুণেতে জলমগ্ন এলাকাগুলি পরিদর্শনে যান মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর দুর্গতদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন হিমাচলপ্রদেশ সরকারও । গত শুক্রবার সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, এই ঘটনায় মৃতের পরিজনদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ ও মাসে ৫ হাজার টাকা করে আগামী ৩ মাস দেওয়া হবে। পাশাপাশি, দুর্গতদের রান্নার গ্যাস, খাবার সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেবে সরকার। রিপোর্ট বলছে, গত ২৭ জুন হিমাচলপ্রদেশে বর্ষা ঢুকেছে। ৪ অগাস্ট পর্যন্ত বর্ষার জেরে রাজ্য প্রায় ৬৬২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে একাধিক জায়গা। বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৮৭টি রাস্তা।


অন্যদিকে ঠিক একই অবস্থা মহারাষ্ট্রের পুণে, নাসিক-সহ একাধিক এলাকার। নাগাড়ে বৃষ্টিতে  বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এই জায়গাগুলিতে । গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে বেড়েছে গিরনা নদীর জলস্তর। বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে নাসিকের মালেগাঁওতে আটকে পড়ছেন ১২ জন। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও দমকলের বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে পাঠানো হয়েছে তাঁদের উদ্ধারের জন্য। শেষ ৪৮ ঘণ্টায় নাসিকে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে চাপ বেড়েছে গঙ্গাপুর জলাধারেও। রবিবার রাতে ৮৬ শতাংশ পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল জলাধার। যে কারণ রাতেই জল ছাড়তে হয়েছে গঙ্গাপুর জলাধার থেকে। পুণেতেও বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার নিতে শুরু করেছে। পুণের একতা নগর-সহ একাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বাড়ির ভিতর জল ঢুকে গিয়েছে। জলমগ্ন এলাকাগুলি থেকে সাধারণ মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। চলছে উদ্ধার অভিযান। দুর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলিতে উদ্ধারকাজে সাহায্যের জন্য ডাকা হয়েছে সেনাবাহিনীকেও।

রাতে কুল্লুর নির্মান্দ, সাইঞ্জ, মালানা, মান্ডির পাধার এবং সিমলার রামপুর মহকুমায় মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ভুমিধস ও হড়পা বানের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার জেরে ৯ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি নিখোঁজ হন একাধিক জন। এই ঘটনার পর থেকে শুরু হয়েছে উদ্ধার কাজ।

আজ সোমবার পঞ্চম দিনের সকাল থেকে দুর্যোগ কবলিত হিমাচল প্রদেশে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। জাতীয় এবং রাজ্য মোকাবিলা বাহিনী, সেনাবাহিনী, হিমাচল পুলিশ সকলে সম্মিলিত ভাবে উদ্ধারকাজে নেমেছে। এমনকি ধসে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এলাকাগুলোতে পৌঁছে উদ্ধারকাল চালানোর জন্যে সেনাবাহিনীর দল অস্থায়ী সেতুও নির্মাণ করেছে। উদ্ধারকাজে সাহায্যের জন্যে আনা হয়েছে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্নিফিং ডগ, এছাড়া অন্যান্য সরঞ্জাম। জোরকদমে চলছে উদ্ধার অভিযান। এদিকে হিমাচলের একাধিক জেলায় আরও বৃষ্টির পূর্বাভাষ দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। জানানো হয়েছে, আগামী ৮ অগাস্ট পর্যন্ত রাজ্যে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পারে।