নজির গড়ে চলবে তাপপ্রবাহের ঝড়

দিল্লি, ২৯ এপ্রিল– তীব্র তাপদাহে পুড়ছে পশ্চিমবঙ্গ সহ দিল্লি, বেঙ্গালুরু, বিহার, উত্তরপ্রদেশ৷ বৈশাখ অর্ধেক মাস পার করে ফেললেও দেখা নেই কালবৈশাখীর৷ খাস কলকাতা শহরেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে৷ কেরলে প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহে একের পর এক মৃতু্য হচ্ছে, অন্ধ্রপ্রদেশে এখনই তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি ছাডি়য়ে গেছে৷ শুধু তাই নয়, হিমালয়ের পাদদেশের তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের থেকে বেশি রয়েছে এই মুহূর্তে৷
দহনজ্বালায় শরীরের অবস্থা এতটাই বেগতিক যে, রোদে বেরোলে জ্বালা করছে চোখ-নাক-মুখ৷ হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, কলকাতা এবং সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে রোজই পারদ চড়ছে৷ সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ৷ এমনকী উত্তরবঙ্গেও তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি হয়েছে৷ গরমকালে ঝড়বৃষ্টির জন্য বাতাসে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প প্রয়োজন৷ এ বার সেটা কম থাকায় শহরে ঝড়বৃষ্টি মিলছেই না৷ অন্য বছর এপ্রিলে যেখানে গডে় ৩-৪টি কালবৈশাখী মেলে, সেখানে এ বছর অকাল-কালবৈশাখীতেই সন্ত্তষ্ট থাকতে হয়েছে৷ তাতেও কমেনি তাপমাত্রার পারদ৷
আবহাওয়াবিদরা এর জন্য দায়ী করছেন বঙ্গোপসাগরে উচ্চচাপ বলয়ের অনুপস্থিতি ও দক্ষিণবঙ্গের উপরে থাকা নিম্নচাপ বলয়ের দুর্বলতাকে৷ সাগরের উপরে থাকা উচ্চচাপ বলয়ই কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের জোগান দেয়৷ তবে শুধু এই দু’টি কারণ নয়৷ আবহবিদদের একাংশ বলছেন, গরমের এই ভোলবদলে দায়ী ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে কাশ্মীর ও উত্তর ভারতে আছডে় পড়া পশ্চিমী ঝঞ্জাও৷
শীতকালে সুদূর ভূমধ্যসাগরে নিম্নচাপযুক্ত ঝোড়ো হাওয়া তথা ঝঞ্ঝা তৈরি হয়৷ এই ঝোড়ো হাওয়া ক্রমশ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে এগিয়ে আসে৷ কাশ্মীর দিয়ে তা ভারতে ঢোকে এবং তার পরে মধ্য ভারত দিয়ে পূর্ব ভারতে বয়ে যায় কিংবা কখনও কখনও উত্তরাখণ্ড হয়ে নেপালের দিকে চলে যায়৷ এই ধরনের ঝঞ্জার প্রভাবে কাশ্মীরে, হিমাচল প্রদেশে তুষারপাত হয় এবং বৃষ্টি হয় উত্তর-পশ্চিম ভারতে৷ শীতকালে ভূমধ্যসাগর থেকে আগত দুর্বল ঘূর্ণবাতের প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে হালকা বৃষ্টিপাত এবং পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হওয়ার ঘটনাকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বা পশ্চিমী ঝামেলা বলা হয়৷ এ বছর পশ্চিমী ঝঞ্জাও খামখোলি ছিল৷
উত্তর ভারতের কয়েকটি জায়গায় পশ্চিমী ঝঞ্জার প্রভাব পড়লেও তা ছিল অনেকটাই কম৷ হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে৷ পশ্চিমে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে ঠিকই, তবে তা ভারতে ঢুকে উত্তর-পশ্চিমে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি৷ কাজেই তেমন বৃষ্টিও হয়নি তেমনভাবে৷