• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

অযোধ্যা মামলার চল্লিশ দিন ধরে চলা শুনানি শেষ, মামলার রায় স্থগিত

বুধবার অযােধ্যা মন্দির-মসজিদ বিতর্ক মামলার চল্লিশ দিন ধরে প্রাত্যহিক শুনানি শেষ হয়েছে।

সুপ্রীম কোর্ট (File Photo: IANS)

বিতর্কিত অযােধ্যা মামলার শুনানি বুধবার শেষ হয়েছে। রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধানবিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৭ নভেম্বর। তার আগেই ১৩৪ বছর ধরে চলা বিতর্কিত অযােধ্যা মামলার একটা রায় প্রকাশ করা হবে বলে তথ্যভিজ্ঞ মহলের আশা।

বুধবার অযােধ্যা মন্দির-মসজিদ বিতর্ক মামলার চল্লিশ দিন ধরে প্রাত্যহিক শুনানি শেষ হয়েছে। প্রধানবিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলছিল। কয়েক দশক ধরে চলা এই মামলার এবার চুড়ান্ত রায় ঘােষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিচারপতিগণ অযােধ্যা মামলায় উভয়পক্ষের মতক্যৈর ভিত্তিতে বার বার মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মামলার নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে চুড়ান্ত রায় ঘােষণার সিদ্ধান্ত নেন। এমনকী গত সপ্তাহে শুনানির সময় বাড়ানাে হয় এবং উভয় পক্ষের আইনজীবীদের অযথা বিতর্কের সৃষ্টি করার জন্য ভৎর্সনাও করা হয়।

বুধবার শুনানির শুরুতে এক আইনজীবী বিষয়টি খােলসা করার জন্য আরও সময়ের প্রার্থনা জানালে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে’ বিকেল ৫ টার মধ্যে শুনানি শেষ করতে হবে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এর আগে অতিরিক্ত কাজের চাপ থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে রায়দান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। শুনানির শেষ দিনে এক আইনজীবী একটি ম্যাপ ছিড়ে ফেলেন এবং শুনানি প্রক্রিয়ায় অযথা বাধাদান করতে থাকায় বিচারপতিগণ ক্ষুব্ধ হন।

সুন্নি ওয়াকফ বাের্ড ও একাধিক মুসলিম আবেদনকারীর আইনজীবী আদালতের কাছে অনুমতি নিয়ে রামচন্দ্রের জন্মস্থান সম্বলিত ছবি বিশিষ্ট ম্যাপ ছিড়ে ফেলেন। কারণ কোনও হিন্দু সম্প্রদায়ের আবেদনকারী তা আগেও আদালতে পেশ করেছিল কিন্তু আদালত তা প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেনি। এরফলে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বাকবিতণ্ডায় আদালতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এসময় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ আদালত বয়কট করার হুমকি দেন।

ছয় দশক ধরে চলা অযােধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি মামলায় সংশ্লিষ্ট স্থানটি ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের জন্মস্থান বলে মনে করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। ১৯৯২ সালে উগ্রহিন্দুত্ববাদীদের একটি অংশ সংশ্লিষ্ট স্থানে অবস্থিত যােড়শ শতকের মসজিদ ধ্বংস করে দেয় বলে অভিযােগ। এই মসজিদ মুঘল সম্রাট বা ভগবান রামের জন্মস্থান চিহ্নিত মন্দির ভেঙে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে হিন্দুত্ববাদীদের মত। মসজিদ ধ্বংসের পরবর্তীতে সারা দেশে দাঙ্গা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরফলে প্রায় দু’হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ৬ আগস্ট থেকে প্রত্যেকদিন শুনানির কথা ঘােষণা করে। কারণ আদালত গঠিত তিন সদস্যের কমিটি ঐকমত্যের মাধ্যমে বিতর্কিত বিষয়টির মীমাংসা করতে না পারায় আদালত এমন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। আদালত গঠিত তিন সদস্যের কমিটিতে ছিলেন প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এফ এম কালিফুল্লা, ধর্মীয় গুরু শ্রীশ্রী রবিশঙ্কর এবং বরিষ্ঠ আজীবী শ্রীরাম পাঁচু। কমিটির পক্ষে আদালতে জানানাে হয়েছিল কয়েকটি পক্ষ ঐকমত্যের মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা চায় না। এদিন কমিটির পক্ষে সিলকরা খামে রিপাের্ট পেশ করা হয়।

অন্যদিকে মুসলিম আবেদনকারীর পক্ষে জানানাে হয়, ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত হিন্দুরা অযােধ্যার সংশ্লিষ্ট জমি নিয়ে কোনও দাবিই করেনি। ফলে ১৯৯২ ধ্বংস করা বাবরি মসজিদ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানানাে হয়। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষে এর বিরােধিতা করে বলা হয়, মসজিদ যেকোনও স্থানে নির্মিত হতে পারে তাতে কোনও বাধা নেই, কিন্তু সংশ্লিষ্ট স্থান যেহেতু ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের জন্মস্থান তাই সেখানে রামমন্দির নির্মাণ করা হবে।

২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমিটি চারটি দেওয়ানি মামলার প্রেক্ষিতে তিনটি সমান ভাগে সুন্নি ওয়াকফ বাের্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রামলালা কমিটির মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার বিষয়ে রায় দেয়। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে চোদ্দটি মামলা দায়ের করা হয়।

উল্লেখ্য ১৯৯০ সাল থেকে অযােধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের দাবি নিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনৈতিক প্রচার সমধিক প্রাধান্য পায়। বিজেপি সাধারণ নির্বাচনের সময়ে রামমন্দির ইস্যুতে উত্তরােত্তর রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করতে থাকে। মন্দির নির্মাণের বিষয়ে সমর্থক গােষ্ঠীর একটি অংশ কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারকে সরকারি আদেশ বা অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির নির্মাণের বিজ্ঞপ্তি জারি করাতেও চাপ দিতে থাকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি সাফ জানিয়েদেন বিতর্কিত বিষয়ে আদালতে চলা মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে না।