ও আমাকে বলত, তুমি আমার মা আছো ; মমতা 

কলকাতা, ৯ জানুয়ারি – উস্তাদ রশিদ খানের অবস্থার অবনতি হয়েছে এই খবর শুনেই হাসপাতালে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে নক্ষত্রপতন হয়েছে এই খবর শুনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মমতা।  রশিদ খান আর নেই এই খবর জানার পর তাঁর প্রতিক্রিয়া, “কথাটা ভেবেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।”  তিনি এদিন আরও বলেন, উস্তাদ রশিদ খান তাঁকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করতেন।  
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, পুলিশ কমিশনার বিনীত গয়াল। ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন। হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের যদি কিছু বলার থাকে বলুন, তার পর আমি বলব। রশিদের ছেলে রয়েছেন এখানে। ও ভাল গান করে।’’ এরপর তিনি বলেন, ” ভাবতেই পারছি না রশিদ আর নেই। ওঁর মিষ্টি গলাটা আর শুনতে পাব না। কথাটা বলতে এখনও আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।”  
 
গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ২২ নভেম্বর থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন উস্তাদ রশিদ খান । গত কয়েক বছর ধরেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন। তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসায় ভাল সাড়া দিচ্ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে তাঁর স্ট্রোক হয়। তারপর থেকেই অবস্থার অবনতি শুরু। মঙ্গলবার ভোর রাতে শিল্পীকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। চিকিৎসক সুদীপ্ত মিত্রের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। এছাড়া মেডিসিন ও ক্যান্সার বিভাগের এক চিকিৎসক দলের পর্যবেক্ষণে ছিলেন তিনি। সেখানেই মঙ্গলবার বিকেল ৩টে ৪৫ মিনিট নাগাদ প্রয়াত হন। সেই সময় প্রশাসনিক কাজে জয়নগরে ছিলেন মমতা। গঙ্গাসাগর থেকে জয়নগর ঘুরে নবান্নে ফেরার কথা ছিল তাঁর। পথেই শিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর তাঁর কাছে পৌঁছয়। রশিদ খানকে দেখতে নবান্ন থেকে হাসপাতালে ছুটে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতালে এসে তিনি শিল্পীর মৃত্যু সংবাদ শোনেন। চিকিৎসকেরা রশিদের মৃত্যু সংবাদ জানানোর পর মমতা বলেন, ‘‘রশিদ আমার ভাইয়ের মতো। গঙ্গাসাগর থেকে জয়নগরে যাওয়ার পর ফোন এসেছিল। নবান্নে ফেরার পর খবর আসে। ছুটে আসি।”
 
মমতা এদিন বলেন, ‘ আমি মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম ও ফিরে আসুক।  কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওঁকে ফেরাতে পারলাম না।  রশিদের গান আর আমরা শুনতে পাব না।  ভেবেই আমার দুঃখ হচ্ছে।  একজন অসাধারণ মানুষ ছিল। ওঁর মৃত্যু আমাদের বড় ক্ষতি। দেশের ক্ষতি।’
 
মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই ছিলেন শিল্পীর স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা।  মমতা বলেন, ” আমাকে কথাগুলো বলতে হচ্ছে বলতে হবে বলে। কিন্তু বলতে কষ্ট হচ্ছে। কি করব বলুন, সবই সামলাতে হয়। মমতা এদিন বলেন, ‘রশিদ ছিল আমার ভাইয়ের মতো। খুব ভাল সম্পর্ক ছিল আমাদের। বাংলা উর্দু মিশিয়ে মিষ্টি করে কথা বলত। ও আমাকে বলত, ‘তুমি আমার মা আছো’।
 
রশিদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যার কাঁধে হাত রেখে মমতা বলেন, ‘রশিদ চলে গেছে, ওরা ভাবছে ওরা অভিভাবকহীন।  আমি ওদের অভিভাবক হয়ে থাকব।  ছেলেকে খুব ভাল শিল্পী হিসেবে তৈরী করেছে রশিদ। ওকে এগিয়ে দিতে হবে। ‘