‘ ভারতে ঘৃণা ভাষণ বাড়ছে, সংখ্যালঘুরা বিপন্ন ‘, বললেন মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিংকেন 

দিল্লি, ২৭ জুন –  সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটের পর নতুন সংসদ গঠন করা হয়েছে। সদ্য তৃতীয়বারের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এরই মধ্যে মোদির অস্বস্তি শতগুণ বাড়িয়ে দিল আমেরিকা।  মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিংকেন হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলেন, ‘ ভারতে ঘৃণা ভাষণ বাড়ছে। সে দেশে সংখ্যালঘুরা বিপন্ন। তাদের উপাসনাস্থল ভেঙে দিয়ে ধর্মাচরণের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।’ মোদি সরকারের এমন সন্ধিক্ষণে আমেরিকায় স্বয়ং বিদেশ সচিবের ভারত সম্পর্কে এমন নেতিবাচক মন্তব্য মোদি সরকারকে রীতিমতো চাপে ফেলবে  বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। 

‘মানবাধিকার’ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রত্যেক বছর গোটা বিশ্বের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে রিপোর্ট প্রকাশ করে মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক। সাধারণত মন্ত্রকের কোনও আধিকারিকই এই রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে স্বয়ং মার্কিন বিদেশ সচিব এবার সেটি প্রকাশ করেন। মোদি সরকার অতীতেও মার্কিন রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

হোয়াইট হাউসে দাঁড়িয়ে মার্কিন বিদেশ সচিবের ভারত সম্পর্কে এই মন্তব্য নয়া মাত্রা পেয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে বিরোধীরা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘৃণা ভাষণের গুরুতর অভিযোগ তোলে। প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন বলে বিরোধীরা নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানায়। কমিশন কড়া পদক্ষেপ করেনি এই অভিযোগেও সরব হয় বিরোধীরা। কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে,  স্বয়ং ব্লিংকেনের ভারতকে নিয়ে সরব হওয়ার পিছনে গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নয়া দিল্লি সফরের সম্পর্ক থাকতে পারে। ওই সফরে আমেরিকা চাইলেও ভারত সরকার বাইডেন ও মোদির যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনের প্রস্তাবে সায় দেয়নি। বাইডেন এরপর ভিয়েতনাম সফরে গিয়ে ভারতে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনের অনুমতি না মেলা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে বলেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় তিনি মোদির কাছে ভারতে মানবাধিকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এবার প্রকাশ্যেই বাইডেনের বিদেশ সচিব জানালেন ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় তাঁরা উদ্বিগ্ন। 


সংখ্যালঘুদের ধর্মাচরণের স্বাধীনতায় বাধা, তাদের উপাসনাস্থল ভেঙে দেওয়ার ঘটনা ভারতে বাড়ছে বলে বহু বছর ধরেই বলে আসছে আমেরিকা। গত বছর মণিপুরে জাতিদাঙ্গায় খ্রিস্টানদের উপর নির্যাতনের ঘটনা গোটা বিশ্বের নজরে আসে। শতাধিক চার্চ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। খ্রিস্টানদের একাধিক আন্তর্জাতিক সংগঠন এই ব্যাপারে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে শান্তি ফেরাতে দিল্লিতে কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রস্তাব দিলে মোদি সরকার ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোয় রীতিমতো ভৎসর্না করে । 

মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা কয়েক গুণ বেড়েছে বলে আগেও একাধিকবার সরব হয় মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় ভারত তুলনামূলকভাবে স্বস্তিতে ছিল। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে বিদেশ নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনেন। দেশে দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় তাঁর প্রশাসন কাজ করবে বলে ঘোষণা করেন বাইডেন। সেই মতো সব দেশের প্রতিই মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে।