জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলােপের সঙ্গে বিশেষ মর্যাদা খর্ব করার পর সেখানে উন্নয়নের জোয়ার আসবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মােদি সরকার। সেই প্রতিশ্রুতির প্রথম ধাপ এগােল সরকার। আজ জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক ঘােষণা করলেন, ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে ৫০ হাজার সরকারি চাকরির শূন্যপদ পূরণ করবে সরকার। খুব শীঘ্রই এই কাজ শুরু হবে। কাশ্মীর পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেকথাও জানাতে ভুললেন না মালিক। তাঁর বক্তব্য, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। প্রাণহানির কোনও খবর নেই।
রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক বুধবার জানান, ‘জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। উন্নয়নের জন্য সেখানে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে’। রাজ্যপাল পাকিস্তানের নাম করেই বলেন, ‘দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে উন্নয়ন হলে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষও ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হতে চাইবেন। ৩৭০ ধারা বিলােপের পর থেকে অঘােষিত বন্ধের চেহারা নিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর। জনমানবহীন রাস্তাঘাট, দোকানপাট বন্ধ, স্কুল-কলেজে দেখা নেই শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পড়ুয়াদের। এই পরিস্থিতির মধ্যে রাজ্যপাল ফের মনে করিয়ে দিলেন এখানে ঔষুধ ও নিত্য প্রয়ােজনীয় সামগ্রির জোগানের অভাব নেই। উপত্যকা নিয়ে যা রটছে তা পুরােটাই গুজব বলে দাবি করেছেন রাজ্যপাল।
‘জম্মু ও কাশ্মীরে শিক্ষাক্ষেত্রে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। জম্মু ও কাশ্মীরে ৫০ হাজার কলেজ খুব দ্রুত খুলবে। ইতিমধ্যে ৩ হাজার প্রাথমিক স্কুল খুলেছে, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ১ হাজার স্কুল খােলা হয়েছে। লাদাখেও স্কুল ও কলেজ চলছে স্বাভাবিকভাবে বলে দাবি রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের।
কয়েক দিন আগে শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে রাহুল গান্ধি, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা সহ বেশ কয়েকজন বিরােধী নেতাকে আটকায় প্রশাসন। বিমানবন্দর থেকেই ফিরতে হয় বিরােধী দলের প্রতিনিধিদের। সেই প্রসঙ্গে এদিন রাজ্যপাল বলেন, ‘শিশুর মতাে আচরণ করছেন রাহুল গান্ধি’।
জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করতে মন্ত্রিসভার প্যানেল তৈরি করল কেন্দ্র সরকার। সরকারি সূত্রে খবর, জম্মু ও কাশ্মীরে উন্নয়নের নীল নকশা তৈরির জন্য প্যানেল গঠন করেছে মােদি সরকার বলে এক সর্বভারতীয় সংবাদ পত্র জানিয়েছে। রাজ্য থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরকারী জম্মু ও কাশ্মীর এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের জন্য একটি বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ তৈরি করবে এই প্যানেল। জম্মু ও কাশ্মীর সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি বাছা হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে। অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং, ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং নরেন্দ্র তােমার।
সরকারি সুত্রে খবর, জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে আত্মপ্রকাশের একদিন আগে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কমিটিকে রিপাের্ট জমা দিতে হবে। ৭০ বছর ধরে জম্মু ও কাশ্মীরে কায়েম থাকা ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির কথা সংসদে ৫ আগস্ট ঘােষণা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই দিন তিনি জানিয়েছিলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরে উন্নয়নের পরিকল্পনার পথ প্রশস্ত করল সরকার’। সেই সঙ্গে সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছিল, জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হল কেন্দ্রীয় আইনের আওতায় এনে উন্নয়নের কাজ সহজ করার জন্য।
জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে অর্থনীতি উন্নয়নের দিকে নজর দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন, ‘সর্বস্তরীয় বৈঠক করে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। উপত্যকায় দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। উন্নয়নমূলক প্রস্তাব শীঘ্রই রাখা হবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কাছে। প্রাথমিকভাবে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাতে জম্মু ও কাশ্মীরের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়ােজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া। কাশ্মীরের ৭টি জেলা, জম্মু ও লাদাখের একটি করে জেলায় পাইলট প্রজেক্ট শুরু করা হয়েছে। আগামীদিনে তৈরি হবে জেলা স্তরের স্কিল প্ল্যানিং কমিটি।