সরকারের পদক্ষেপ সঠিক : রাহুল

রাহুল গান্ধি (File Photo: IANS)

ভারত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নীতির কদল রায় চিন সমালোচনা শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করে এফডিআই নীতিতে বদল জারি করেন। চিন প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে ভারতীয় সংস্থাগুলির শেয়ার কেনার চেষ্টা করছে।

ইতিমধ্যেই এইচডিএফসিএল’র বেশ কিছুটা শেয়ার কিনেছে চিন। চিনের অভিসন্ধি বুঝতে পেরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তড়িঘড়ি নির্দেশ জারি করেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছে।

সোমবার ভারতের সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছে বেজিং। চিনের বক্তব্য ভারত যেভাবে প্রত্যক্ষ বিদেশ লগ্নি নীতির পরিবর্তন করছে তা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মুক্ত বাণিজ্য নীতির মৌলিক শর্তের পরিপন্থী। এই পদক্ষেপকে বৈষম্যমূলক বলেও মন্তব্য করা হয়েছ।


শনিবার প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির নিয়মের পরিবর্তন করে ভারত জানিয়েছে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি থেকে কোনও বিনিয়োগ স্বয়ংক্রিয় পন্থায় আসতে পারবে না। এমন প্রস্তাব ভারতের কোনও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এলে তা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সন্তোষজনক হলে তবেই অনুমতি দেওয়া হবে।

কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত যে চিনের বাণিজ্য ক্ষেত্রে আগ্রাসী আধিপত্য বিস্তারের নীতিকে রুখে দেওয়া, তা সকলেই বুঝতে পেরেছেন। সারা বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কের সৃষ্টিতে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির দুর্বলতার সুযোগে চিন বিনিয়োগ করতে চাইছে এবং আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে। আশঙ্কা যখন সত্যিতে পরিণত হয়েছে তখনই ভারত প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নীতির পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।

প্রকাশ্যেই চিনের এমন আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। ভারতের ঋণদানকারী সংস্থা হাউজিং ফিনান্স ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন তথা এইচডিফেসিতে চিনের পিপলস ব্যাঙ্ক ১ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করায় রাহুল গান্ধি এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। কেন্দ্রও পদক্ষেপ নিতে দেরি করেনি। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি থেকে বিনিয়োগ এসে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির পরিবর্তিত নীতিতে।

কিন্তু চিন গায়ে পড়ে এর সমালোচনায় মুখর হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের বক্তব্য। দিল্লিতে চিনের দূতাবাসের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিদেশি লগ্নির পথে ভারত যে নতুন শর্ত আরোপ করেছে তা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার শর্তকে লঙঘন করেছে। মুক্ত ও উদার বাণিজ্যের পরিপন্থী। চিন মুক্ত ও স্বচ্ছ বাণিজ্যের দোহাই দিয়ে এই নীতি কদলের আশা প্রকাশ করেছে।

চিনের এই বিবৃতি ভারতের ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছে বলে তথ্যভিজ্ঞ মহলের অভিমত। কিন্তু তাতে ভারত এখনই দমবার পাত্র নয় বলে পর্যবেক্ষকদের মত। চিন যাতে ঘুর পথেও ভারতীয় সংস্থাগুলিতে আধিপত্য কায়েম করতে না পারে সেদিকেও নর্থব্লক সজাগ দৃষ্টি রাখছে।

অর্থমন্ত্রক আশঙ্কা করছে চিন অন্য দেশের কোম্পানির নাম করে ভারতের সংস্থাগুলির শেয়ার কেনার চেষ্টা করতে পারে। সে জন্য ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির ওপর সেবিকে কড়া নজরদারির জন্য সতর্ক করা হয়েছে। যেকোনও বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চিনের যোগ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।

মুলত কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ, সিঙ্গাপুর, আয়ারল্যান্ড এবং লুক্সেমবার্গ থেকে যে বিনিয়োগ আসবে সেগুলির ওপরেই বিশেষভাবে নজর রাখবে সেবি। কারণ চিনের সংস্থাগুলি ওই সব দেশের নাম করে ভারতে বিনিয়োগ করে। কয়েক বছর আগে চিন থেকে হংকংয়ে ১০০ কোটি ডলারের এক তহবিল গঠন করা হয়। সেই তহবিল থেকে তারা নানা দেশের বাজারে বিনিয়োগ করে।

এই ধরনের বিনিয়োগ করা হয় মুলত কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ থেকে। কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের বেশ কয়েকটি কোম্পানি হংকংয়ের শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত। ২০১৭ সালে হংকংয়ের শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির অর্ধেকই ছিল কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের।

এক পর্যবেক্ষক জানিয়েছেন, হংকং থেকে সরাসরি কোনও দেশে বিনিয়োগ করা হয় না। চিনা সংস্থাগুলি কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে প্রথমে একটা কোম্পানি তৈরি করে। সেখানে থেকে ভারত ও অন্যান্য দেশের বাজারে বিনিয়োগ করে।

হংকংয়ে চিন থেকে যে তহবিলে গঠন করা হয়েছে, তাতে চিনা নাগরিকরা টাকা গচ্ছিত রাখেন। ফলে তহবিল থেকে যখন কোথাও বিনিয়োগ করা হয় তখন লাভবান হন চিনারাই। হংকংয়ের তহলি থেকে কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে গঠিত কোম্পানিগুলি মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হয়। সিঙ্গাপুর থেকেও এভাবে ছদ্মনামে চিন বিনিয়োগ করে থাকে নানা দেশে।

এক পর্যবেক্ষকের মতে সিঙ্গাপুরের তিন চতুর্থাংশ বাসিন্দাই চিনা। সিঙ্গাপুরের বাসিন্দাদের মালিকানাধীন কোম্পানি বিদেশে বিনিয়োগ করে। এতে স্বাভাবিকভাবেই চিনের যোগ রয়েছে। একইভাবে আয়ারল্যান্ড ও লুক্সেমবার্গেও চিনাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রয়েছে। সেখান থেকেও ভারতে বিনিয়োগ করার চেষ্টা হতে পারে।