জম্মু ও কাশ্মীরে সরকারি বিধিনিষেধের প্রতিটি বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে : সুপ্রিম কোর্ট

সুপ্রিম কোর্ট (File Photo: iStock)

কাশ্মীর উপত্যকায় ৫ আগস্ট থেকে কেন সরকারি বিধিনিষেধ আরােপ করা হয়েছে তার জবাব দিতে হবে প্রশাসনকে। উল্লেখ্য জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকার বিশেষ মর্যাদা বিলােপের প্রেক্ষিতে এবং রাজ্যটিকে দুই কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করার নির্দেশ জারির পর থেকেই নানান সরকারি বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।

এখনও উপত্যকায় কোনও দোকানপাট খােলেনি বা সরকারি কোনও পরিবহণ ব্যবস্থায়ও চালু হয়নি। টেলিফোনের সুবিধার আংশিক বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হলেও ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হয়নি। বৃহস্পতিবার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা বিভিন্ন ব্যক্তির অভিযােগের শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনকে প্রতিটি আবেদনের বিস্তারিত জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

সরকারের পক্ষে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতাকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উত্থাপিত সকল প্রশ্নের জবাব দিতে হবে বলে নির্দেশ দেন বিচারপতি এন ভি রামান্না। সরকারের পক্ষে দাখিল করা তুষার মেহতার জবাব যথেষ্ট নয় বলেও আদালতের পক্ষে জানানাে হয়। যেকোনও নাগরিকের অভিযােগকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে কোনও রকম অবহেলা না করে জবাবদিহি করতে হবে। কোনও নাগরিকই যেন মনে না করেন, যে তার অভিযােগকে সরকার তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না।


এন ভি রামান্নার নেতৃত্বাধীন বিচারপতি আর সুভাষ ও বিচারপতি বি আর গাবাইকে নিয়ে গঠিত তিন বিচারপতির বেঞ্চের সকল বিচারপতিই একই মন্তব্য করেন। এব্যাপারে অভিযােগকারীদের পক্ষের এক আইনজীবী হংকংয়ের বিক্ষোভের বিষয় উত্থাপন করেন।

তিনি জানান, হংকংয়ের অবস্থা আরও ভয়ানক, সেখানে মানুষ সকল পুলিশি দমন অগ্রাহ্য করে বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন। সেখানকার আদালতও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশি জুলুম নিয়ে নানান বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে নির্দেশ জারি করেছে। অথচ কাশ্মীরে কোনও সঠিক বিস্তারিত কারণ ছাড়াই আগস্ট মাস থেকে নাগরিকদের স্বাভাৰ্কি জীবনযাত্রা নির্বাহের ক্ষেত্রে নানান বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।

তবে দুই জায়গাতেই যেহেতু সীমালঙ্ঘন করে জঙ্গি কার্যকলাপ চালানাে হচ্ছে তাই এখানে কিছুটা বিধিনিষেধ জারি করার পক্ষে যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে জানান বিচারপতি গাবাই। কিন্তু সেক্ষেত্রে সমগ্র রাজ্যে বিধিনিষেধ আরােপ না করে সংশ্লিষ্ট এলাকাভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা আরােপ করা উচিত বলে আইনজীবী তার বক্তব্য পেশ করেন।

অন্যদিকে সলিসিটার জেনারেল জবাবে জানান, সমগ্র রাজ্যে বিধিনিষেধ আরােপ করা হয়েছে বলে যে অভিযােগ করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। তিনি জানান, নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষিত করার জন্যই সরকার ব্যবস্থা করেছে। তিনি আরও বলেন, রাজ্যে তাদের সন্তানসন্ততিরা লেখাপড়া করতে পারছেন না বলে অভিযােগ করতে পারেন না। সংশ্লিষ্ট অভিযোগ এক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার বিষয়ে বাক স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে বলে অভিযােগ করতে পারেন।

তিনি জানান, উপত্যকার বিশেষ মর্যাদা বিলােপের তারিখেও অর্থাৎ ৫ আগস্টও সেখানকার সাতটি জেলায় মােবাইল পরিষেবা চালু ছিল। এমনকী আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল এমন সব স্থানে ৯১৭টি বিদ্যালয় চালু ছিল সংশ্লিষ্ট দিনেও। প্রশাসন যথেষ্ট বিবেচনা করেই এই বিধিনিষেধ বলবৎ করেছে বলে সলিসিটর জেনারেল জানান।

আদালতের পক্ষে জানানাে হয় আটক করে রাখার বিষয়ে একটি ব্যতীত কোনও আবেদনই আদালতে বিচারাধীন নেই। কিন্তু গুলাম নবি আজাদ ও অনুরাধা বাসিনের দাখিল করা স্বাধীনভাবে চলাফেরা, সংবাদ মাধ্যম ইত্যাদি বিষয়ে শুনানি নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া একটি হেভিয়াস কর্পাস আবেদনের শুনানি বাকি রয়েছে। এক ব্যবসায়ীকে আটক কক্স বিষয়ে একই সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে।

অন্যদিকে বুধবারই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যসভায় জানান, উপত্যকার অবস্থা ‘সম্পূর্ণ স্বাভাবিক’। তিনি জানান রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ চালু রয়েছে। কিন্তু উপত্যকার ১৯৫টি থানার কোথাও ১৪৪ ধারার অধীনে কোনও বিধিনিষেধ আরােপ করা হয়নি। তিনি জানান, বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ৯৮ শতাংশ। তবে জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকার প্রশাসনের তরফে সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার পরই উপত্যকায় ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হবে।