• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

এক দুরন্ত অভিজ্ঞতায় অচেনা গোয়া

রুনা চৌধুরি (রায়) রেলে দীর্ঘ এক জার্নি করে পেঁৗছলাম গোয়ার সমুদ্র তীরে৷ তখন নীল আকশের নীচে প্রবল উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা ফ্রেমে বাধা ঢেউয়ের দল৷ যতদূর দেখা যায়, সেজেছে বেলাভূমি আরবসাগরের তীর বরাবর রঙিন ছাতা, ততোধিক রঙিন পোশাকে চঞ্চল উজ্জ্বল মানুষের ঢল৷ দেখে এক লহমায় ক্লান্তি উধাও৷ সমুদ্রতীরের কাছেই একটি গেস্ট হাউসে আমাদের বুকিং ছিল৷ সেখানে একটু

রুনা চৌধুরি (রায়)
রেলে দীর্ঘ এক জার্নি করে পেঁৗছলাম গোয়ার সমুদ্র তীরে৷ তখন নীল আকশের নীচে প্রবল উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা ফ্রেমে বাধা ঢেউয়ের দল৷ যতদূর দেখা যায়, সেজেছে বেলাভূমি আরবসাগরের তীর বরাবর রঙিন ছাতা, ততোধিক রঙিন পোশাকে চঞ্চল উজ্জ্বল মানুষের ঢল৷ দেখে এক লহমায় ক্লান্তি উধাও৷ সমুদ্রতীরের কাছেই একটি গেস্ট হাউসে আমাদের বুকিং ছিল৷ সেখানে একটু আগেই  পৌঁছে দিয়ে গিয়েছে মোটর সাইকেল ট্যাক্সি, যাকে এখানকার লোকেরা বলেন পাইলটস৷ তবে আগে কলকাতা থেকে ট্রেনে মুম্বই হয়ে গোয়া পৌঁছনো ট্রেন পথে৷ ফ্রেশ হয়েই ছুটলাম গোয়ার বিচ সৌন্দর্য উপভোগে৷ জল থই থই নীল সমুদ্রে ততক্ষণে অগণিত মানুষের মেলা৷ কেউ স্নানের মজা উপভোগ করছে, কেউ বা এমনই হাঁটাহাটি, আর প্রচুর মানুষ ব্যস্ত প্যারাসিলিংয়ে৷ সমুদ্রের বুকে ভেসে বেড়ানো, রঙিন বোটে গিয়ে সেখান থেকে প্যারাসুট ভাড়া করে মধ্যগগণে উড়ে বেড়ানো৷ আমরাও সামিল হলাম তাতে৷ এক কথায় দুরন্ত অভিজ্ঞতা৷ শূন্যে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে নীচের নীল সমুদ্র দেখা— সে এক অনবদ্য দৃষ্টিনন্দন৷
বোটের কর্মীরাই পরিয়ে দিয়েছিলেন লাইফ জ্যাকেট৷ ফলে নিশ্চিন্তে শুধু উপভোগ৷ যাঁরা গোয়ায় বেড়াতে যাবেন, তাঁরা এই অভাবনীয় অভিজ্ঞতার সুযোগটা হাতছাড়া করবেন না৷
কিছুক্ষণ এই অপূর্ব অভিজ্ঞতার পর বোটে চড়ে তীরে ফেরা৷ পেটে তখন ছুঁচোয় ডন দিচ্ছে৷ লাঞ্চের পালা— সমুদ্রতীরেই বিশাল রঙিন ছাতার নীচে বসে খাবারের সুবন্দোবস্ত৷ গরম গরম ভাত, ডাল, তরকারি, পমফ্রেট ফ্রাই— লা জবাব৷ এছাড়াও চিকেন, মটনের নানা আইটেম৷ সঙ্গে আম, কিসমিসের সুস্বাদু চাটনি৷ আর সর্বত্রই রয়েছে নারিয়েল পানি অর্থাৎ ডাবের জল, যেটা আমাদের শিডিউলে যোগ হল বিকেলে৷ আপাতত লাঞ্চ সেরে গেস্ট হাউসে ফেরা— রেস্ট নিতে হবে কিছুক্ষণ৷ ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত গোয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে মিশেছে অসাধারণ ঐতিহাসিক সমৃদ্ধি৷ বেশ সম্পদশালী এই ভ্রমণ কেন্দেন্দ্রর যেদিকেই চোখ যায়, চোখে পড়ে এই সমৃদ্ধির চিহ্ন৷ বিশেষত পর্তুগিজ ইতিহাসের অসাধারণ বেশ কিছু নিদর্শন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গোয়াকে অন্য সব সি-বিচের তুলনায় পৃথক করেছে৷ গোয়া সরকার পর্যটনকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়৷ তাই সমুদ্রতীরের সব কিছুই সুশৃঙ্খলিত, সুপরিচিত, পটে অাঁকা ছবির মতো৷ হোটেল বা গেস্ট হাউসও পরিচ্ছন্ন, সুরক্ষিত৷ বিলাসবহুল থেকে সাধারণ মানের সবরকমই পাওয়া যায়৷
বিকেলে বিচ আরও উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বল৷ দেখলাম স্থানীয় গোয়ানিজদের নাচ, গান৷ যোগ দিয়েছে প্রচুর টু্যরিস্ট, উৎসাহী ছেলেমেয়েরা৷ নাচে গানে পর্তুগিজ প্রভাব আজও স্পষ্ট, যা অবশ্যই দারুণ উপভেোগ্য, প্রাণময়৷ পোশাক-আশাকেও বড়ই রঙিন ওরা৷ বলাবাহুল্য, এই রঙের খেলায় মাতেন বিদেশি পর্যটকরাও৷ সারা বিশ্ব থেকে এক ছুটে আসেন গোয়ার আকর্ষণে৷ সমুদ্রের গান শুনতে পাবেন৷ তাছাড়া এখানে রয়েছে অজস্র দ্রষ্টব্য, বিস্তৃত এই অরণ্য প্রকৃতি৷  সম্প্রতি এই অরণ্যকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ম্যাগাজিন তুলনা করেছে আমাজন ও কঙ্গোর জঙ্গলের সঙ্গে৷ নানা প্রকৃতির অসংখ্য মাছ, প্রায় ২৭৫ প্রজাতির পাখি, ৪৮ রকমের জীব আছে এখানে, যার মধ্যে বেশির ভাগই সরীসৃপ৷ জঙ্গলের পাশাপাশি পশ্চিমঘাট পর্বতমালা৷ সব মিলিয়ে গোয়ার ক্যানভাসে সমুদ্রের উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি রয়েছে পাহাড়ের গাম্ভীর্য ও অরণ্যের রহস্য৷ তবে সি বিচের উল্লেখ করতেই হবে৷ মোট আটটি বিচ রয়েছে গোয়ায়, সবগুলিই রামধনু রঙে আকর্ষণীয়৷
যাঁরা  ইতিহাসের অন্ধকারে হারিয়ে যেতে চান, তাঁরা অবশ্যই দেখুন এখানকার চার্চগুলো৷ স্থাপত্য, সৌন্দর্যে অনন্য এই চার্চগুলির শরীরজুড়ে পর্তুগীজ স্থাপত্যের ছাপ— যুগ যুগ ধরে যা দাঁড়িয়ে, রয়েছে বেশ কিছু মন্দিরও৷ স্থাপত্যে যথেষ্ট সমৃদ্ধ ও দৃষ্টিনন্দন৷ চার্চ ছাড়াও এখানকার মিউজিয়ামগুলি অতি সুন্দর অনাবিল সৌন্দর্যে মোড়া৷ গোয়া স্টেট মিউজিয়াম ও নাভল অ্যাভিয়েশন মিউজিয়াম অবশ্যই দেখবেন৷
হাওড়া স্টেশন থেকে অমরাবতী এক্সপ্রেস সোজা গোয়ায় যায়৷ এছাড়া মুম্বই হয়ে গেলে অনেক ট্রেন পাবেন৷ পর্যটন বিলাসীদের জন্য গোয়া নিঃসন্দেহে বর্ণময় ও আকর্ষণীয়৷ তবে কিছুটা খরচ সাপেক্ষ৷ অধিক জানতে হলে গোয়া সরকারের টু্যরিজম বিভাগে খোঁজ নেবেন৷ হাতে একটু সময় নিয়ে যাবেন৷