• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

ইউনিয়নের ‘দাদা’ থেকে গ্যাংস্টার, ৩৭ বছরের ত্রাস গােগীকে দেশ চিনল নিহত হওয়ার পর

অপরাধ জগৎ তাকে একনামেই চিনত। পুলিশের খাতাতেও সে ছিল মােস্ট ওয়ান্টেড। কিন্তু সেই গােগীকে চিনল গােটা দেশ সে নিহত হওয়ার পর।

গােগী (Photo: IANS)

‘গােগী’ দিল্লি অপরাধ জগতের অন্যতম নক্ষত্র। অপরাধ জগৎ তাকে একনামেই চিনত। পুলিশের খাতাতেও সে ছিল মােস্ট ওয়ান্টেড। কিন্তু সেই গােগীকে চিনল গােটা দেশ সে নিহত হওয়ার পর। ৩০ বছরের তরুণ গােগীকে নিকেশ করতে তার বিরােধী গােষ্ঠী বেছে নিয়েছিল আদালতকে। জিতেন্দ্র মান সাধারণ পরিবারের ছেলে। মাত্র ৩০ বছরের মধ্যেই সে হয়ে ওঠে কুখ্যাত গ্যাংস্টার গােগী। এর পেছনেও রয়েছে এক দীর্ঘ কাহিনি।

আসলে গােগীর অপরাধ জগতে প্রবেশ খুন করেই। সাধারণ পরিবারের ছাত্র রাজনীতি করা এই তরুণ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্ৰদ্ধানন্দ কলেজের ছাত্র ছিল। কলেজে ভােটের আগে দলবল তৈরি করে সামান্য ধমক-চমক দিত। ‘ছাত্র ইউনিয়নের দাদা’ বলতে যা বােঝায়। কিন্তু আচমকাই প্রিয় বন্ধু সুনীলের সঙ্গে শত্রুতা তাকে বানিয়ে দেয় গ্যাংস্টার।

প্রতিহিংসার বশে গােগী সুনীলের এক বন্ধুকে খুন করেছিল বলে অভিযােগ রয়েছে। তারপর থেকেই শুরু হয় গােগী বনাম সুনীলের লড়াই। তৈরি হয়ে যায় দুটি গােষ্ঠী। মাঝেমধ্যেই চলত গ্যাংওয়ার। ২০১০ সালে শ্ৰদ্ধানন্দ কলেজের এই ঘটনার এক বছর পর গােগীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

এরপর গােগীর মাথায় ভূত চেপে যায় সুনীল ওরফে টিল্লুকে খুন করার। ২০১১ সালে ২০ বছর বয়সে অপরাধ জগতে পুরােপুরি প্রবেশ করে গােগী। তােলাবাজি, খুন, জখম, রাহাজানি, দুষ্কৃতী দলের যা কাজ, সেই কাজে গােগী হয়ে ওঠে দিল্লির মানুষের কাছে ত্রাস।

এই গােষ্ঠীর দাপটে দিল্লির মানুষ ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকত। মাঝেমধ্যেই খেয়ালখুশি মতাে গােগীর দল রাস্তায় নেমে গাড়ি হাইজ্যাক করত। কেউ দেখে ফেললে তাকে মেরে ফেলাই ছিল গােগীর নীতি। এর পাশাপাশি গােঙ্গীর বিরােধী গােষ্ঠী টিল্লুর দলের সঙ্গে রেষারেষিও চরমে উঠেছিল। পুলিশ ২০১৬ সালে ফের গােগীকে গ্রেফতার করে। তবে আগের গােগী আর ২০১৬ র গােগীর মধ্যে বিস্তর ফারাক।

কারণ গােগীর এখন সাম্রাজ্য এবং দাপট দু’টিই বেড়েছে। জেলের মধ্যে থেকেই নেটওয়ার্ক চালিয়ে যায় গােগী। কীভাবে টিল্লুকে শেষ করা যায়, তার জন্য ছক কষছিল জেলের মধ্যে থেকেই। গােগীর দলে তখন অপরাধ জগতের আরও অনেকে নাম লিখিয়েছে। দাপট ক্রমশ বাড়ছে। এরপর তিহার জেল থেকে আদালতে যাওয়ার পর গােগী পালিয়ে যায়। ফের গােগীকে প্রতে পুলিশ ছক কষে।

গতবছর মার্চ মাসে পাঁচ বছরের চেষ্টায় ফেবুকে আড়ি পেতে পুলিশ গোগীকে গ্রেফতার করে। ততক্ষণে অবশ্য হরিয়ানার এক বিখ্যাত লােকগায়িকা হর্ষিতা দাহিয়াকে খুন করেছে গােগী এখানেই শেষ নয়, আরেক গ্যাংস্টার বীরেন্দ্র মানকে খুন করে গােগীর লােকজন। এরপর একটি ভিডিও রেকর্ডিং সামনে আসে।

সেখানে শােনা গিয়েছে পবন আঁচল ঠাকুর নামে গােগীর বিরােধী দলের গ্যাংস্টারকেও খুন করে ফেলেছে গােগীর দল। একের পর এক হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে যায় গােগীর নাম। কিন্তু পুলিশ গােগীকে কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিল না। তবে ভুল করে ফেলে গােগী। দিল্লির একটি নামকরা ক্যাফেতে বসে গােগী নিজের ছবি ফেসবুকে পােস্ট করে।

পুলিশও ছিল তক্কে তক্কে। গােগীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় দিল্লি পুলিশ। সেই সময় গােগীর কেউ সন্ধান দিতে পারলে তাকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে, এমনটাই ঘােষণা করা হয়। গােগীর মাথার দাম ১০ লক্ষ টাকা। এরপর প্রায় দেড় বছর জেলে থেকেও গােগী তার সাম্রাজ্য দাপটের সঙ্গে চালিয়ে যায়। এদিন গােগীকে তােলা হয়েছিল আদালতে। সেখানে গােগীর দলের অন্যান্য সদস্যরাও ছিল।

কিন্তু শত্রুপক্ষ যে এভাবে আইনজীবীর ছদ্মবেশে কোর্ট চত্বরের মধ্যে ঢুকে গােগীকে নিকেশ করবে, তা এই গ্যাংস্টারের সদস্যরা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেনি। পুলিশ মনে করছে, গােগীর চিরশত্রু দলের সদস্যরাই তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে চিরমুক্তি দিল। কিন্তু এখনই পুলিশ এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।