বাংলাদেশে ইসকনের পুরোহিতের গ্রেপ্তারের নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রীকে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন ডিজিপি, অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিকদের চিঠি

চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। ফাইল চিত্র

জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজিপি) এস পি বৈদ্য বুধবার বাংলাদেশে ইসকন পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে বলেছেন, অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য তাঁকে অপরাধী করা হয়েছে। তাঁর গ্রেপ্তারকে ‘বাকস্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকারের উপর সরাসরি আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এবং অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস, আইপিএস, সেনা কর্মকর্তা এবং একজন প্রাক্তন বিচারক কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লেখা একটি চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘আমরা বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের দ্বারা ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, বৈষম্য এবং নিপীড়নের বিষয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করতে লিখছি। হিন্দুদের, তাঁদের ধর্মীয় স্থান, তাঁদের সম্পত্তি এবং তাঁদের মর্যাদার বিরুদ্ধে ক্রমাগত আক্রমণ অভূতপূর্ব মাত্রায় পৌঁছেছে। হিংসা ও বৈষম্যের এই কাজগুলি কেবল বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকারকেই লঙ্ঘন করে না, বরং শান্তি, সহাবস্থান এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার নীতিগুলিকেও ক্ষুণ্ন করে। যা ভারত ও বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে সমর্থন করেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। চলমান নৃশংসতার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সংগঠিত করার জন্য এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকারের পক্ষে সওয়াল করার জন্য তাঁকে আটক করা হয়েছিল। তাঁর শান্তিপূর্ণ সক্রিয়তাকে মৌলিক অধিকার হিসাবে রক্ষা করা উচিত ছিল। তবুও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য তাঁকে অপরাধী করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তার বাকস্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকারের উপর সরাসরি আক্রমণ।


চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা সম্মানের সঙ্গে ভারত সরকারকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

১. বাংলাদেশে হিন্দুদের জন্য তাৎক্ষণিক সুরক্ষা: বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই হিন্দু ধর্মীয় স্থান, ব্যবসা এবং বাড়িগুলিকে আরও হামলা ও অপবিত্রতা থেকে রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হিংসায় অপরাধীদের জবাবদিহি করা অপরিহার্য।

২. চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এবং অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের মুক্তি: অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এবং অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি অপরিহার্য। তাঁদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করা উচিত। এবং শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করা ও তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করার অধিকার বজায় রাখা উচিত।

৩. হিন্দু মহিলাদের জন্য ন্যায়বিচার: আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে হিন্দু মহিলাদের উপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, অপহরণ এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের ঘটনার তদন্ত করার দাবি জানাচ্ছি। অপরাধীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং হিন্দু মহিলাদের সুরক্ষা ও তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আইনি সুরক্ষা দিতে হবে।

৪. কর্মসংস্থান ও সম্পত্তির অধিকারের সুরক্ষা: হিন্দু সরকারি কর্মচারীদের চাকরি থেকে বেআইনিভাবে অপসারণ এবং তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের হিন্দুদের অবশ্যই সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিপীড়ন থেকে মুক্ত রেখে মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করতে দিতে হবে।

৫. বাংলাদেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা: আমরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের আহ্বান জানাই। বিশেষ করে ধর্মীয় নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ব্যক্তি ও সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলির লক্ষ্য হওয়া উচিত বাংলাদেশ সরকারকে এই নৃশংসতায় জড়িত থাকার অবসান ঘটাতে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার জন্য চাপ দেওয়া।

৬. জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ: আমরা ভারত সরকারকে এই বিষয়টি জাতিসংঘ, মানবাধিকার কাউন্সিল এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক ফোরামের মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই। হিন্দুদের উপর নিপীড়নের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করতে এবং তাঁদের বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের উপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ এবং হিন্দু সম্প্রদায় এমন পরিস্থিতিতে ভুগছে, যা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা মনে করিয়ে দেয়।

এই বিষয়টি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উত্থাপন করা এবং বাংলাদেশে হিন্দুদের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য কঠোর ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া ভারত সরকারের একটি নৈতিক ও কূটনৈতিক দায়িত্ব।

আমরা বিশ্বাস করি যে, আপনার নেতৃত্বে ভারত বিদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য আশা ও ন্যায়বিচারের বাতিঘর হিসাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি যে এই বিষয়টিকে তার প্রাপ্য জরুরি মনোযোগ দেওয়া হবে এবং বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।