আপাতত ভারত হাসিনাকে কিছু দিন সময় দিতে চায়, জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর

দিল্লিতে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে আপাতত কিছু দিন সময় দিয়েছে ভারত। দিল্লির সর্বদল বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সব দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। বৈঠকে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজেজুরাও। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ওই বৈঠকে জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, হাসিনা এখন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। তাই তাঁকে ধাতস্থ হতে সময় দিয়েছে ভারত। এ ছাড়া, বাংলাদেশে প্রবাসী ভারতীয় নাগরিকদের পরিস্থিতি নিয়েও ওই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে নয়াদিল্লি। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা দেখা হচ্ছে।

 
সূত্রের খবর, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের কী অবস্থান, সর্বদল বৈঠকে উপস্থিত সকল সাংসদকে তা জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, আপাতত ভারত হাসিনাকে কিছু দিন সময় দিতে চায়। তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, তা তিনি ভারত সরকারকে জানাবেন। সেই ভাবনাচিন্তার জন্য সময় নিচ্ছেন। হাসিনার পরিকল্পনা জানার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে নয়াদিল্লি।
 

বাংলাদেশে ভারতীয়দের পরিস্থিতির দিকেও নজর রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার, সর্বদল বৈঠকে জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। এখনই জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয়দের সরিয়ে আনা হচ্ছে না। তবে প্রয়োজনে যে কোনও সময়ে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। ভারত প্রস্তুত আছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পরিস্থিতি তেমন গুরুতর নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। সর্বদল বৈঠকে সাংসদদের জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘‘যে পরিস্থিতি বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে, তার দিকে আমরা নজর রাখছি। সঠিক সময় এলে ভারত সরকার সঠিক পদক্ষেপ করবে।’’

হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের ক্ষমতা এখন সেনাবাহিনীর হাতে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ়-জ়ামান দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। সেনার নেতৃত্বে সেখানে তদারকি সরকার গঠিত হবে। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে প্রবাসী ভারতীয়দের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই কেন্দ্রের লক্ষ্য, জানিয়েছেন জয়শঙ্কর।


বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে সোমবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে আয়োজিত ওই বৈঠকেও হাজির ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রীরা। ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রিন্সিপাল সচিব পিকে মিশ্র, ‘র’-এর প্রধান রবি সিন্‌হা এবং গোয়েন্দা বিভাগ (আইবি)-এর ডিরেক্টর তপন ডেকা।

সোমবার বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে গাজ়িয়াবাদের হিন্ডন এয়ারবেসে নামেন হাসিনা। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সূত্রের খবর, এয়ারবেসেই রাত কাটিয়েছেন হাসিনা। তাঁকে যে বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেটি মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশে উড়ে গিয়েছে বলে জানায় সংবাদ সংস্থা এএনআই। মনে করা হচ্ছে, বিমানটি বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছে। সূত্রের খবর, হাসিনা লন্ডনে যেতে চান, কিন্তু ব্রিটেন থেকে এখনও মেলেনি সবুজ সঙ্কেত। অন্য কোনও দেশে তিনি যাবেন কি না, সেই ভাবনাচিন্তা চলছে। আপাতত তার জন্যই ভারত তাঁকে সময় দিয়েছে।