অজিতকৃষ্ণ দে
উত্তর আমেরিকা মানেই কানাডা৷ তিন কোটির কাছাকাছি মানুষের বসবাস৷ অক্টোবর থেকে উইন্টার সিজন মানে শীতকাল৷ নভেম্বর মাসে তাপমাত্রা -১২ ডিগ্রী৷ মাঝে মাঝে স্নো পড়ছে৷ এসময় কোথাও যাওয়া মানে বিড়ম্বনা৷ আমাদের উদ্দেশ্য ফ্লাওয়ার পট আইল্যান্ড ঘুরেঘুরে দেখব৷ আগের দিন মিসিসাগা থেকে গাড়িতে রওনা দিয়ে রাত্রিবাস করলাম একটা হোটেল৷ পরের দিন প্রাতঃরাশ সেরে টোবার মুরির পথে গাড়ি সামনের দিকে এগুতে লাগলাম৷ চারিদিকে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য, আনন্দে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি৷ গিয়ে সেখানে কী শোভা দেখব, মনের মধ্যে সেই চিন্তাই বারবার মনকে খোঁচা দিয়ে যাচ্ছে৷ সবুজে একেবারে মুড়ে থাকা পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ব্রুস পেনিনসুলার ‘টোবারমোরি’ নামের জায়গাটা খপ করে মনকে বেঁধে ফেলেছে আমাদের৷ কিন্ত্ত আমাদের গন্তব্য ছোট্ট একটা দ্বীপ৷
আমরা টোবার মোরি পৌঁছে নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি পার্কিং করে ফেরি ছাড়ার জায়গায় গেলাম৷ অন লাইনে ফেরি বুক করা ছিল৷ আমাদের ফেরির নাম্বার মিলিয়ে আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম৷ টিকিটের নাম্বার মিলিয়ে আমরা ফেরিতে উঠে পড়লাম৷ চারিদিকে জল আর জল৷ আমরা জর্জনিয়া সমুদ্রের জলরাশির ওপর দিয়ে যাচ্ছি৷ এক একটা দ্বীপ পেরিয়ে৷ চারিদিকে সামুদ্রিক মুক্ত বাতাস উতপভোগ করছি৷ প্রত্যেক যাত্রির হাতে মোবাইল ফোন আর ক্যামেরা৷ আমরা গা ভাসিয়ে দিয়েছি সমুদ্রের আবহাওয়ার ভিতরে৷ এ এক অপার স্বর্গিয় আনন্দ৷ মন চলো অজানা পথে৷ বারে বারে এই কথাটাই মনে পড়ছে৷ ফেরিটা আমাদের নামিয়ে দিয়ে, আবার আমাদের শহরে নিয়ে যাবে৷ এই দ্বীপটার নাম ‘ফ্লাওয়ার পট’ বা ফুলদানি দ্বীপ৷ বছরের পর বছর ধরে বাতাস বৃষ্টি আর ঢেউ মিলে পাহাড়ের খাঁজ থেকে মাটি, পাথর ভাসিয়ে এনে ছিটকে পরা চূণাপাথরের কাছে গচ্ছিত রেখে রেখে করেছে সামুদ্রিক এক স্তুপ৷
সমুদ্রের বুকে পাথরের এই কাঠামোটা দেখতে একেবারেই ফুলদানির মতো৷ আর সেই থেকে এর নাম ‘ফ্লাওয়ার পট’আইল্যান্ড৷
যেহেতু জুন মাসে কানাডায় ছিলাম, সেই সময়ে কানাডার ব্রুস পেনিনসুলায় (উপদ্বীপে) কানাডার ফ্লাওয়ার পট (flower pot Island) আইল্যান্ড দেখে এলাম৷ এখানে না এলে এত সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যেতনা৷ ফ্লাওয়ার পট আইল্যান্ড দেখতে হলে কানাডার টোবার মরি এসে থাকতে হবে৷ জর্জিয়ান সমুদ্রের ওপর ক্রুজে চেপে ঘুরতে হবে চারদিক৷ চারদিকে ছোট ছোট দ্বীপ বা আইল্যান্ড৷ সমুদ্রে স্পিড বোট প্রাইভেটে ভাড়া করে জর্জিয়ান সমুদ্রের ওপর এনজয় করা যেতে পারে৷
অনলাইনে টোবার মরিতে থাকবার জন্য অর্গ্রীম বুকিং আবশ্যক৷ ক্রুজের ক্ষেত্রেও অর্গ্রীম বুকিং করা খুব প্রয়োজন৷ গাড়ি পার্কিং করতে গেলেও আগে বুকিং না থাকলে পার্কিং পাওয়া খুবই কষ্টকর৷ কেননা, আমরা আগে থেকে পার্কিং অনুমতি না নিয়ে অসুবিধেতে পড়েছিলুম৷
ক্রুজে চেপে ঘুরতে এবং ফ্লাওয়ার পট আইল্যান্ড যেতে কী আনন্দ ,তা বলে বোঝান যাবে না৷ অনেক গুলো লাইট হাউস চোখে পড়বে৷ অতন্দ্রী পাহাবায় লাইট হাউস সারা রাত জেগে থাকে৷ ফ্লাওয়ার পট আইল্যান্ড কানাডার অন্টারিও প্রদেশের জর্জিয়ান উপসাগরের একটি দ্বীপ এবং ফ্যাথম ফাইভ ন্যাশানাল মেরিন পার্কের একটি অংশ৷ দ্বীপটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে ২.১ কি.মি (১.৩) মাইল এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে ১.৫ কি.মি (০.৯৩) মাইল বিস্তৃত এবং এর মোট এলাকা ২ বর্গকিলো মিটার৷(৪৯০ একর) দ্বীপের নামটি এর পূর্ব তীরে দুটি শিলা স্তম্ভ থেকে এসেছে৷ যা দেখতে ফুলের পাত্রের মতো৷ একটি তৃতীয় ফুলপাতা একবার দাঁড়িয়েছিল৷ কিন্ত্ত ১৯০৩ সালে গড়িয়ে পড়েছিল৷ ফ্লাওয়ার পট আইল্যান্ড একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র৷ এখানে ক্যাম্পিং সুবিধা এবং হাইকিং ট্রেইল রয়েছে৷ ব্রুস উপদ্বীপের টোবারমরি থেকে ক্রুজ এবং অনমনীয় স্পিড বোট দ্বীপটি অ্যাকসেসযোগ্য৷
রাস্তায় প্রচুর বিভিন্ন জাতের সাপ দেখতে পাওয়া৷ সরকার থেকে জায়গাটায় প্রচুর সিকিউরুটি আছে৷ অগ্রিম বুকিং ছাড়া ক্রুজে ভ্রমণ নিষিদ্ধ৷ অনলাইনে বুকিং করা যায়৷ অনেকেই টোবারমোরিতে উইকেন্ডে বেড়াতে আসে৷ বেড়াতে আসা মানে ক্যাম্পিং এবং ফ্লাওয়ার পট আইল্যান্ড দেখে পরম শান্তি আর ক্রুজে চেপে দ্বীপের পর দ্বীপ দেখা৷ সে এক মনোরম পরিবেশ৷ অনেকে এক একটা দ্বীপে নেমে বন ভোজন ও সেরে নেয়৷
ভাগ্য ভাল থাকলে, ভল্লুক দেখতে পাওয়া যায়৷ এ জায়গাটা উইক এ্যম্ডে বেরুবার উৎকৃষ্ট সময়৷ কাছেই গ্রোটো, লং ডাম্প, সবিল বীচ পড়ে৷ সময় কাটাবার ভাল জায়গা এবং পিকনিক স্পট, সান সেটের দৃশ্য অতুলনীয়৷