অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘুম ভেঙেছে। দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী ও বিদেশি নাগরিকদের সমাবেশ হওয়ার পর করোনাভাইরাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের মাধ্যমেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। নিজামুদ্দিন মারকাজ এলাকায় কঠোরভাবে লকডাউন বলবৎ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এখান থেকে বিভিন্ন রাজ্যে নিজের শহর বা গ্রামে ফেরত যাওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তাদের অবিলম্বে পরীক্ষা, কোয়ারেন্টাইন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছে।
দেশের কুড়িটি রাজ্যকে কেন্দ্র এই নির্দেশ পাঠিয়েছে। কিন্তু রাজ্যসরকারগুলি প্রশ্ন তুলেছে দিল্লি বা কেন্দ্রীয় সরকার তার বুকের ওপরে এমন লকডাউন অমান্য করে জমায়েতকারীদের বিরুদ্ধে সময়ে কেন ব্যবস্থা নিল না, বা তাদের চিকিৎসা ও পরীক্ষার ব্যবস্থা করল না? এখন সারা দেশে বিপদ ছড়িয়ে পড়ার পর ছেড়ে দিয়ে তেড়ে ধরার রাজনীতি শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার বলে তাদের অভিযোগ।
নিজামুদ্দিন মারকাজে জমায়েত পরবর্তী অন্ধ্রপ্রদেশে এক দিনেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ থেকে ৮৭’তে পৌঁছেছে। নতুন সংক্রামিত ৪৩ জনই তাবলিঘি জামাতে যোগ দিয়েছিল। দিল্লিতেই নতুন করে ১৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস মিলেছে। তামিলনাড়ুতে ৫০ এবং তেলেঙ্গানায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিজামুদ্দিনের পশ্চিম অংশে কঠোরভাবে লকডাউন ও ঘিরে রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সরকারি নির্দেশ অমান্য করে যে সকল বিদেশি পর্যটক ও সংস্থা নিজামুদ্দিনের জামাতে অংশ নিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ পাঠিয়েছে। তাবলিঘি জামাতে অংশ নেওয়া হাজার ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাস মিলেছে। এরা বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ার ফলে সেখানেও করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে।
ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌড়া দেশের রাজ্যগুলির মুখ্যসচিবদের এবং পুলিশ প্রধানদের তাবলিঘি জামাতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের পরীক্ষা ও কোয়রেন্টাইনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ পাঠিয়েছেন। একাজ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, না হলে করোনা সংক্রমণ আগের থেকেও অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।
ক্যাবিনেট সচিব তাবলিঘি জামাত জমায়েতীদের চিহ্নিত করা ছাড়াও এক সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা রূপায়ণের নির্দেশ দিয়েছেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। অধিকাধিক সংখ্যায় নগদ বন্টন করতে হবে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রেখে।
এছাড়া, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং ব্যবস্থা বজায় রেখেই খাদ্যবস্তু বন্টন ও সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নির্মাতা সংস্থাদের কাজ অব্যাহত রাখা এবং সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষে।
ইতিমধ্যে এক দিনে নতুন করে প্রায় চারশো জনের দেহে করোনাভাইরাস মিলেছে বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পক্ষে জানানো হয়েছে। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৪৯ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের।
স্বাস্থ্য দফতরের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল জানিয়েছেন, নিজামুদ্দিন মারকাজে জমায়েতের ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে। এদিন নিজামুদ্দিনে জামাতে যোগদানকারী ৪৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস মিলেছে। এদের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম ও পুদুচেরির বাসিন্দা রয়েছেন। দিল্লি, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গর মানুষও রয়েছেন।
এদিকে তাবলিঘি জামাতের প্রধান মৌলবী করোনা সংক্রমণের সতর্কতাকে তোয়াক্কা না করেই সেখানে জমায়েতের নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁকে পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না। মৌলানা সাদ এবং তার ছয় সঙ্গীর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ জানিয়েছে বিগত তিন দিনে নিজামুদ্দিন মারকাজ থেকে অন্তত দু’হাজার এমন করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার সতর্কতা তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে অনেক বিদেশি পর্যটকও রয়েছে। ফলে এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পুলিশ নিজামুদ্দিন জামাতের সঙ্গে যুক্ত যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে তারা হলেন, মৌলানা সাদ, জিশান, মুফতি শেহজাদ, এম সইফি, ইউনুস, মহম্মদ সলমন এবং মহম্মদ আসরফ। এদের বিরুদ্ধে সংক্রামক রোগ ছড়ানো আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে দিল্লির পুলিশ কমিশনার এস এন শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে এরা সাতজনই মূলত জমায়েত ও সেখানে অবস্থানের জন্য পরিযায়ী শ্রমিক ও বিদেশিদের উৎসাহিত করে সরকারের লকডাউন ঘোষণার পরও। দিল্লি পুলিশ জমায়েতে মৌলানাদের বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপিং সংগ্রহ করছে। সেখানে নাকি বক্তারা জমায়েতকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, মৃত্যু ভয়ে কোথায় যাবে। তোমাদের রক্ষা যদি দেবদূতরা করতে না পারেন তবে কে তোমাদের রক্ষা করবে? মৌলানাদের সঙ্গে নাকি দেবদূতরা রয়েছেন এবং তারা যদি রক্ষা করতে না পারেন তবে কোন ডাক্তার তাদের রক্ষা করবে বলে অভয়দান করেন।
এমন বিপদের সময়ে নাকি আরও বেশি করে জমায়েত করা জরুরি। তাই সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের তোয়াক্কা না করে আরও বেশি সংখ্যায় জমায়েতের পরামর্শ দেন নাকি বক্তারা। এটা নাকি সরকারের ষড়যন্ত্র মুসলিমদের একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় করার। জামাতে অংশগ্রহণকারী ১২৮ জনের দেহেই করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
সরকারি নির্দেশ অমান্য করায় নিজামুদ্দিন মারকাজের মৌলবী ও সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করল পুলিশ।