ফেসবুক অফ ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে এফআইআর

ফেসবুক (Photo: iStock)

ব্যবসায়িক স্বার্থে ঘৃণার সঙ্গে আপস করছে ফেসবুক, এমনই অভিযোগ এল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। ফেসবুকের ভারতীয় শাখার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর আঁখি দাসের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য এবং ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে মামলা করল ছত্তিসগড় পুলিশ। সেই সঙ্গে ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জুকেরবার্গের কাছেও চিঠি পাঠাল কংগ্রেস। আবেশ তেওয়ারি নামে এক সাংবাদিকের অভিযোগের ভিত্তিতে আঁখি দাসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে, আঁখিও তাকে অনলাইনে ও অফলাইনে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও দিল্লি পুলিশের সাইবার অপরাধ শাখার ৮ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিলেন। সেই এফআইআর-এ নাম ছিল আবেশের। কংগ্রেসের পক্ষে কে সি বেনুগোপাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ফেসবুকের ভারতীয় শাখা বিজেপি’র প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে।

সংস্থার প্রধান হিসেবে মার্ক জুকেরবার্গের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে, তিনি যেন এর তদন্ত করেন। কারণ, এ খবর প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকার সংবাদপত্রে। শুক্রবার মার্কিন সংবাদপত্র ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ জানায়, ভারতের শাসকদল বিজেপি’কে ভয় পায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তাই বিজেপি নেতাদের হিংসার উস্কানি এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে ফেসবুক কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। ফেসবুকের যে নীতি রয়েছে, সেই নীতি ফেসবুকই ভাঙছে।


এই খবর সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীদের মূল নিশানায় রয়েছে আঁখি। এদিকে জানা গিয়েছে, আঁখির বোন রশ্মি দাস দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এবিভিপি’র সভানেত্রী ছিলেন। ফলে, বিজেপি’র প্রতি ফেসবুক ইন্ডিয়ার পাবলিসিটি শাখার ডিরেক্টরের যে দুর্বলতা তা নিয়ে সরগরম রাজনৈতিক মহলে।

এর আগে এই প্রকাশিত প্রতিবেদনকে সামনে রেখে ফেসবুকের ভারতীয় শাখার পরিচালকদের জবাবদিহির জন্য কংগ্রেস সাংসদ তথা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান শশী থারুর তলব করার কথা জানিয়েছিলেন। শশী এই নিয়ে সক্রিয় হতেই মাঠে নামে বিজেপি’ও।

শশীর এই উদ্যোগকে ভেস্তে দিতে বিজেপি সাংসদ তথা কমিটির সদস্য নিশিকান্ত দুবে টুইটারে জানান, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করেই চেয়ারম্যান এককভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি যদি এককভাবে এরকম কোনও সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আমরাও লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লার কাছে লিখিত অভিযোগ জানাব। রাহুল গান্ধির রাজনৈতিক এজেন্ডা পূরণের কাজ যাতে শশী থারুর না করেন, সেকথাও বলেছেন নিশিকান্ত দুবে।

তবে, শশী থারুরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। মহুয়া নিজেও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য। এদিন টুইটে এই তৃণমূল সাংসদ লেখেন, ‘ফেসবুকের স্বার্থ রক্ষাতে বিজেপি যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছে, তাতে খুবই আশ্চর্য হচ্ছি।’ এরপর শশী থারুর-এর ট্যুইটকে ধন্যবাদ জানিয়ে মহুয়া আরও লেখেন, ‘আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন। আপনার এই উদ্যোগকে কটাক্ষ করে নিশিকান্ত দুবে যে মন্তব্য করেছেন, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জনস্বার্থের এমন বিষয়ে নজর দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে কোনও সাংসদ মনে করছেন! সত্যি অসাধারণ।’

উল্লেখ্য তেলেঙ্গানার বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিংহ একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানুষদের গুলি করে মারার সওয়াল করেছিলেন এই ফেসবুকের মাধ্যমে। ফেসবুকের ভারতীয় শাখার কয়েকজন কর্মী এরপরে ‘বিপজ্জনক’ ব্যক্তি এবং সংস্থা নীতির ভিত্তিতে রাজাকে নিষেধাজ্ঞার জন্য সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু ফেসবুকের ভারতীয় শাখার পাবলিসিটি ডিরেক্টর আঁখি দাস সেই সময় জানিয়েছিলেন, বিজেপি নেতাদের আইনভঙ্গকারী হিসেবে শাস্তি দিলে ভারতে ফেসবুকের ব্যবসায়িক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যদিও রাজা এই পোস্টের দায় অস্বীকার করেন এবং টুইট করে বলেন, আমার নামে অনেকগুলো ফেসবুক পেজ রয়েছে। কিন্তু আমার নিজের কোনও অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ নেই। ওই পোস্টের দায় আমার নয়। আমেরিকার সংবাদপত্রে ফেসবুকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরেই সুর চড়িয়েছেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ রাহুল গান্ধি। ফেসবুককে সামনে রেখে বিজেপি নির্বাচনী প্রচার এবং বিদ্বেষমূলক মন্তব্যকে হাতিয়ার করে সমাজে বিভেদ সৃষ্টি কার যে খেলা শুরু করেছে তার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন কংগ্রেসের এই শীর্ষ নেতা।