• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

কেন্দ্রের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন কৃষক নেতারা

১৪ ডিসেম্বর দেশের কৃষি আইনের বিরোধিতায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ সভা হবে। দিল্লি-জয়পুর হাইওয়ে ১২ ডিসেম্বর প্রতিবাদের অংশ হিসেবে অবরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কৃষকরা।

কৃষক আন্দোলন (Photo: Twitter/@RakeshTikaitBKU)

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কেন্দ্রীয় কৃষি আইন নিয়ে অনমনীয় মনােভাব দেখিয়েছিলেন। এরপরই কৃষক নেতারা বুধবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে অবস্থান ঠিক করে নেয়। কেন্দ্রের সংশােধনী প্রস্তাব নিয়ে সিংঘু সীমানায় কৃষক সংগঠনগুলির বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কেন্দ্রের দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী কৃষি আইন সংশােধন নয়, কেন্দ্রের নতুন কৃষি আইনগুলি বাতিল করতে হবে। যদি কেন্দ্ৰ দাবি মেনে না নেয়, তাহলে এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। 

১৪ ডিসেম্বর দেশের কৃষি আইনের বিরােধিতায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ সভা হবে। দিল্লি-জয়পুর হাইওয়ে ১২ ডিসেম্বর প্রতিবাদের অংশ হিসেবে অবরােধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কৃষকরা। 

পঞ্চম দফার বৈঠকে কেন্দ্রের কাছে কৃষক প্রতিনিধিরা আইন বাতিল হবে কিনা তা জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী দুটি সংস্কারের পক্ষে সায় দিলেও আইন বাতিল নিয়ে কোনও কথা দিতে পারেননি। সেকারণে কৃষকদের আলােচনা আর এগােয়নি। তারা বৈঠকে নিশ্চুপ থাকে। 

বুধবার ষষ্ঠ দফার আলােচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই মঙ্গলবার অমিত শাহ নিজে উদ্যোগ নিয়ে কৃষক নেতাদের বৈঠকে ডাকেন। সেই বৈঠকে অনেক কৃষক প্রতিনিধি অংশ নিতে পারেননি। তা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তবে কি অমিত শাহ কৃষকদের মধ্যে ঐক্য ভাঙতে চাইছেন? এ নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়। 

যদিও অমিত শাহ বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন কৃষি আইন প্রত্যাহার করার কোনও প্রশ্নই নেই। এরপরই কৃষক নেতারা নিজেদের মধ্যে আলােচনা করে ঠিক করে, অনেক হয়েছে আর নয়। ফলে আর বৈঠক নয়, কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আপাতত দেশজুড়ে আন্দোলনকেই পাখির চোখ করছেন কৃষক নেতারা। 

এদিকে, কৃষক বিদ্রোহ অব্যাহত রয়েছে ১৪ দিন ধরে। কৃষি আইন সংশােধন করার প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র। লিখিত আকারে বুধবার সেই প্রস্তাব কৃষকদের কাছে পাঠানাে হয়েছে বলে খবর। কৃষকদের ক্ষোভ মেটাতে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তােমর।

তাতে রয়েছে ১/ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাতিল করা হবে না। কেন্দ্র এই নিয়ম মেনে চাষিদের কাছ থেকে ফসল কিনবে। ২/ কৃষিমণ্ডি আরও উন্নত ও মজবুত করা হবে। ৩/ চাষিদের কাছ থেকে ফসল কিনতে হবে ব্যবসায়ীদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে। ৪/ চুক্তিভিত্তিক চাষের ক্ষেত্রে সমস্যা হলে সাধারণ আদালতে যেতে পারবেন চাষিরা। ৫/ ফসলের আগাছা জ্বালানাের সম্পর্কিত যে আইন রয়েছে তাতে পরিবর্তনের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। 

কৃষক বিদ্রোহে উত্তাল দেশ। এর আঁচ ছড়িয়েছে গােটা দেশজুড়ে। ব্যাকফুটে রয়েছে কেন্দ্র। বুধবার বিকেলে কৃষকদের স্বার্থে রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করতে গেল বিরােধীরা। এখানেও বিরােধী শিবিরে ফাটল স্পষ্ট। বিকেলে রাষ্ট্রপতি ভবনে হাজির হন কংগ্রেস ও বাম দলের প্রতিনিধিরা। এই দলে ছিলেন কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধি ও সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। 

রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে তাঁরা একটি স্মারকলিপি জমা দেন। এরপর সীতারাম ইয়েচুরি সংবাদমাধ্যমের মুখােমুখি হয়ে বলেন, অগণতান্ত্রিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষি আইন এনেছে। আমরা তা বাতিলের দাবিতে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয়েছি। রাহুল গান্ধি বলেন, গত ১৩ দিন ধরে প্রচণ্ড শীতে কৃষকরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছেন। যে কৃষকরা দেশকে তৈরি করেছেন, তাদের সঙ্গে কোনও আলােচনা ছাড়াই কৃষি আইন পাস করা হল। বিরােধী দলগুলিকেও অন্ধকারে রাখা হল। এই কৃষি আইন কৃষকদের অপমান করেছে। 

উল্লেখ্য, বাম-কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। প্রতিবাদের নেতৃত্বে কংগ্রেস থাকায় তৃণমূল এড়িয়ে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি ভবনে ২৪ টি রাজনৈতিক দলের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করােনা আবহের কারণে পাঁচটি দলের প্রতিনিধিদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।