নিজেদের দীর্ঘদিনের বিভিন্ন দাবিদাওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাব থেকে কয়েক হাজার কৃষক দিল্লির উদ্দেশে রওনা হন। আন্দোলনকারী সেই কৃষকদের পাঞ্জাব-হরিয়ানার শম্ভু সীমান্তেই আটকে দেয় হরিয়ানা পুলিশ। দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরেই দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সেই সময় থেকে কৃষকরা সীমানায় বসেই তাঁদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষক আন্দোলনে যোগ দিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তরুণ কৃষক শুভকরণ সিংহ। তাঁর স্মরণে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রবিবার শুভকরণের গ্রামে যান সরবন এবং অন্যরা। সেখানেই বক্তব্য রাখার সময় তিনি কৃষক আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। পান্ধের ও দাল্লেওয়াল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন , ট্রাক্টরে দিল্লি যেতে বাধা দিলে ট্রেন চেপে রাজধানী যাবেন কৃষকরা। পান্ধের বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই ট্র্যাক্টর-ট্রলি ছাড়া সরকার কৃষকদের কীভাবে আটকায়।’ তারপরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘শম্ভু এবং খানৌরিতে আন্দোলন যেমন চলছিল, তেমনই চলবে। আমাদের আন্দোলন আরও তীব্রতর হবে।’’
আগামী ১০ মার্চ বেলা ১২টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত ‘রেল রোকো’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত পাঞ্জাব, হরিয়ানার অন্তত ২০০টি কৃষক সংগঠন আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে বিক্ষোভ চালাচ্ছে কৃষক সংগঠনগুলি। তাঁদের রাজধানী দিল্লিতে ঢুকতে সব রকমভাবে বাধা দেয় হরিয়ানা পুলিশ। আন্দোলন ঠেকাতে কার্যত দুর্গে পরিণত করা হয় দিল্লি সীমানাকে। লাঠি চার্জ, টিয়ার গ্যাস দিয়ে কৃষকদের আটকানোর চেষ্টা করা হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে আম্বালা, কুরুক্ষেত্র, কৈথাল, জিন্দ, হিসার, ফতেহাবাদ ও সিরসা জেলায় বন্ধ করে দেওয়া হয় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা। ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দিল্লি চলো অভিযান স্থগিত করায় গত রবিবার থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং বাল্ক এসএমএস-এর নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে তুলে নেওয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে হরিয়ানা পুলিশের হুঁশিয়ারি, বিক্ষোভ চলাকালীন হিংসাত্মক কাজ করলে পাসপোর্ট, ভিসা বাতিল হবে কৃষকদের।
কয়েক দিনের মধ্যে কৃষকরা বার বার সীমানা পেরিয়ে রাজধানীতে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ২০২০ সালের কৃষক আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে আগে থেকেই হরিয়ানা সীমানাগুলিতে যে আঁটসাঁট নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়, তা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেও বিফল হন কৃষকেরা। কৃষকদের আটকাতে পুলিশ একাধিক পদক্ষেপ করেছে। অন্য দিকে, সমস্যা মেটাতে মোদি সরকার ইতিমধ্যে কয়েকবার কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও সমাধানসূত্র বার হয়নি। সরকারের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন কৃষকেরা। কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচি ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত ছিল। সেই কর্মসূচি আবারও শুরুর ঘোষণা করলেন কৃষক নেতারা । দেশব্যাপী ‘রেল রোকো’ কর্মসূচিরও ডাক দিয়েছেন তাঁরা ।