ধর্মীয় অনুষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা, যোগীরাজ্যে পদপিষ্ট হয়ে মৃত শতাধিক 

হাথরস , ২ জুলাই – যোগীরাজ্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু শতাধিক মানুষের। উত্তরপ্রদেশের হাথরসে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বহু মহিলা ও শিশুর।  শেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে ১০৭ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ।  মঙ্গলবার হাথরস জেলার ফুলরাই গ্রামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষ হতেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। পদপিষ্ট হন অসংখ্য মানুষ। আহত হয়েছেন আরও অনেকে ৷ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের ৷ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন । তিনি আধিকারিকদের দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে এডিজি আগ্রা ও কমিশনার আলিগড়ের একটি দল গঠন করা হয়েছে ।

 মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ প্রাথমিক পর্যায়ে খবর পেয়েই তিনি লেখেন , ‘ এইমাত্র জানতে পেরেছি যে পদদলিত হওয়ার একটি দুঃখজনক ঘটনায়, কমপক্ষে ২৭ জন ভক্ত ইউপির হাথরসে মারা গিয়েছে । শোকাহত স্বজনদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা ৷”

জানা গিয়েছে, রতিভানপুরের ফুলরাই গ্রামে ভোলে বাবার সৎসঙ্গ চলছিল। এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে ব্যাপক ভিড় হয়।  সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার পর সকলে একসঙ্গে বের হওয়ার চেষ্টা করতেই  পদপিষ্ট  হওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা মারাত্মকভাবে পিষ্ট হন।  হৈ চৈ, ছুটিছুটি পড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়। আশঙ্কা করা হচ্ছে , পদপিষ্ট হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনা আরও বাড়তে পারে। দুর্ঘটনার পর সিকান্দরা হাসপাতালে মৃতদেহের মিছিল। এদিকে আহতদেরও ইটা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়।


দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ওই  গ্রামের উদ্দেশে রওনা হন রাজ্যের দুই মন্ত্রী লক্ষ্মীনারায়ণ চৌধরী এবং সন্দীপ সিংহ। রাজ্য পুলিশের ডিজিও ঘটনাস্থলে পৌঁছন।স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিকন্দরা হাসপাতালে আহতদের নিয়ে গেলেও সেখানে চিকিৎসা করার মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসক ছিল না। হাসপাতালে এক জন চিকিৎসক ছিলেন। চিকিৎসার গাফিলতিরও অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, ঘটনার পর দেড় ঘণ্টা কেটে গেলেও প্রশাসনের কোনও আধিকারিক আসেননি। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা।

এই ঘটনায় ইটা-র সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ রাজেশ কুমার সিং জানান, ফুলরাই গ্রামে একটি সৎসঙ্গের অনুষ্ঠানে ঘটনাটি ঘটেছে । ইটা হাসপাতালে ২৭ টি মৃতদেহ পৌঁছয়, যার মধ্যে  ২৩  জন মহিলা,  ৩ জন শিশু ও একজন পুরুষ রয়েছেন ৷ ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ৷ সোশাল মিডিয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, “উত্তরপ্রদেশের হাথরস জেলায় যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক । এই দুর্ঘটনায় যারা তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা । সেই সঙ্গে সকল আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি । রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে ।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ছিল না। চিকিৎসার গাফিলতিরও অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। ঘটনার পর পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা।

 ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এই হাথরসই গোটা দেশে আলোড়ন ফেলেছিল। বুলগড়ি গ্রামে মায়ের সঙ্গে মাঠে কাজ করছিলেন এক দলিত তরুণী। মায়ের থেকে ১০০ মিটার দূরেই ক্ষেতে কাজ করছিলেন তিনি। কন্যার চিৎকারের আওয়াজ শুনে তরুণীর মা ছুটে যান। সেখানে যেতেই দেখেন তাঁর কন্যা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। জিভ কেটে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ না নেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। তরুণীকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে জেএনএমসি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ১৪ দিন ভর্তি ছিলেন। সেখানেই তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর তরুণীর মৃত্যু হয়। পরিবারকে না জানিয়ে রাতারাতি ওই তরুণীর দেহ সৎকার করারও অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই উত্তাল হয় গোটা দেশ।